প্রকাশিত: ০৭ মার্চ, ২০২৩ ০১:৩৬:০৩
আনোয়ার হোসেন শামীম,জেলা প্রতিনিধি: ভাঙা নড়বড়ে ১২ হাত দোচালা টিনের ঘর। দরজা, জানালা নেই। বেঞ্চ আছে মাত্র কয়েকটি সেগুলোও নড়বড়ে। টিন সেটের ঘরে চারদিকে গাছ। সামন্য বাতাস বয়লেই যে কোন মুহুর্তে ঘরের উপর ভেঙ্গে পড়বে। ঘরটির অবস্থানও রাস্তা ঘেঁষে। আর এই ১২ হাত ঘরেই তিন রুমে চলছে দু’শত শিক্ষার্থীর পাঠদান।
এই চিত্র গাইবান্ধার ফুলছড়ির সদরের দক্ষিন বুড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলটি ভবন নির্মানে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এলজিইডির অধীনে অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ন জনগোষ্ঠির সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী) প্রকল্পে মাধ্যমে কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কাজটি পায় ঢাকার সোনার গায়ের শামীম আহম্মেদ মন্ডল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঐ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ঠিকদার কাদের ভূইয়া আকাশের সাথে কাজ সম্পাদনের চুক্তি করেন। স্কুলটির ভবনের কাজ কাজ শুরু হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে। আর ভবনটি কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরে ১৯ জুন। ১৫ মাসেও স্কুলের ভবনটির কাজ এখনও ৩০ ভাগ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার কারন দেখিয়ে দেড় মাস থেকে ভবনের কাজ করে বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদার। কবে ভবনের কাজ শেষ হবে তা নিয়ে শংঙ্কিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা শহর থেকে ফুলছড়ির সদরে একমাত্র প্রবেশ দ্বারের পার্শ্বেই দক্ষিন বুড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। রাস্তার পশ্চিম পাশ ঘেঁষে একটি দোচালা টিনের ঘর। রাস্তার উপরে শিক্ষার্থীদের হইচই। দোচালা ১২ হাতে টিনের ঘরটিতে তিনটি রুম। বসে পড়ার মত কোন পরিবেশ নেই। দেখে মনেই হবে না এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রুমের ভিতরে শিক্ষার্থীর উচ্চ স্বরের হইচই করছেন। এরই মধ্যই শিক্ষক রুমে ক্লাস নিচ্ছেন। ঘরের সামনে দাঁড়ানো জায়গা নেই রাস্তা ছাড়া। রাস্তার পূর্ব পার্শ্বেই নতুন ভবনের পিলার দাঁড়িয়ে আছে। ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। শিশু শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে পাশ্বেই প্রধান শিক্ষকের বাড়ির রুমের বারান্দায়।
পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুইটি আকতার বলেন, স্কুলের জায়গায় নতুন ভবন কাজ শুরু সময় থেকে এই টিন সেটের ঘরে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। ছোট একটু ঘরে তিনটি রুম। রুম গুলো চার হাত করে। দুই তিন বেঞ্চ বসে। স্যার ম্যাডাম ক্লাসে গেলে সবাই আমরা বেঞ্চে বসতে পাই না। অন্য রুম থেকে শব্দ আসে। পড়ার মনোযোগ হারিয়ে যায়। আরেক শিক্ষার্থী রিফা বলেন, স্যারেরা বলছিলো আগামী জুনের মধ্য কাজ শেষ হবে। কাজ শুরু অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনও মাটির নীচেই কাজ পড়ে আছে। রুম না থাকার কারনে আমাদের পড়াশুনা হচ্ছে না।
চতুর্থ শ্রেনীর সৈকত মিয়া বলেন, আগে যে ভাবে আছিলো, তখই ভালো ছিলো। নতুন ভবন করতে যেয়ে রুমের কারনে আমাদের পাঠদান সঠিকভাবে হচ্ছে না। একদিকে রুমের মধ্যই চিল্লাচিল্লি অন্য দিকে রাস্তার উপর দিয়ে সব সময় অটো,মোটরসাইকেল, ট্রাকটর যায়। শব্দে কারনে পড়াশুনা হচ্ছে না। স্কুলে এলেই অস্বস্তি অস্বিস্তি লাগে। অন্য শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, স্কুলে আসে মনে হয় মজলিশ খাবার আসছি। খালি হইহই। ছোট একনা ঘর । তাক আবার তিন ভাগ করছে। ঘরের উপরে গাছ। সারাদিন গাছের পাতা, পাগড়ি পড়ছে । স্কুলে আসতেই মনায় না। স্কুল আসে কি লাভ পড়ায় যদি মন না বসে। স্কুলটির সহাকরি শিক্ষক শ্রী মমতা রানী বলেন, নতুন ভবনের জন্য স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ভবনের কাজ অনেক আগে শুরু হলেই এখনও পিলার ছাড়া কিছুই হয়নি। ভবন না থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে চিন্তায় আছি। কয়েক হাত একটি ঘরের তিনটি রুম করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি। রুমের কারনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।
আরেক সহকারী শিক্ষক আব্দুস সোবাহান বলেন, এক বছরেরও বেশী সময় ধরে এই ছোট একটি টিন সেট রুমে ক্লাস নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দিতে পারছি না। জায়গা সংকটের কারনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না । স্কুলে আসার জন্য তাদের চাপও দেয়া যাচ্ছে না। এতো গুলো শিক্ষার্থীদের আমরা বসার জায়গায়ও দিতে পারছি। ক্লাসে ঢুকেও ভয় হয়। রাস্তার সাথেই টিন সেট ঘরে পাঠদান দিচ্ছি। রাস্তার দিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলাচল করছে। কখন যে কোন শিক্ষার্থী গাড়ির নিচে পড়ে দূর্ঘটনা ঘটায়। খুবই মানসিক চাপে আছি।
অবিভাবক লিপি রানী বলেন, স্কুলের ঘর নাই। ঘুলা বালু, ছোট তিনকোনা রুম। সেজন্য ছল পোলেরা স্কুল আসতে চায় না। মাস্টারার প্রতিদিন স্কুলে আসার জন্য ডাকপের যায়। ছোলপল গুলো স্কুলে আসে আনন্দ পায় না। স্কুলের সময় হলেই ছোল অন্য একজায় লুকে থাকে। ঘরের কাম করা বাদ দিয়ে ওমরা তাশরা শুরু করছে। আরেক অবিভাবক লাইজু বেগম বলেন, স্কুল ভাঙা চুড়ার কারনে বাচ্ছা স্কুলে আসতে চায় না। স্কুল থেকে যেয়ে প্রত্যকদিন শুধু বলে মা মাথা ধরছে। বাচ্ছাকে জোর করে আমরা স্কুলে পাঠাই।
স্কুলের সভাপতি শ্রী অনিল কুমার বর্মন বলেন, স্কুলটির ভবনের জন্য আমরা জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ১৫ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কাজটি একটি দৃশ্যমান হয়নি। এখানে ঠিকাদারের না ইঞ্জিয়ারের গাফিলাতি কিছু বুঝতে পারছি না। কাজটি আবার গত ২২ দিন থেকে বন্ধ করে রেখেছেন ঠিকাদার। এই বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহীকে বার বার অবগত করার পরও কোন সূরাহা পাচ্ছি না।
প্রধান শিক্ষক শামসুজোহা মিয়া প্রধান বলেন, স্কুলের ভবন হলে ক্লাস রুমের সংকট কাটবে। এ ভেবে আমরা স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়ে পার্শ্বেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও স্লিপের টাকা দিয়ে একটি ১২ হাত দোচালা টিনে ঘর করি। শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশুনা ক্ষতি না হয়। ভবন নির্মানের ঠিকাদার শুরু থেকেই ধীর গতিতে কাজ করতে থাকে। ঠিকাদার আবার বেশ কিছু দিন থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন গরমের সময় শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নীচেও পাঠদান করাতে পারছি। সামনে বর্ষা এলে কিভাবে পাঠদান দিব। সেই চিন্তায় মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থে আছি শিক্ষকরা। কাজটি দ্রুত সম্পূর্ন করার জন্য উপজেলা-জেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে বার বার ধরনা দিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। আর কবে নাগাত এই ভবনের কাজ শেষ হবে তারও কোন নিশ্চিয়তা পাচ্ছি না।
এবিষয়ে ঠিকাদার কাদের ভুইয়া আকাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘কাজের ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার বিষয়টি আমি এলজিইডির নির্বাহীকে বহুবার বলছি। ওনি ঠিক করে দেননি। আমি লজ করে কি কাজ করবো। এজন্য কাজটি করতে দেরি হচ্ছে। ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দিলেও আমি স্কুলের ভবনটির কাজ দ্রুত শুরু করব।’
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী মোঃ ছাবিউল ইসলাম বলেন,‘কাজটি দ্রুত সময়ে শেষ করার জন্য আমি ঠিকাদারকে বলছি। তার পরও বাজারে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেশী। এজন্য ঠিকাদার কাজটি দ্রুত করতে পারছে না। দেখি কাজটি যতদুর সমম্ভব দ্রুত শেষ করা যায়।’
প্রজন্মনিউজ২৪/উমায়ের
শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের
বান্দরবানে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে এক সৈনিক নিহত: আহত এক জেসিও
বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন সম্রাট
তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য ৫ কৃষককে পুরস্কার
ফুল ও সবজি বাগানে বদলে গেছে রৌমারী থানার দৃশ্যপট
ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরাপদ দেশে সরাতে হাইকোর্টে রিট
জাবিতে বৃক্ষ নিধন করে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি