কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত মেলা জমে উঠেছে

প্রকাশিত: ০৩ মার্চ, ২০২৩ ১২:০৬:২৮

কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত মেলা জমে উঠেছে

কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৫দিন ব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা জমে উঠেছে। এই মেলাকে ঘিরে উপজেলাব্যাপী বইছে উৎসবের আমেজ। নবরুপে সেজেছে কবির পৈতৃক ভিটা ও আশপাশের চত্বর ।

গত বুধবার (০১ মার্চ) রাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম। এ মেলা চলবে আগামী রোববার (৫ মার্চ) পর্যন্ত। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে।

এ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কিশোর বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচায্যের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে সকলের মাঝে এমনটিই প্রত্যাশা সাংস্কৃতিক প্রেমীদের। তবে এ মেলা ঘিরে নানা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক।

জানাগেছে, কিশোর কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্যরে জন্মদিন ১৫ই আগস্ট। আগস্ট বাঙ্গালী জাতির শোকের মাস। তাই কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে কবির পৈত্রিক ভিটায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে সুকান্ত মেলার আয়োজন করা হয়।

এ মেলা ঘিরে নবরূপে সাজানো হয়েছে কবির পৈতৃক ভিটা ও আশপাশের চত্বর । কবি ভক্ত, সাংস্কৃতিক কর্মী, এলাকাবাসী ও সর্বস্তরের মানুষ কবি সুকান্তের পৈত্রিক ভিটায় উপস্থিত হয়ে এ মেলাকে করে তুলেছেন প্রাণবন্ত। প্রতিদিন সুকান্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলা উপলক্ষে বসেছে স্টল। স্টলগুলোতে কবি সুকান্ত ভট্টাচায্য ছাড়াও বিভিন্ন কবির লেখা বই স্থান পেয়েছে। এ মেলা দেখতে গোপালগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে এসেছে নানা বয়সের মানুষ। এ মেলা উপলক্ষে বসেছে খাবার, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দোকান।

কোটালীপাড়ার জাহিদুল ইসলাম বলেন, “উনশিয়া গ্রামে কবি সুকান্ত মেলা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। দেখে খুব ভাল লাগেছে। তবে কবির পৈত্রিক ভিটা ঘিরে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানাচ্ছি।”

গোপালগঞ্জে থেকে আসা প্রীতি লতা বলেন, “কবি সুকান্ত মেলায় বেশ কয়েকটি বইয়ের ষ্টল বসেছে। তবে তা তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া বইয়ের সংখ্যাও কম। আমরা চাই মেলায় আরো বেশি বইয়ের স্টল দেয়া হোক আর বইয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হোক। তবে মেলার সার্বিক সব কিছু্ই ভাল হয়েছে।”

কবি ও আবৃত্তিশিল্পী প্রদ্যোৎ রায় বলেছেন, ‘যুগাবতার হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পাললিক ভূখণ্ড আমাদের বাংলাদেশে যত মহামানব এসেছেন, কবি সুকান্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কেবল একজন কবিই নন, তিনি একজন অনন্য ত্রাতা। তিনি নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আদর্শকে বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি, এই মেলার মধ্যে দিয়ে কিছুটা হলেও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বাঙালি জাতি বা আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা তুলে ধরতে পারব।’

কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “দেশী-বিদেশী পর্যাটকরা এখানে এসে কিশোর কবির বাড়ির পয্যাবেক্ষণ করতে পারে সেজন্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা কিশোর কবি সুকান্ত সম্পর্কে জানতে পারে।”

জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, “আমরা শুধু মেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। যশোরের মধু মেলার মত সুকান্ত মেলাকেও ওই রূপে নিতে চাই। এ মেলার অংশ হিসাবে কবির সাহিত্য সম্ভার নিয়েও একটি বই মেলা করা হবে। সুকান্ত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা সুকান্ত পদক দেয়াসহ ৭ দিনের মেলা চালু করবো। এ মেলাকে আরো প্রাণবন্ত করতে আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানান, জেলা প্রশাসক।”

প্রসঙ্গত, ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্য কলকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারণ ভট্রাচার্য্য ও মাতা সুনীতি দেবী। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল-তার উল্লেখ যোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রতিটি কবিতায় অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। কবির পিতা নিবারণ ভট্রাচার্য্য দেশ বিভাগ ও সুকান্তের জন্মের অনেক আগেই কোটালীপাড়ার ঊনশিয়া গ্রামের ভিটেমাটি ফেলে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে কলকাতা চলে যান।  


প্রজন্মনিউজ২৪/একে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ