যে যারে ভালোবাসে সে তারে পায় না

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১২:১৮:০২ || পরিবর্তিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১২:১৮:০২

যে যারে ভালোবাসে সে তারে পায় না

অনলাইন ডেস্কঃ একজন নোবেলজয়ী কবি বারবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অপমান ও বিরহের মিশলে মিশে যাচ্ছেন মাটির সঙ্গে। আবার ফিনিক্সের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বিরহকে পুঁজি করে লিখছেন একের পর এক কবিতা।

উনিশ শতকের শেষের দিকে ও বিশ শতকের প্রাক্কালে বিশ্বসাহিত্যে নামজাদা কবিদের একজন ছিলেন উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস। ইয়েটস ১৯২১ সালে সাহিত্য নোবেল পুরস্কার পান। আইরিশ কোনো কবির নাম উচ্চারিত হলে সবার আগে আসে ইয়েটসের নাম।
 
যে কবির দুনিয়াজোড়া এত নামডাক সে কিনা বারবার এক সাধারণ নারীর কাছে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে হচ্ছেন প্রত্যাখ্যানের শিকার। ইয়েটসের ভালোবাসার মানুষ মড গনকে এককথায় সাধারণ বলা যায় না। যে কিনা নোবেলজয়ী কবির প্রতিটি প্রেমের কবিতার একমাত্র অনুপ্রেরণা, আপাতদৃষ্টিতে সে সাধারণ হলেও হয়তো ইয়েটস মড গনের মধ্যে এমন কিছু পেয়েছিলেন, যার রেশ আজীবন ইয়েটসের মধ্যে রয়ে গেছে।
 
মারাত্মক সুন্দরী ও আত্মবিশ্বাসী নারী মড গনের সঙ্গে ইয়েটসের প্রথম দেখা হয় ১৮৮৯ সালে লন্ডনে। তখন মড গন এক কন্যার জননী। ফ্রান্সের প্যারিসে থাকাকালীন এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রণয়ের ফসল মড গনের কন্যা ইসেলৎ গন।
 
প্রথম দেখাতেই প্রেম যাকে বলে ইয়েটসের বেলায়ও তা-ই ঘটেছিল। মড গনকে দেখামাত্র প্রেমে পড়ে যান ইয়েটস। ইয়েটসের প্রেম মড গনের কাছে ছিল শুধুই বন্ধুত্ব। দুজনের আড্ডায় ইয়েটস যখন মডগনের চোখে প্রেম খুঁজে বেড়াতেন, মড গন তখনও ইয়েটসকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখে আসছিলেন।
 
লন্ডনে মড গনের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য নয় দিন হাতে পেয়েছিলেন ইয়েটস। কী হবে না-হবে এসব পাত্তা না দিয়ে ইয়েটস যেন মড গনের সঙ্গে কিছু চমৎকার মুহূর্ত তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। ইয়েটস যখন মড গনের ভালোবাসায় পাগলপ্রায়, তখন আর সাত পাঁচ না ভেবে ১৮৯১ সালে জানিয়ে দেন, মড গনকে ভালোবাসেন তিনি।
 
ইয়েটসের প্রেমের প্রস্তাব দিতে দুবছর লাগলেও, মড গন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে দুদণ্ড সময়ও নেননি। স্রেফ জানিয়ে দিলেন, তিনি ইয়েটসকে কেবল বন্ধুর মতো দেখেন, এর থেকে বেশি কিছু নয়।
 
সেই থেকে শুরু ইয়েটসের বিরহযাত্রা। যে নয় দিনে ইয়েটস মড গনের প্রেমে পড়েছিলেন, কাটিয়েছিলেন চমৎকার কিছু মুহূর্ত; তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছিল পরবর্তী দুদশকের বেশি সময় ধরে কিংবা কে জানে হয়তো সারা জীবন।
 
১৮৯১ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ইয়েটস মড গনকে তিনবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং যথারীতি প্রতিবার প্রত্যাখানের শিকার হন।  ইয়েটসের মন কাচের মতো ভেঙে যায় ১৯০৩ সালে যখন মড গন কবিকে রেখে বিয়ে করেন সেনাবাহিনীর এক মেজরকে।
 
একে প্রত্যাখ্যানের অপমান, অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর বেদনায় ইয়েটসের মন তখন ক্ষতবিক্ষত। মড গনের বিরহে ইয়েটস লিখলেন, ‘এর থেকে আমার প্রেমিকার মৃত্যু হতো।’ কেনই-বা লিখবেন না; ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু যদিও-বা সহ্য করা যায়, তার প্রত্যাখ্যান ও সবশেষ একরকমের প্রতারণা (ইয়েটসের মতে) সহ্য করা যায় না।
 
ভালোবাসার অপর পাতায় থাকে ঘৃণার চিত্রকল্প। ইয়েটসের বেলায়ও সেটি হলো। ইয়েটস যত-না মড গনকে ঘৃণা করতে লাগলেন, তার থেকে শতগুণ বেশি ঘৃণা করতেন তার স্বামী ম্যাকব্রাইডকে।
 
তবে ইয়েটসকে ছেড়ে মড গন যে সুখী হয়েছিলেন এমনটা নয়। মড গনের স্বামী ম্যাকব্রাইড একরকম অত্যাচারই করতেন তার ওপর। এ যেন মানুষের সেই স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়া। সহজেই হীরা মিলে গেলে মানুষ যেমন তাকে কয়লা ভাবতে শুরু করে, ম্যাকব্রাইডেরও হয়েছিল তেমন দশা। ইয়েটস যেখানে মড গনকে পেলে জীবন ধন্য মনে করতেন, ম্যাকব্রাইডের কাছে সেখানে মড গন হেলাফেলার বস্তু ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
 
খুব বেশিদিন মড গন ও ম্যাকব্রাইডের সম্পর্ক টেকেনি। গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার এবং মড গনের মেয়েকেও শারীরিক অত্যাচার করার কারণে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হলো মড গনকে।
 
ইয়েটস যে খুব খুশি হয়েছিলেন তা-ও না। শত হলেও ভালোবাসার মানুষের দুঃখ সহ্য হওয়ার কথা নয় একজন কবির। তাইতো ‘ইস্টার ১৯১৬’ কবিতায় ম্যাকব্রাইডকে একরকমের যাচ্ছেতাইভাবে গালিগালাজই করলেন ইয়েটস। মদ্যপ, লম্পট থেকে শুরু করে শব্দ দিয়েই সেনাবাহিনীর অফিসারকে একহাত দেখে নিলেন কবি।
 
মড গনের সংসার ভাঙে ১৯০৫ সালে। তার তিন বছর পর ইয়েটস ও মড গনের আবারও দেখা হয়। এতদিনের ছাইচাপা আগুনের মতো প্রেমের ফুলকি যেন দগদগে লাভা হয়ে বেরিয়ে আসে ইয়েটসের হৃদয় থেকে। প্যারিসে একসঙ্গে রাত কাটান ইয়েটস ও মড গন। ইয়েটসের কাছে এটা প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন হলেও, মড গনের কাছে তা ছিল কেবল ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’।
 
ইয়েটস যখন ভাবতে বসেছেন, হারানো মড গনকে আবারও পাওয়া গেল; মড গন তখন আবারও জানিয়ে দিলেন, তাদের মধ্যে যাই হোক না কেন ইয়েটসকে তিনি কেবল বন্ধু হিসেবেই দেখেন। এটি ছিল মড গনের থেকে পাওয়া ইয়েটসের চতুর্থ প্রত্যাখ্যান। সে সময় ইয়েটসকে দেয়া মড গনের চিঠির সারসংক্ষেপ ছিল, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি, কিন্তু ওভাবে না, যেভাবে তুমি চাও। প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক আমাদের কোনোদিনও সম্ভব নয়।’
 
দমে যাওয়ার পাত্র ইয়েটস নন; ১৯১৬ সালে ইয়েটস ঠিক করলেন এভাবে আর কতদিন! একটা বিয়েশাদি করা উচিত। পছন্দের পাত্রী আর কেউ নন; সেই পুরোনো প্রেমিকা মড গন। ১৯১৬ সালে ইয়েটসের বয়স যখন ৫১ তখন তিনি আবারও মড গনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং যথারীতি শেষবারের মতো প্রত্যাখ্যাত হন।
 

মড গন জানান, এখন আর এসব নিয়ে ভাবছেন না তিনি। নিজের মেয়ে ইসেলৎ গনকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চান। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইসেলৎ-এর বয়স যখন ১৫ তখন সে মায়ের বন্ধু ও একরকমের সাবেক প্রেমিক ইয়েটসকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন ইয়েটস ইসেলৎ-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও মড গনের শেষ প্রত্যাখ্যানের পর ইসেলৎকে এবার নিজ থেকে প্রেমের প্রস্তাব দেন ইয়েটস। কিন্তু বিধিবাম; ইয়েটসকে এবার প্রত্যাখ্যান করেন ইসেলৎ। মা ও মেয়ে দুজনার প্রত্যাখ্যানে ইয়েটসের প্রেমের ভূত অবশেষে মাথা থেকে নেমে যেতে একরকমের বাধ্য হয়।
 

ইয়েটস বুঝতে পারেন তার কপালে আর যে-ই থাকুক মড গন নেই। সেই উপলব্ধি থেকেই ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জ হেইডি লেসকে বিয়ে করে সংসারধর্মের সূচনা করেন ইয়েটস।
 
বিয়ে না করে মড গনের জন্য ২৮ বছর অপেক্ষা করেছিলেন ইয়েটস। কিন্তু শেষমেশ বুঝতে পেরেছিলেন, ‘যে যারে ভালোবাসে সে তারে পায় না’। অনেক কবির একপাক্ষিক প্রেমের মতো ইয়েটসের প্রেমেরও এক পাক্ষিক সমাপ্তি প্রমাণ দিল, ‘এদের ভালোবাসা যায়, পাওয়া যায় না’


প্রজন্মনিউজ২৪/একে

এ সম্পর্কিত খবর

ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট

দেশটা এখন আওয়ামী মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

ভোট দিতে গিয়ে শুনলেন তিনি মারা গেছেন, নিরাশ হয়েই ফিরলেন বৃদ্ধা

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ

খিলগাঁওয়ে পরিত্যক্ত ঘরে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ, পুলিশের ধারণা হত্যা

ছাত্রলীগ নেতার পর একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

কণ্ঠের সুরক্ষায় ঝাল-তৈলাক্ত খাবার পরিহারের পরামর্শ

৩টি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান, নিরাপদে আছে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা

আগামীকাল ফিটনেস পরীক্ষা, থাকছেন কি সাকিব?

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ