আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১০:০৭:৩৪

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

তোফাজ্জেল হোসেন পটুয়াখালী প্রতিনিধি: একটি জাতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে শিশুরা। আজ যারা শিশু তাদেরকে যদি আমরা সযত্নে, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে বিকাশ লাভের সুযোগ করে দিই, তাহলে ভবিষ্যতে তারা হবে এদেশের এক একজন আদর্শ, কর্মক্ষম, সুযোগ্য নাগরিক। এক সময় তারা দেশের প্রতিটি সেক্টর-এ অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এ দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ শিশু সুষ্ঠু বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত। তবে আশার কথা ইদানিং আমাদের মধ্যে শিশুদের চাহিদা এবং তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

প্রতি বছর ১৪ ই নবেম্বর “আন্তর্জাতিক শিশু দিবস”হিসেবে পালিত হচ্ছে। আমাদের সংবিধানেও শিশু অধিকার সংক্রান্ত আইন রয়েছে। এসব আইনের প্রয়োগের বিষয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে।
শরীর ও মন উভয়ই শিশুর সামগ্রিক গঠনের অন্তর্ভুক্ত। প্রথম জীবন থেকেই শিশুর শরীরের হয় বৃদ্ধি আর মনের হয় বিকাশ। শরীরের বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তন ও আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়া। অন্যদিকে মনের বিকাশ মানে শিশুর জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, আবেগ ও অন্যের সাথে মেলামেশা করার দক্ষতা অর্জন করা। একটি শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তার শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক বৃদ্ধি বা মনের বিকাশেরও সমানভাবে সুযোগ করে দিতে হবে। অত্যধিক জনসংখ্যা অধ্যুসিত বাংলাদেশের এক একটি শিশুকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করে দেশের সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এর বিকল্প নেই। ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, মাদকাসক্তি তথা সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয় হতে জাতীকে রক্ষা করতে হলে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।

গর্ভাবস্থা থেকে প্রথম পাঁচ বছর শিশুর বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। জীবনের প্রথম বছরগুলোতে শিশু যা শেখে, যেভাবে শেখে তা-ই তাদের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব, নৈতিক ও সামাজিক আচরণের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক বিকাশ মস্তিস্কের বিকাশের উপর নির্ভরশীর। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় নিউরন নামক মস্তিস্কের কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবার, শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা গর্ভস্থ শিশুর নিউরনের সুষ্ঠবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। জন্মের পর এ কোষের সংখ্যা বৃদ্দি হয় না তবে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক উদ্দীপনার দ্বারা নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটে এবং সেগুলো সক্রিয় হয়। এজন্য শিশু যাতে তার পাঁচটি ইন্দ্রিয় প্রতিদিন বারে বারে ব্যবহারের সুযোগ পায় তার দিকে যত্নবান হতে হবে। এতে মস্তিস্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ ঘটবে এবং বার বার ব্যবহৃত সংযোগগুলো স্থায়ী হয়ে শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকবে।

শিশুর প্রথম জীবনে এ ধরনের বিকাশের জন্য বাবা-মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও বিশেষ ভূমিকা প্রয়োজন। নীচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে একটি শিশু সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ লাভ করবে:

১. গর্ভাবস্থায় মায়ের সুষম খাবার, শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। নিরাপদ প্রসব ও প্রসবোত্তর পর্যাপ্ত যত্নের ব্যবস্থা করা।

২. শিশুর জন্মের পর পর শালদুধ, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ এবং পরবর্তীতে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার দেওয়া।

৩. শিশুকে প্রচলিত ছয়টি রোগের টিকা প্রদান এবং অসুস্থ হয়ে পরলে প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

৪. বুকের দুধ খাওয়ানো কিংবা দৈনন্দিন কাজের সময় শিশুর দিকে তাকিয়ে কথা বলা, মৃদু স্বরে গান গাওযা, দিনের কিছু সময় মৃদু শব্দে শিশুকে উদ্দীপ্ত করা।

৫. শিশুর সাথে লুকোচুরিসহ বিভিন্ন ধরনের আনন্দময় খেলাধুলা করা। হাত-পা নেড়ে হালকা ব্যায়াম করানো এবং সাথে আনন্দসূচক শব্দ করে কথা বলা। গান, ছড়া ও মজার মজার গল্প করে শিশুকে সক্রিয় করা।

৬. শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গসহ পরিবেশের নতুন নতুন জিনিসের সাথে শিশুর পরিচয় করিয়ে দেওয়া। শিশুকে ছোট ছোট প্রশ্ন করা এবং জবাব দেওয়া।

৭. শিশুকে বসতে, দাঁড়াতে এবং হাঁটতে সহায়তা করা। নিরাপদ পরিবেশে বাড়িতে ছোটাছুটি বা গড়াগড়ি করতে দেওয়া (এমনকি আঙ্গিনা বা মাঠের সবুজ ঘাসেও)।

৮. শিশুকে দাঁত মাজা, হাত ধোয়া, নিজে নিজে পোশাক পরা, প্রস্রাব পায়খানার নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করতে শিখানো।

৯. শিশুকে পরিবারে ছোট ছোট কাজে উৎসাহিত করা, পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং শিশুর ভাল কাজের প্রশংসা করা।

১০. অন্য শিশু এবং পরিবারের বাইরের লোকদের সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। বড়দের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে তা শিখানো এবং পালন করতে উৎসাহিত করা।


প্রজন্মনিউজ২৪/উমায়ের

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ