প্রবৃদ্ধির হার ৫–এর ঘরে নামবে: আইএমএফ

প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০২:২৩:৩৯ || পরিবর্তিত: ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০২:২৩:৩৯

প্রবৃদ্ধির হার ৫–এর ঘরে নামবে: আইএমএফ

বানিজ্য ডেস্কঃ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করার সঙ্গে দেশের সম্ভাব্য কিছু অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের পূর্বাভাস, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

আইএমএফ বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অনেকটাই কমবে। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি উঠে যাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।

মহামারির আগে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে কয়েক বছর তা ৮ শতাংশের ওপরে ছিল। আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। অর্থাৎ আগামী পাঁচ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে না আইএমএফ।

আরও পড়ুন: বইমেলার পর্দা উঠছে আজ

সেই সঙ্গে আইএমএফ বলছে, আগামী কয়েক বছরে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। বিশ্লেষকদের কাছেই এটাই শঙ্কার মূল কারণ। কারণ, বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। যদিও আগামী কয়েক বছরে সরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।

হঠাৎ করে এ বছর প্রবৃদ্ধির হার এতটা কমার কারণ অবশ্য উল্লেখ করেনি আইএমএফ। তবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সংকট এবং তা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে প্রবৃদ্ধির হার এতটা কমবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আইএমএফের প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস স্বাভাবিক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনায়ও তা অযৌক্তিক নয়। তিনি মনে করেন, আইএমএফের শর্তানুযায়ী সরকারকে যেসব সংস্কার করতে হচ্ছে, তার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ হয়তো আরও বাড়বে। সে জন্য মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এর আওতা আরও বাড়ানো উচিত বলে তিনি মত দেন।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত ফিলিস্তিন

এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যেও চাপ পড়ছে। তাই সেলিম রায়হান মনে করেন, তাদের চাপ কমাতে বা ব্যবসা করা সহজ করতে কী করণীয়, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে সেগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সেই করোনার সময় থেকেই চাপে আছে। তাদের আরও স্বস্তি দেওয়া দরকার বলে তিনি মত দেন।


আইএমএফের প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমে যাবে। আমদানি কমবে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত ডলার–সংকট মোকাবিলায় সরকার আমদানি সীমিত করার যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার জেরেই রপ্তানি কমবে। আমদানি-রপ্তানি কমলে প্রবৃদ্ধির হারও কমবে, এটাই স্বাভাবিক। যদিও চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি ও রপ্তানি খাত প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে। বিশ্লেষকেরাও আইএমএফের এই পূর্বাভাসের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘নোনা পানি’

বিশ্লেষকদের কাছে শঙ্কার বিষয় হলো, বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া। আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ দাঁড়াবে জিডিপির ২২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরেও বেসরকারি বিনিয়োগের হার প্রাক-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাবে না। এতে কর্মসংস্থানের হার কমে যাবে।

তবে চলতি অর্থবছরের পর মূল্যস্ফীতির হার কমবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তার পরের বছর ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। তবে চলতি অর্থবছরের এখনো প্রায় পাঁচ মাস বাকি। এই সময় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরেই থাকবে। চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তে তা ৮ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

আরও পড়ুন: ছয় সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু

চলতি অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন তা ৩ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসবে বলে মনে করে আইএমএফ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবকে ভিত্তি ধরলে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে এ রিজার্ভ বেড়ে অন্তত ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে। অর্থাৎ কোনোভাবেই তা ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে না।

আইএমএফ বলছে, পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার আর ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা যথাক্রমে ৪৬ দশমিক ৪ ও ৫৩ দশমিক ১ বিলয়ন ডলারে উন্নীত হবে। অর্থাৎ আগামী কয়েক বছরে দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। সেই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারও কমে আসবে—এমনটাই ধারণা করা যায় আইএমএফের তথ্য থেকে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমএ্ইচ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ