বেহুদা খরচ হচ্ছে ডলার 

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ১২:১৮:৩৪ || পরিবর্তিত: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ১২:১৮:৩৪

বেহুদা খরচ হচ্ছে ডলার 

অনলাইন  ডেস্ক: দেশে ডলার সংকটের মধ্যেও কমছেনা বিলাসী পণ্যের আমদানি। অনেকটা অপ্রয়োজনে খরচ হচ্ছে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা মার্কিন ডলার। এ তথ্য দিয়ে অংশীজনরা বলছেন, যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হয়, তা আমদানি-নিষিদ্ধ করতে হবে।

কারণ ডলার সংকটে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না তারা। ফলে শিল্প-কারখানায় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে। আবার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এতে ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

 আরও পড়ুন: সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই নেই ১মাস !

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন বিলাসী পণ্যের যে তালিকা দিয়েছিল, সেটি ধরে শুল্ক বাড়ানো হলে চলমান ডলার সংকট হতো না। আমরা বারবার বলছি বিলাসী পণ্যের আমদানি বন্ধ করা হোক। জরুরি কী প্রয়োজন, তা নীতি-নির্ধারকদের বুঝতে হবে। ব্যবসায়ীরা করোনায় যতটা না ক্ষতির মুখে পড়েছেন, এর চেয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম, ব্যবসা না থাকা, ডলার সংকটে ব্যবসা হারানোর উপক্রম হয়েছে তাদের। তাই দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি করা যাবে না।’ রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খুলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের দাবিও জানিয়েছেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানিতে সরকারের নজরদারি রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বিদেশি পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকেও যুক্ত করতে হবে। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হয়, সেসব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। সব ধরনের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ডলারের এ ধরনের সংকট হয়নি। তাই জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের এলসি খুললে ব্যাংকগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত। চলমান সংকট থেকে উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হোক। এখনই এ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সামনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।’ দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি রাতারাতি সম্ভব নয়। আমাদের রেমিট্যান্স আহরণ বাড়াতে প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর আরও বেশি জোর দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। ৮ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে রিজার্ভ। এখান থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। কিছুদিনের মধ্যে রিজার্ভ সংরক্ষণে নতুন হিসাব অনুসরণ করার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে ৬ নভেম্বর গণভবনে বৈঠকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠক সূত্র জানান, ডলারের মজুদ ধরে রাখতে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দামি গাড়ি ও ফল আমদানির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ৩৩০টি পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা কার্যকরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ডলার সংকট বিবেচনায় নিয়ে আমদানি খরচ কমাতে শুল্ক-কর কাঠামো পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৩৩০টি পণ্যের তালিকা তৈরি করে। মূলত ওই তালিকা নিয়ে এনবিআর কাজ করছে।

ট্যারিফ কমিশন ৩৩০টি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেছে, বিলাসী ও কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর সাময়িক উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হলে দেশীয় শিল্পের ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম। তাই যানবাহন, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গৃহস্থালি সরঞ্জাম, মূল্যবান ধাতু, প্রসাধন, পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সিরামিক পণ্য, সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল ও ফুল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয়, টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কুট, ফলের রস, কোমল পানীয়, অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্য ইত্যাদিতে আমদানি শুল্ক (সিডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি), নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) বাড়ানো এবং ট্যারিফ বা শুল্কায়নযোগ্য মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। এ সুপারিশ মানা হলে অন্তত ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হতে পারে বলে মনে করছে ট্যারিফ কমিশন।


প্রজন্মনিউজ২৪/এ আর  

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ