মুফতি কাজী ইব্রাহীমের গ্রেফতার,কারন ও মুক্তি

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৬:৪৩:৫৯

মুফতি কাজী ইব্রাহীমের গ্রেফতার,কারন ও মুক্তি

নিউজ ডেস্ক: স্বপ্নে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে ‘ইতালির মামুন মারুফের’কথোপকথন থেকে শুরু করে নানান বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন মুফতি কাজী ইব্রাহীম।

২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুক লাইভে আসেন  তিনি । ২০ মিনিটের লাইভে তিনি বলেন, “আমার বাসার সামনে ডাকাত এসেছে। হিন্দুস্তানের দালাল, র’র এজেন্টরা আমাকে নিয়ে যেতে চায়।”

২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল। ওয়াজ নসিহতের নামে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেফতারের কারন জানতে চাইলে,ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তরের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে হিন্দুস্তানের দালাল ও র-এর এজেন্ট কেন বলছেন, তা জানতেই মুফতি ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সবশেষ ট্রাইবুনালে অভিযোগের শুনানির দিনে দোষ স্বীকার করেছেন তিনি।  সোমবার ঢাকা সাইবার ট্রাইবুনালে এ কে এম জুলফিকার হায়াতের আদালতে দোষ স্বীকার করেন। দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত গ্রেফতারের পর থেকে এ পর্যন্ত কারা ভোগকে সাজা হিসেবে প্রদান করেন। সেই হিসেবে তিনি এই মামলায় ১বছর ৩মাস ১৯ দিনের সাজা ভোগ করলেন।

আদালতে শুনানি চলাকালে মুফতি কাজী ইব্রাহিম বলেন,‘আমি দেশ, সরকার ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলেছি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলিনি। এই সোনার বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি। এ দেশের ক্ষতি আমরা চাই না।’

মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বেশ কয়েকটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়, যেসব বিষয় মুফতি ইব্রাহিম বিভিন্ন সভা ও ওয়াজ মাহফিলে বলেছিলেন। মুফতি ইব্রাহিমের বিতর্কিত সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ইতালির মামুন:

মামুন মারুফ ইতালিতে থাকে, সে বাঙালি কিন্তু ইতালিপ্রবাসী। আমি তো তাকে চিনি না। আমার ভক্ত আছে এ দেশে ১০-১৫ কোটি। আমি ২০ বছর ধরে মিডিয়াতে কাজ করি। বিটিভিসহ দেশের প্রায় সব টেলিভিশনেই কথা বলেছি। সে কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই আমাকে চেনে, মামুনও চেনে। মামুন আমার ফোন নম্বর যোগাড় করেছে বহু কষ্টে। আমি তো সবার ফোন ধরি না। পরে আমার পিএস সাহেবকে দিয়ে বহু কষ্টে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।

ফেব্রুয়ারি নাগাদ সে স্বপ্ন দেখেছে, করোনাভাইরাস তাকে নানান কথা বলেছে। আমরা তো স্বপ্নের কথা বুঝতে পারি সেটা মেকি, বানোয়াট না আর্টিফিসিয়াল। তার স্বপ্নটা শুনে মনে হলো সে সাদামাটা টাইপের একটা ছেলে। তার স্বপ্নটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই আমার কাছে নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট মনে হলো। আমি দেখলাম এতে খারাপ কিছু নাই, স্বপ্নকে সামনে রেখে জাতিকে যদি সতর্ক করা যায় তাহলে এতে তো ক্ষতি কিছু নাই। আমরা তো ভালো যে মানুষকে আগেভাগেই ইনফর্ম করছি। যখন কেয়ামত ঘনিয়ে আসবে মোমিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। স্বপ্ন যে কোনো মানুষই দেখতে পারে সে মুমিন হোক বা না হোক।

q7+6=13 সূত্র:

এইটা একটা জটিল বিষয়। এইটার আলোকে ও (মামুন) চেষ্টা করতেছে কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায় কি না। 1 মানে আল্লাহ এক। এক আল্লাহর প্রতি ফেইথ থাকতে হবে। ফেইথ যদি না থাকে ঈমান যদি না থাকে তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল থাকতে হবে। q মানে কোরআন। q7 হলো কোরআনের সুরা ফাতিহার ৭টি আয়াত। এই ৭ টি আয়াত তো এম্নিই শেফা, ৭ বার সুরা ফাতিহা পড়লে যেকোনো রোগব্যাধি থেকে এম্নিতেই মুক্তি আসে। এইটা বিশাল একটা সূত্র। এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। আমাকে সে (মামুন) যে কথাগুলো বলেছে তা প্রত্যেকটি সায়েন্টিক বলে মনে হয়েছে। আমরা তো ওষুধ কোম্পানিও না, সেইটা বানানোর মতো ক্ষমতাও নাই। সে যদি পারে ব্যক্তিগতভাবে তাহলে উপকার করার চেষ্টা করবে, এই আরকি...

পাপিয়াদের করোনা আক্রমণ করবে:

সৌদি আরবে তাদেরই হয়েছে যারা অশালীন, ওখানের ভেতরের অবস্থা তো খুবই খারাপ। আমি যাই তো দেখেছি। দুবাইকে দেখলে তো মনে হয় না ওটা কোনো মুসলিমের দেশ। কী হয় না সেখানে? ইরানে তো ম্যাসাকার অবস্থা, ৫ জন মন্ত্রীও তো মনে হয় মারা গেছে। ওরা যেহেতু আল্লাহর ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি বলেছি আমাদের দেশে দেরি করে আসবে। আমাদের মতো কাউকে আক্রমণ করবে না। করোনা আক্রমণ করবে পাপিয়ার মতো মানুষদের। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। মামুন স্বপ্নে জানতে পেরেছে আমাদের দেশের যারা অসৎ কাজ করে, নেশা করে ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তাদের ধরবে করোনা। যুগে যুগে এসব অপরাধ যারা করে তাদের ওপরই গজব এসেছিল।

শেকসপিয়ার এর আসল নাম শেখ জুবায়ের:

একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়- মুফতি ইব্রাহিম বলছেন, 'শেকসপিয়ারের আসল নাম শেখ জুবায়ের। তিনি অ্যারাবিয়ান।' এই ভিডিওটি দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে মুফতি ইব্রাহিমকে দেখা যায় একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজি মুফতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি সম্ভবত ১০-১২ বছর আগের। আমি মাহফিলে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেটি বলেছিলেন গাদ্দাফি। উনি বলেছিলেন আরবের যেসব পরিবার হিজরত করেছিল তাদেরই বংশধর। আমি গাদ্দাফির বক্তব্যেই শুনেছি।'

তিনি বলেন, ইংরেজদের নামের পরিবর্তনের ধারায় শেকসপিয়ার নামটিও পরিবর্তন হয়েছে। যেমনটা পরিবর্তন হয়েছে ইসহাক থেকে আইজাক, ইবনে সিনা, এবেসিনা, ইউসুফ থেকে যোশেফ।

তার মুক্তির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সমর্থকরা বলেন: মুফতি কাজী ইবরাহীম যত ভুল করুক তার বিচার করার যোগ্যতা বাংলাদেশের অবৈধ অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকার রাখে না।তারা আলেমদের ভুলের জন্য বিচার করে না বরং আলেম সমাজকে অপমান করার জন্য জেনে বুঝে হক্কানী আলেমদের গ্রেফতার করে।প্রতিটি যুগে সেরা আলেমগণ জালেম শাসকের জুলুমের স্বিকার হয়েছে। মুফতি কাজী ইবরাহীমের মত আলেমদের এই ত্যাগে সরকারের মসনদ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 

দোষ স্বিকার করার মামলায় জানতে চাওয়া হলে কাজি ইব্রাহিম বলেন,‘মানুষ জীবন বাচিঁয়ে রাখে কিছু কিছু ভুল পাপের বিরান বাগে পোটে ক্ষমার জীবন ফুল। মানুষ মাত্রই ভুল।’

তবে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজিবি জানান, এই সাজায় প্রায় ৫-৮ বছররে সাজা হত, সাজা আরেকটু বেশি হলে আমরা সন্তুষ্ট হতাম।


প্রজন্মনিউজ২৪/উমায়ের

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ