মানব পাচারের ৬৩৮৩ মামলা বিচারাধীন

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩ ০১:১১:৪৪ || পরিবর্তিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩ ০১:১১:৪৪

মানব পাচারের ৬৩৮৩ মামলা বিচারাধীন

নিউজ ডেস্কঃ কক্সবাজারের রামু উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোরীকে নেপালে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়েছিল মানব পাচারকারীরা। ২০১৪ সালের আগস্টে তাদের খপ্পরে পড়ে ওই কিশোরীর ঠাঁই হয় খুলনার একটি যৌনপল্লিতে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পাঁচ মাস পর ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা করে কিশোরীর পরিবার। ওই বছর অক্টোবরে তিনজনকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এখন পর্যন্ত বিচার দূরে থাক, আসামিদের কেউ ধরা পড়েননি।

শুধু এ মামলাই নয়, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা থাকলেও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে এসব মামলা। গত বছর ৩০ জুন পর্যন্ত মানব পাচারের সাড়ে ৭ হাজার মামলা দায়ের হলেও এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ মামলা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন আদালতে মানব পাচারের অধিকাংশ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। মামলার উপাদান, সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারায় তদন্ত কর্মকর্তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারছেন না। মানব পাচার আইনে করা মামলায় ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ গঠন এবং ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে ধীরগতির কারণে যথাসময়ে মামলা শেষ করা যাচ্ছে না। মানব পাচার আইনের মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য সাতটি বিভাগীয় শহরে রয়েছে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল।

আইনজ্ঞরা বলেন, এ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পুলিশকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও মত তাদের।

পুলিশ সদর দফতরের মানব পাচার মামলা-সংক্রান্ত মনিটরিং সেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৫ জুন থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে এ-সংক্রান্ত ৭ হাজার ৫১৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ১৩৪টি মামলা। আর নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ২৪৭টিতে। বাকি সব মামলায়ই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাজা হওয়া ৪৩৪ জন আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদন্ড, ২৯৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

রামু থানায় ২০১৫ সালে করা মামলাটির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কিশোরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলাটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। মামলাটি এখনো সাক্ষী পর্যায়ে আছে। দীর্ঘদিন বিচারাধীন থাকায় ভুক্তভোগীরা হতাশ হয়ে আর মামলার খোঁজ রাখেন না। মামলার সাক্ষীদেরও পাওয়া যায় না। পরে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। সে খুবই অসহায়। বাবা নেই, শুধু মা বেঁচে আছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, ইতোমধ্যে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে সাজার মাত্রা খুবই কম। মামলা বিলম্বে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রধান কারণ যথাসময়ে আদালতে সাক্ষী আসে না। বাদী ও সাক্ষীর ঠিকানাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনেও অনেক ত্রুটি থাকে। সাক্ষীর অভাবে অনেক মামলায়ই আসামি খালাস পেয়ে যান। এতে নষ্ট হয় রাষ্ট্র্রের অর্থ, আদালতের সময়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে যারা মানব পাচার করছে তাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এটি করা গেলে কমে আসবে মানব পাচার। দ্রুত আইন অনুযায়ী পৃথক ট্রাইব্যুনাল স্থাপনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, আসামিদের অহেতুক সময়ক্ষেপণ ঠেকাতে তৎপর হতে হবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের।


প্রজন্মনিউজ২৪/উমায়ের
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ