শাহজালালে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়, আইএলএস আপগ্রেডেশনে গড়িমসি

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:১৪:৫২ || পরিবর্তিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:১৪:৫২

শাহজালালে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়, আইএলএস আপগ্রেডেশনে গড়িমসি

অনলাইন ডেস্কঃ ঘন কুয়াশায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে বিঘ্ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনেক ফ্লাইট ঢাকার আকাশে চক্কর মেরে নামতে বাধ্য হচ্ছে কলকাতা কিংবা মিয়ানমারে। এমন বিপর্যয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। সমস্যা দূর করতে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) আপগ্রেডেশনে গড়িমসি করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

জানা যায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ৪০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। সমস্যা দেখা দেয় প্রতি বছর শীতকালে। এ সময় রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম থাকায় প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা বা ১০টা পর্যন্ত ফ্লাইট অবতরণে বিঘ্ন ঘটে। ফলে অনেক ফ্লাইট ঢাকার আকাশে চক্কর মেরে কলকাতা বা মিয়ানমারে গিয়ে অবতরণ করছে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব শাহজালাল বিমানবন্দরে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স মালিকেরা।

বেবিচক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালালে বর্তমানে আইএলএস-১ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ছয়শ মিটার পর্যন্ত উড়োজাহাজ ওঠা-নামায় সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যে কোনো পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করাতে হলে আইএলএস-২ ক্যাটাগরি লাগবে। এটি চালু করারও উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক।

সাধারণত বৈরী আবহাওয়া বা ঘন কুয়াশার কারণে পাইলট খালি চোখে রানওয়ে দেখতে না পারলে নিরাপদ অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইলটকে এক ধরনের বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সহজেই রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন পাইলট। এখন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস আছে, তার দৃষ্টিসীমা ছয়শ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৫০ থেকে শূন্য মিটার পর্যন্ত। ফলে পুরোনো আইএলএস দিয়ে ফ্লাইট ওঠা-নামা করানোয় বিঘ্ন ঘটছে।

গত ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টা। শীতের চাদরে মোড়া ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা। রানওয়েতে উড্ডয়নের অপেক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের উড়োজাহাজ। একই সঙ্গে অবতরণে সংকেতের অপেক্ষায় আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ আকাশে চক্কর দিচ্ছে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে অবতরণ বা উড্ডয়নের সংকেত দিচ্ছে না বিমানববন্দর কর্তৃপক্ষ।

এমন অবস্থায় জ্বালানি সংকটের আশঙ্কায় সালাম এয়ার, কুয়েত এয়ার, এয়ার অ্যারাবিয়া, জাজিরা এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার, মালিন্দো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাতটি ফ্লাইট কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটটি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।

একই কারণে ওমান এয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, হিমালয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারেনি বলে জানায় বিমানববন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ঘন কুয়াশায় গত ৩ জানুয়ারি সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ ছিল। এতে অর্ধশতাধিক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এভাবে কিছুদিন পরপরই বিমানবন্দরে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরগুলোতেও ঘন কুয়াশায় দেখা দিচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে দুবাই থেকে যাত্রী নিয়ে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২২২ ফ্লাইট। এটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে কয়েক চক্কর দিয়ে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশায় মাঝে মধ্যে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। বাধ্য হয়ে ঢাকার ফ্লাইট কলকাতা, ইয়াঙ্গুন বা দেশের অন্য বিমানবন্দরে পাঠাতে হচ্ছে। তবে গত কয়েকদিন শাহজালালে ফ্লাইট ওঠা-নামা স্বাভাবিক আছে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর শীতে এই সমস্যা তৈরি হয়। এখন আইএলএস সিস্টেম উন্নয়নে কাজ চলছে। পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকার লাইটিং সিস্টেমসহ অন্যান্য কাজের উন্নয়নও করা হচ্ছে। আশাকরি আগামী বছর থেকে শীতে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না।

আকাশপথে পরিবহন ব্যবসা সবচেয়ে জমজমাট থাকে শীতকালে। দেশ-বিদেশের এয়ারলাইন্সগুলো তাকিয়ে থাকে শীতের দিকে। অথচ ঘন কুশয়াশার কারণে সেই শীতেই বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। কোনো উড়োজাহাজ যদি ঢাকায় অবতরণ করতে না পারে তাহলে চট্টগ্রাম বা সিলেটে অবতরণ করে। আর তা না হলে অন্য দেশের বিমানবন্দরে গেলে যোগ হয় ল্যান্ডিং, পার্কিং, সিকিউরিটি, রুট নেভিগেশন চার্জ। এতে ফ্লাইট পরিচালনা ব্যয় ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।

শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিন সকালেই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘন কুয়াশা বেশি থাকায় বিমানবন্দরে ভিজিবিলিটি কমে যায়। ফলে উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারে না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি, মেঘের কারণেও উড়োজাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

তিনি বলেন, এমন সমস্যার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এয়ারলাইন্স মালিকদেরও বাড়ছে ফ্লাইট পরিচালনা ব্যয়। তাই শাহজালালসহ অন্য বিমানবন্দরের রানওয়ের আইএলএস আপগ্রেড করা জরুরি।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত আপগ্রেডেশন ও লাইট না থাকায় উড়োজাহাজগুলো ঠিকমতো নামতে পারছে না। এতে এয়ারলাইন্সগুলো অর্থনৈতিকভাবে বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ল্যান্ডিং সিস্টেমগুলো আপগ্রেড করতে পারলে পাইলটরা সেই সিস্টেমের ওপর বেজ করে অবতরণ করতে পারতো। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিস্টেম আপগ্রেডের দাবি জানাই।

আইএলএস আপগ্রেড করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আইএলএস আপগ্রেডেশনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে লাইটিং সিস্টেম আপগ্রেড করা হবে। তবে ঠিক কবে আইএলএস উন্নীত করা হবে বা আইএলএস উন্নীতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানাতে পারেনি তিনি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এ কে

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ