স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবা কতটা যোক্তিক: মৌলিক অধিকারের খোঁজ নেই

প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৪:৫২:৪৫

স্মার্ট বাংলাদেশ ভাবা কতটা যোক্তিক: মৌলিক অধিকারের খোঁজ নেই

অনলাইন নিউজডেস্ক: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ কিছুদিন ধরেই বেশ সরগরম। ডিসেম্বর মাসজুড়ে দেশের দুই বড় দল রাজপথে মিটিং-মিছিলের জন্য আলোচনায় ছিল। এর মধ্যেই দুই বড় দল দেশ নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বেশ জোরেশোরে প্রচার শুরু করেছে। একদল বলছে তারা ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলতে চায়, আরেক দল অবশ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ কথা বলছে। এসব কথা এখন শোনা যাচ্ছে, কারণ খ্রিষ্টীয় ২০২৩, যে নতুন বছর শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য বছরটি গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনের সময় রাজনীতির মাঠ গরম থাকা যেমন স্বাভাবিক, ঠিক তেমনি দেশ নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথাও রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকদের কাছে তুলে ধরবে, এটিও স্বাভাবিক। তবে যেটি স্বাভাবিক নয়, সেটি হচ্ছে কিছু অস্বাভাবিক বিষয়কে আমাদের রাজনীতিবিদ ও দলগুলো প্রায় স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছে।

আপনারা ‘রেইনবো’ কিংবা ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়বেন ভালো কথা, কিন্তু এসব করার আগে সাধারণ মানুষ যাতে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে, সেটি তো নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা বড় দলগুলো তো পালা করে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন কিংবা করছেন। তাহলে কেন এই দেশের প্রান্তিক মানুষকে এখনো দুই বেলা খাবারের চিন্তা করতে হয়? কেন তাদের চিন্তা করতে হয়—পরের বেলা ভাত খেতে পারবে তো! নতুন বছরে বরং প্রতিজ্ঞা করুন, দেশের একজন মানুষও যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে আপনারাও খাবেন না। কিংবা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে তবেই বিশ্রাম নেবেন।

কেন সাধারণ মানুষকে চিন্তা করতে হয়, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাবে তো! চিকিৎসা পেলে ওষুধ কিনতে পারবে তো? নাকি বিনা চিকিৎসা কিংবা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে তাদের অন্য ভুবনে যেতে হবে! ধনী এবং ক্ষমতাবান মানুষ অবশ্য সামান্য চুলকানি হলেও বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। আর সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাওয়া তো দূরে থাক, সন্তানকে ঢাকায় সঠিক চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে আনতে আনতে ফেরি পার হতে না পেরে মাঝপথেই সন্তানহারা হয়। আপনারা বরং প্রতিজ্ঞা করুন, দেশের সব মানুষের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার আগপর্যন্ত আপনারা কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন না।


যে দেশের মৌলিক বিষয়গুলোতেই এত সমস্যা রয়ে গিয়েছে, যে দেশের একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ এখনো সঠিকভাবে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারছে না, তাদের আপনারা ইংরেজি ‘রেইনবো’ আর ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ উপহার দিতে চাইছেন। এই শব্দের মানেই তো অনেক মানুষ জানে না! কারণ, আপনারা দেশের মানুষকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারেননি। এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষ এবং তাদের ভাবনা ও চাহিদা থেকে কত দূরে।
যে দেশে সার্টিফিকেট কিংবা আইডি কার্ডে সামান্য একটা নামের বানান ভুল কিংবা অন্য কোনো ভুল হলে ঠিক করার জটিল সমীকরণে একেকবার একেক অফিসে ঘুরতে হয়, কেউ জানে না কীভাবে এর সমাধান হবে, সেই দেশকে আপনারা কেউ ‘রেইনবো’, কেউ ‘স্মার্ট’ বানিয়ে ফেলতে চাইছেন। আগে এসব অতি সাধারণ সেবা, যেগুলো মানুষের প্রাপ্য, সেগুলো তো ঠিক করবেন।

অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান সঠিক শিক্ষা নিয়ে তারা যেন নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। সেই ছাত্রছাত্রীরা কেউ নকল করে পাস করে বের হচ্ছে। কেউ আবার ভর্তি পরীক্ষায় ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শিক্ষকেরা নিজেরাই এসব কাজের সঙ্গে শুধু যে জড়িত এমন নয়, উল্টো বোর্ডের পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন করছেন, যা শুধু আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পরিচয়ই দেয় না, আমরা কেমন ভবিষ্যৎ পেতে যাচ্ছি, সেটিও জানান দেয়!

যে দেশের মৌলিক বিষয়গুলোতেই এত সমস্যা রয়ে গিয়েছে, যে দেশের একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ এখনো সঠিকভাবে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করতে পারছে না, তাদের আপনারা ইংরেজি ‘রেইনবো’ আর ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ উপহার দিতে চাইছেন। এই শব্দের মানেই তো অনেক মানুষ জানে না! কারণ, আপনারা দেশের মানুষকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারেননি। এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষ এবং তাদের ভাবনা ও চাহিদা থেকে কত দূরে।


আপনারা কেউ ‘খেলছেন’, কেউ ‘খেলে দিতে’ চাইছেন। কিন্তু আপনারা আসলে কেন ‘খেলছেন’? আপনাদের এসব খেলা কি আদৌ দেশের সাধারণ মানুষ দেখতে চাইছে? তাহলে কেন আপনারা ‘খেলছেন’? দেশের সাধারণ মানুষ আপনাদের কাছে বেশি কিছু চায় না। তারা চায় দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে বাস করতে। আপনারা বরং নিজেরা নিজেরা খেলতে থাকুন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে তাদের এই অধিকার থেকে দয়া করে বঞ্চিত করবেন না।

নতুন বছরে আপনাদের এই ‘খেলাধুলা’ হয়তো আরও অনেক বেড়ে যাবে; কারণ সামনে নির্বাচন। ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা থাকার নির্বাচন। আপনাদের যত ইচ্ছা খেলুন। দয়া করে খেয়াল রাখবেন, আপনাদের ‘খেলাধুলার’ মাঝখানে পড়ে কোনো সাধারণ মানুষকে যেন বেঘোরে জীবন দিতে না হয়। কারণ, আপনাদের খেলা কেউ দেখতে চায় না।
লেখক -ড. আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এম এইচ 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ