মৃত্যুপ্রহর গুনছে চট্টগ্রামের প্রথম দারুল আদালত ভবন

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৫:৫৪:১৫ || পরিবর্তিত: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৫:৫৪:১৫

মৃত্যুপ্রহর গুনছে চট্টগ্রামের প্রথম দারুল আদালত ভবন

চট্টগ্রাম প্রতনিধিঃ চট্টগ্রাম ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অনন্য পীঠস্থান এই আদালত বভন।বন্দর নগরী হওয়ায় নানা জাতির নানান কিসিমের মানুষের পদচারনায় সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই জনপদ ব্যস্ত সময় পার করে আসছে।সময়ের সাথে সাথে এখানে যেমন রোমান সৈনিকরা এসেছে জাহাজে ক্রয় করতে, তেমনি আরবরা এসেছে ইসলাম প্রচার ও ব্যাবসা করতে।আবার ফ্রেন্ঞ্চ ও পর্তুগিজরা এসেছে দাস ব্যবসা ও দস্যুতা করতে।মগ দস্যুরা এ ভুমির দখল নিয়েছে সীমানা বাড়াতে।এক কথায় নানা উত্থান পতনের সাক্ষী এই বন্দরনগরী।

সেই ইতিহাসের এক ছোট্ট অংশ চট্টগ্রামের শিক্ষাপাড়া চকবাজারের মহসিন কলেজের পাহাড়ে অবস্থিত। নাম যার "দারুল আদালত"। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা যাকে চেনে পর্তুগীজ ভবন নামে।এটিই চট্টগ্রামের প্রথম আদালত ভবন, যা বিগত ৩০০ বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। 

স্থানীয়ভাবে একে পর্তুগীজ ভবন ডাকা হলেও ইতিহাসে এ নিয়ে আছে দ্বিমত।স্থানীয়দের মতে পর্তুগীজরা চট্টগ্রামে আসা প্রথম ইউরোপীয়, তাই তারা এখানে প্রথম তাদের ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করে।এর নিচ দিয়ে কর্নফুলি নদীর তীর অবধি সুড়ঙ্গ ছিলো বলে ধারনা করা হয়।এমন ধারনা করা হয় কারন শুরুর দিকে পর্তুগীজরাই চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতেন।কিন্তু ইতিহাসবেত্তারা বলেন ১৭৬১ সালে চট্টগ্রাম দখলের পরপরই এটি নির্মিত হয়।এখান থেকেই আইনি সকল কার্যক্রম চলতো, লালদীঘিস্থ লালকুঠিতে কোর্ট স্থাপনের  আগ অবধি। 

স্থাপত্যকলার দৃস্টিতে এটিতে ইউরোপীয় ও মুঘল রীতীর সংমিশ্রন দেখা যায়।যা এই ভবনকে ১৭০০_১৮০০ সালের কোনো একসময়ের বলে যে ধারনা প্রচলিত তাকে আরও শক্তিশালী করছে।দ্বিতল ভবনটিতে মুঘল ও পাশ্চাত্য যুগের অনন্য স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।এর ৩ ফুট চওড়া দেয়াল ইট-চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।ভবনটিতে ১৬টি কক্ষের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম কোণে ২টি টাওয়ার রয়েছে।
টাওয়ারে পৌঁছানোর জন্য ২টি সর্পিল সিঁড়ি রয়েছে।প্রতিটি টাওয়ারে ছোট গম্বুজ থাকলেও ০.৭৭৫ একর ভবন এলাকায় কোনো টানেল পাওয়া যায়নি বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে।

সবমিলিয়ে, ঐতিহাসিকভাবে ভীষন মুল্যবান একটি স্থাপনা হলেও, এর অবস্থা খুবই করুন ভবনটির প্লাস্টার খসে খসে পড়েছে ভেতরে বিশাল বিশাল কক্ষে কুকুরের আবাস।জংলী লতা পাতায় লতানো থাকে পুরো বিল্ডিং মোটা দেয়াল গুলো নড়বড়ে।ঘটতে পারে যেকোনো দুর্ঘটনা। কিন্তু দেখার যেন কেউই নেই।একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলা হলেও নেই কোনো উদ্দ্যোগ। 

জানা যায় বছর পাঁচেক আগে এখানে প্রত্নতত্ন বিভাগের দায়িত্বশীলরা এসে স্থাপনাটি পরিদর্শন করেন।তখন ঢাকাস্থ প্রত্নতত্ন বিভাগে এর সংস্কার চেয়ে আবেদন করলেও এখনো দেখা মেলেনি সংস্কার এর। অথচ এটিই চট্টগ্রামের প্রথম আদালত ভবন। এ ভবনটি ক্রমেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার দিন গুনছে। 

এ নিয়ে মহসিন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে এ নিয়ে মতামত চাইলে তিনি  বলেন, " অবশ্যই সহ মত পোষন করছি।আমাদের কলেজে না পড়েও অনেক এই ভবনটি দেখতে আসে।কিন্তু বতর্মানে ভবনটির যে অবস্থা তা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।তাই এই ভবনটি অতি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।"

মাহমুদ তামিম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন " সংস্কার চাই সংস্কারের অভাবে এতো পূরানো প্রত্নতাত্ত্বিক একটা সম্পদ ধ্বংসের পথে, তাই অতি তাড়াতাড়ি সংস্কার দরকার যাতে করে নতুন প্রজন্ম ভবনটা দেখে প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে"

মুন দাশ রাহুল নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান "ভবনটির প্রত্নমুল্য অনেক, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শিক্ষার্থীদের অনৈতিকতা চর্চার জন্য বেশ কয়েকবার তোপের মুখে পড়ে এ ভবন। পরে সবশেষ এটি সিলগালা করা আছে, এখন এটি তার শেষ দিন গুলো পার করছে এটা জেনেও উদ্দ্যোগ নিচ্ছে না কেউই" উল্লেখ্য ইতিহাস মতে ভবনটি প্রায়, ২৬১ বছরের পুরোনো। 


প্রজন্মনিউজ২৪/এ আর 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ