পাহাড়ে মারফা চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০১:৫৯:৪০

পাহাড়ে মারফা চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

লামায় সবজি দোকানে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে জুম চাষিদের উৎপাদিত মারফা
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার জুমে উৎপাদিত মজাদার সবজি হিসেবে মারফা’র কদর বাড়ছে। পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবারে তরকারি হিসেবে মারফা’র ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় হাঁট-বাজারে চলছে মারফার’র বিকিকিনি। একসময় জুম চাষিরা পাহাড় চূড়ায় জুম ক্ষেতে কাজ করার সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটানোর জন্য অল্প পরিমাণে মারফার চাষ করতো। কিন্তু সেই মারফার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বছরগুলোতে প্রায় জুমেই এ চাষ হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মারফা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে পাহাড়ে।

এদিকে স্থানীয় জুম চাষিরা মনে করছেন, পাহাড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মারফা চাষ করা গেলে ফলন আরো বৃদ্ধি পেত। যা স্থানীয় সবজির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র বিক্রি করা যেত এবং এ মারফা চাষে জুমিয়ারা স্বাবলম্বী হতে পারত। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা, কৃষি বিভাগের আধুনিক চাষাবাদ বিষয়ের প্রশিক্ষণ প্রদান দরকার বলেও তার মনে করছেন জুমিয়ারা।

স্থানীয় জুম চাষিরা জানান, মারফা দেখতে শসার মতো। এটি কাঁচা এবং তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। কচি মারফা দিয়ে শসার বিকল্প হিসেবে সালাদও তৈরি করেন স্থানীয়রা। শসা অনেকখানি লম্বা হলেও মারফা সর্বোচ্ছ ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর ওজনও সাইজ অনুযায়ী সর্বোচ্ছ ২ কেজি পর্যন্ত হয়। শসার তুলনায় মারফার খোসা তুলনামুলক শক্ত। এটি কচি অবস্থায় সবুজ এবং পাঁকলে হলুদ ও লাল রং ধারণ করে। কিছু কিছু জাত রয়েছে যা পাকলে সাদা রংয়ের হয়। চলতি মৌসুম এলেই স্থানীয় হাঁট-বাজার গুলোতে জুমে উৎপাদিত বেগুন, কুমড়া, কাঁচামরিচ ও মারফাসহ বিভিন্ন শাক সবজী উঠতে শুরু করে। জুমে উৎপাদিত ফসল রাসায়নিক সার ও কীটনাশকবিহীন হওয়ায় রয়েছে আলাদা কদর।

লামা ও আলীকদমের বিভিন্ন হাঁট-বাজারে জুমে উৎপাদিত অন্যান্য ফসলের সাথে বিপুল পরিমাণে মারফার মজুদ দেখা যায়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক হাঁটের দিন শনি, সোম ও মঙ্গলবারে এ সবজি পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সবজি হিসেবে মারফার এখন প্রচুর চাহিদা। শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, বর্তমানে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা মারফা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্থানীয় বাজারে এর মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি কেজি মারফা বর্তমানে ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে হাট বাজারগুলোতে।

লামা উপজেলার ছাগলখাইয়া এলাকার বাসিন্ধা মো. সমির উদ্দিন জানান, একসময় কচি মারফা খিরা ও শসার ন্যায় কাঁচা খেতাম। এখন পাকা মারফা রান্না করেও খাওয়া হচ্ছে। মারফা শসার বিকল্প হিসেবে চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করলে বেশ মজাদার হয়। মাংস দিয়েও মারফা ভালো রান্না হয়।

রুপসীপাড়া এলাকার জুমচাষি অংবাই মারমা জানান, জুম খেতে ধানের বীজ রোপার সময় মারফার বীজ বুনতে হয়। তার পর ধানের ফাঁকে ফাঁকে মারফা গাছ হয়। দু’মাস পর ফলন আসা শুরু করে। প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০টি মারফা ধরে। উৎপাদিত ফলনের কিছু অংশ নিজেরা খান। অবশিষ্ট অংশ বাজারে বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বলেন, মারফা পাহাড়ের ঢালুতে চাষ উপযোগী একটি সবজি। এ অঞ্চলের জুমে ব্যাপক হারে উৎপাদন হচ্ছে। জুমিয়ারা নিজস্ব পদ্ধতিতে এ চাষ করে থাকেন। এছাড়া দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মারফা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে পাহাড়গুলোতে।


প্রজন্মনিউজ২৪/রাজু

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ