❝অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া❞

প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০১:৪১:১১ || পরিবর্তিত: ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০১:৪১:১১

❝অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া❞

আব্দুল কুদ্দুছ,চাঁদপুর প্রতিনিধিঃপরিবার যত অসহায় হোক না কেন, একটা সময় পর্যন্ত সেটা উপলব্ধি করা একটু কষ্টই বটে। কেননা সে সময়টাতে বাবা-মা'ই মূলত সন্তানকে অভাব বুঝতে দেন না। পারিবারিক অসচ্ছলতা এবং পরিবারের কষ্টের বিষয়টা ইন্টারমিডিয়েট কিংবা ইউনিভার্সিটি লেভেলেই বেশি টের পাওয়া যায়। এই সময় গুলোতে একজন ছাত্রের মাসিক যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, অনেক পরিবারে, সে পরিমাণ টাকা মাসিক টোটাল বাজেটেরও উর্ধে। ফলে সে সময়টাতে পারিবারিক কষ্টটা একটু বেশিই উপলব্ধি হয়।

এবার মূল কথায় আসি। প্রথমেই, পরিচিত একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কষ্টের কথা দিয়ে শুরু করি, যিনি কিনা বাংলাদেশের একটি সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।

একবার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তাঁর মেসে দু'দিনের অতিথি হলাম। তিনিও একজন মধ্যম কিংবা বলা চলে অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিঁনি তাঁর কাছে আমার অবস্থান কালিন সময়ে আমার খুব খোঁজ-খবর রাখতেন ঠিকই কিন্তু তিঁনি নিজের ব্যাপারে ছিলেন খুবই উদাসীন। তিঁনি শুধু আমার জন্যই মেসে মিল দিতেন। খাবারের সময় হলে শুধু আমার জন্যই খাবার আনতেন। কিন্তু নিজে খেতেন না! জিজ্ঞেস করলে বাহানা ধরতেন। বলতেন, ক্ষিদে নেই। কখনো আবার বলতেন বাহিরে খেয়েছেন। কখনো বলতেন শরীর খারাপ। এভাবেই বাহানা ধরতেন। কিন্তু আমিও মেসে থাকা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তার এ সবগুলো ব্যাপারই আমার জানা ছিলো। তিনি আসলে কি করতে চাচ্ছেন! কিংবা কি জন্য খাচ্ছেন না!

এক রাতে আমিও বাহানা ধরলাম। বললাম, আপনি আমার সাথে না খেলে, আমিও খাবো না। তিনি আমাকে খাওয়ানোর জন্যই মূলত সম্মতি দিলেন। বললেন, ঠিক আছে, আমি খাবো। দুজনে একসাথে খাবার শুরু করলাম। আমি তার প্লেটে খাবার দিচ্ছি আর খুব মনোযোগ দিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করছি। খাবার শেষে এতোটুকু উপলব্ধি করেছি, আমি যা খেয়েছি তিঁনি তাঁর থেকে অন্তত ডাবল খাবার খেতে পেরেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তিঁনি কেন খেতে চাইতেন না? কারণ একটাই। আর তা হচ্ছে, মাস শেষে মেসে খাবারের বিল পরিশোধ করবার মতো পর্যাপ্ত টাকা তার কাছে নেই। 

এতো, বললাম মাত্র একজনের কথা। ইন্টারমিডিয়েট কিংবা অনার্স লেভেলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তিন বেলা খাবার ঠিকঠাক খেতে পারেন না। তিন বেলা খাবারের জায়গায় দিনে মাত্র একবেলা খেয়েই কোনরকম দিন কাটিয়ে দেন। কারো অবস্থা আরেকটু ভালো হলে, সে যেটা করে, সকালে নাস্তা না করেই দুপুরের খাবারটা ১১ থেকে ১২ টার মধ্যেই খেয়ে নেয় আর রাতে একবেলা খায়। অর্থাৎ মধ্যবৃত্ত কিংবা মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা দু’বেলা খাবার খেতে পারলেও তিন বেলা খাবার কখনোই তাদের কিসমতে হয় না!!!

আমি ইন্টারমিডিয়েটে (আলিম) থাকা কালিন এরকম কয়েকজনকেই দেখতাম, প্রচন্ড কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যক্তিত্ববোধের কারনে কখনোই কাউকে কিছু বুঝতে দিতেন না। খাবারের সময় হলে লোক চক্ষুর আড়ালে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসতেন। বুঝতে পারতাম অনেক কিছুই কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না তাদের জন্য। এখনো এ বিষয়গুলো স্মরণ হলে আৎকে উঠি। কিভাবে সম্ভব দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শিডিউল করে না খেয়ে থাকতেন তারা। যদিও পড়াশোনা শেষে খাবারের চাহিদা থাকে অসম্ভব রকমের, তারপরও না খেয়েই থাকতে হতো তাঁদের। আল্লাহ সে-সকল ভাইদের প্রতি রহম করুন। 

লক্ষণীয় যে, এ সমস্যা গুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকেই পোহাতে হয়। কারন হচ্ছে, সম্মানিত অভিভাবকগণ ধরেই নেন যে, সন্তানদের মধ্যে যাকে মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে তাকে আল্লাহ চালাবেন। এ পৃথিবীতে তার ওপর অভিভাবকের আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই। ফলে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেটাকে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয়। এটা আমি বানিয়ে বলছিনা। এটার বাস্তবতা আপনার চারপাশেই আছে।


প্রজম্মনিউজ২৪/রাজু

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ