৯৭এর পার্বত্য চুক্তি ও বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০২:০১:০৩

৯৭এর পার্বত্য চুক্তি ও বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন


৯৭পার্বত্য চুক্তি ও বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর পাহাড়ের ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে রক্তস্রোতের ইতি পরিলক্ষিত হয়।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ইতিহাস খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে,পাহাড়ে শান্তির নতুন বার্তা বয়ে আনে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে বিগত ২৫ বৎসর শুধুমাত্র চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার বেশ আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। 
যদিও এর মধ্যে সরকারকে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। 

এ পর্যন্ত চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন, ১৫টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নের পথে। এর মধ্যে তিন জেলার হস্তান্তরযোগ্য ৩৩টি বিভাগের মধ্যে ২৮টি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য সেবা শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দেশি এবং বিদেশি প্রায় ১২০ টি এনজিও সমূহে কার্যক্রম চলমান, পার্বত্য অঞ্চলে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ সড়ক স্থাপন ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে। 
১টি ব্রিগেডসহ ২৪০ টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, পার্বত্য অঞ্চলে মোতায়নরত সেনাবাহিনীকে ছয়টি স্থায়ী সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় ৪১ হাজার ৮৪৭ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২২ হাজার ৪১০ জনকে বিধবা ভাতা, ৭৩১১ জনকে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, এবং ৯৮১ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলের ৪৬ টি সমিতির মাধ্যমে ৫২ হাজার ১৭২ জন সদস্যের দারিদ্র্যতা বিমোচনের তথা জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে শিক্ষার হার ২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪.৬২ শতাংশ পৌঁছেছে। যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষার হার ৫৯.৮২ শতাংশ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার মাত্র ২৩ শতাংশ। 

এছাড়াও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩টি, হাসপাতাল ২৫টি, স্টেডিয়াম ৫টি, কলকারখানা ও ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পের সংখ্যা ১৯৩টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৮২ টিতে উন্নীত হয়েছে। 

সেইসাথে শিক্ষাক্ষেত্রে ৫% উপজাতীয় কোটা প্রদানের সুবাদে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে বহিঃবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
পর্যটন শিল্পকে ব্যাপক বিস্তারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫টি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পর্যটন স্পষ্ট নির্মাণ করা হয়েছে যার কারণে হাজার হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।


যদিও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বিশেষজ্ঞদের মতে  এই চুক্তি পার্বত্য জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯৯৭সালের বাস্তুসংস্থান ও বর্তমানের অবকাঠামো এক নয় বিধায় এই চুক্তিকে 

যুগোপযোগী করা আজ সময়ের দাবী। বর্তমান সময়ের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিবেচনা করলে চুক্তিটি একতরফা নেতৃত্ব এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন বাঙালি প্রতিনিধি ছাড়াই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
তার প্রেক্ষিতে এই চুক্তি সময়োপযোগীকরণের দাবী রাখে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি জেএসএস (সন্তু) লারমার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কর্তৃক যে সকল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তাতে করে পার্বত্য চুক্তি বৈধতা হারায় যার দরুন এই চুক্তি যুগোপযোগীকরণ করে পূর্ণ-বাস্তবায়ন পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের গণমানুষের দাবী।


প্র্রজন্মনিউজ২৪/এ আর 
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ