পৌষ্য কোটাটা একদমই হাস্যকর

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০৩:৫৭:০২ || পরিবর্তিত: ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০৩:৫৭:০২

পৌষ্য কোটাটা একদমই হাস্যকর

সোহাগ আলী রাবি প্রতিনিধিঃ ইতিহাস গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেছেন, পৌষ্য কোটাটা একদমই হাস্যকর! এটা কাদের মগজ থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে? এরা কি স্বাভাবিক মানুষ? এরা কেমন মানুষ, সেটা বলতে আমার রুচিতে বাধছে। এটা খুবই আজব এবং বিভৎস একটা বিষয়। কোটা বিষয়টাই একটা বিতর্কিত বিষয়, তারমধ্যে আবার পৌষ্য! অনৈতিক সুযোগ নেওয়ার জন্যই একটা গোষ্ঠী এমন কোটা তৈরী করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ড. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে 'রাবি ভর্তি পরীক্ষায় পৌষ্য কোটাঃ যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা' শীর্ষক এক গণ-সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশন গণ-সংলাপটির আয়োজন করে। 

এসময় গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী আরো বলেন, বাংলাদেশে কোথাও ভর্তি, চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি থাকার সম্পূর্ণ বিরোধী আমি। কোটা শব্দটাই একটা অযৌক্তিক শব্দ। প্রত্যেকে তার মেধার মাধ্যমে একটা জায়গায় আসবে। প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য কোটা থাকতে পারে। তবে, এই শ্রেণীর ব্যক্তিদেরও কোটার মাধ্যমে কোনো বড় পদে আসীন করা যৌক্তিক না। তাছাড়া, কোটাতে হলেও মেধাবী যাচাইয়ের ন্যূনতম একটা মানদন্ড থাকা উচিত। মেধাবী মানুষরাই রাষ্ট্র চালাতে পারে, মেধাহীন মানুষরা রাষ্ট্র চালাতে পারেনা। 

গণ-সংলাপে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, আমি মনে করি, যেকোনো কোটা থাকলেই অযোগ্য মানবসম্পদ তৈরীর একটা সুযোগ থাকে। কোটা বিষয়টা একটা শ্রেণীর প্রতি আরেকটা শ্রেণীর বিদ্বেষ তৈরী করে। অনগ্রসর কোনো গোষ্ঠী থাকলে, আলোচনা সাপেক্ষে অনগ্রসর গোষ্ঠী কোটা রাখা যেতে পারে। কোটার দরকার আছে, এমন কোনো সম্প্রদায় বাংলাদেশে আছে বলে আমার মনে হয়না।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই তো রোল মডেল, তাদের শিক্ষার্থীদের কেনো কোটায় ভর্তির সুযোগ থাকবে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও এগিয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের চেয়ে আমাদের কিছু দূর্গম অঞ্চলের অধিবাসীরা মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। খেলোয়াড় কোটাও থাকা উচিত না। জাতীয় খেলোয়াড় তৈরী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই বরং অনেক সময় জাতীয় খেলোয়াড় তৈরী হয়। আর মুক্তিযুদ্ধ কোটায় এখন নাতি-নাতনিরাও ভর্তি হচ্ছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কি মুক্তিযুদ্ধ কোটা চাইতেন? 

ছাত্র অধিকার বিষয়ে বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্লিপ্ততা বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রথম দায়িত্বই হলো, ছাত্র অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কথা বলা। বড় ছাত্র সংগঠনগুলো আজকাল ছাত্র অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেনা বললেই চলে। তারা বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যহানি করছে। ক্ষুদ্র আয়োজন হলেও পৌষ্য কোটা নিয়ে গণ-সংলাপ আয়োজন করায় ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।

মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসেও কোটা থাকার বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। বলা হচ্ছে, দেশ উন্নত হয়েছে, উন্নয়নের মহাসড়কে, মাথাপিছু আয় এতো। আমরা প্রশ্ন, দেশ যেহেতু উন্নয়নের মহাসড়কে, তাহলে কেনো কোটা পদ্ধতি থাকা লাগবে? তাও আবার পৌষ্য কোটা, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য! কোটা থাকতে পারে 'পিছিয়ে রাখা' জনগোষ্ঠীর সন্তানদের ক্ষেত্রে, যেমনঃ আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, চরাঞ্চলের মানুষ।

তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান আমলে বাঙালি মেধাবীদের বঞ্চিত করা হতো এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মেধাবীদের হত্যা করা হয়েছিলো। আর স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এখন আইনসঙ্গত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেধাবীদের সরিয়ে অযোগ্যদের প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।

গণ-সংলাপে আরো বক্তব্য প্রদান করেন, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর, রাবি শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ প্রমুখ।

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহাব্বত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের সংগঠক আশিকুল্লাহ মুহিব। গণ-সংলাপের শুরুতেই একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন আশিকুল্লাহ মুহিব। গণসংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা উপ-কমিটির সভায় পাস মার্ক কমিয়ে অকৃতকার্য হওয়া ৭১ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংরক্ষিত পোষ্য (ওয়ার্ড) কোটা, খেলোয়াড় কোটা এবং বিশেষ বিবেচনায় তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিরা বিভিন্ন জাশগার চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

এরপরে, গত ১৩ ও ২০ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিল এবং ফেল করেও ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ গণ-সংলাপের আয়োজন করে তারা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এ কে 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ