বেগমগঞ্জ ইউএনও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, অবশেষে বদলি

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর, ২০২২ ১০:১৯:২৬

বেগমগঞ্জ ইউএনও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, অবশেষে বদলি

গিয়াস উদ্দীন রনি, নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত ও অন্যত্র পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তার এমন কর্মকান্ডে বিব্রত খোঁদ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলও। ইউএনওর এসব দুর্নীতি, অনিয়মের তদন্ত ও আয়ের উৎস খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছে স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইউএনও’র নানা অনৈতিক কর্মকান্ড এখন ‘টক অব দ্য নোয়াখালী’তে পরিণত হয়েছে। 

শনিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ইউএনও শামসুন নাহারের বদলির খবরে স্থানীয়রা মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাত্র দুই মাসেই ইউএনও শামছুন নাহার বেগমগঞ্জ থেকে অর্ধ কোটি টাকা পাচার করেছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পিআইও অফিসের ওয়ান ব্যাংক চৌমুহনীশাখার একাউন্ট থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে প্রথমে ১৫ লাখ পরে আরও তিন লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ ও ৩০ অক্টোবর আরও ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন অফিসের স্টাফের মাধ্যমে। এসব টাকা অফিসের এক স্টাফের আইডিকার্ড ব্যবহার করে ওয়ান ব্যাংক চৌমুহনীশাখা থেকে উত্তোলন করে যমুনা ব্যাংক চৌমুহনী শাখার মাধ্যমে কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 

টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে লাঙ্গলকোর্টের আধুনিক ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার (একাউন্ড নং-১১৯-০২১০০০৩২০৬) যমুনা ব্যাংকের নাঙ্গলকোর্ট শাখা ও পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতাল (একাউন্ট নং-২০৫০৪৪৮০১০০০০০৩০৬) ইসলামী ব্যাংকের নাঙ্গলকোর্ট শাখা ব্যবহার করা হচ্ছে। শামছুন নাহার গত দুই বছরে বেগমগঞ্জ থেকে কয়েক কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাচারকৃত এসব টাকা দিয়ে ইউএনও শামছুন নাহার নিজের বাবার নামে ঢাকার মিরপুর-১৪ এ বাড়ি করছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে আনসার সদস্যদের জন্য ভবননির্মাণের জন্য ২১ লাখ টাকা বরাদ্ধ হলেও ভবনের ছাদ, পিসিরুম ও অস্ত্রগার নির্মাণ না করে নাম মাত্র ভবন করে টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। অফিসের বই কেনার নামে, এডিবি, টিআর, কাবিটা প্রকল্প ও এক পার্সেন্টের টাকা ইউনিয়ন পরিষদের নামে সুষম বণ্টন না করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শামছুন নাহারের বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের জন্য মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, ইট ভাটার মালিকদের থেকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে ইট ও টাকা আদায়, উপজেলা পরিষদ ভবনের পূর্ব পাশে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ভবন নির্মাণে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে টাকা হাতিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টের নামে মাত্র একটি খেলার আয়োজন করে মোটা অংকের টাকা, বিভিন্ন দিবসের নামে টাকা আদায় ও খরচের নামেও অর্থ আত্মসাৎ করতে পিছপা হননি।

বেগমগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়াসংস্থার কোষাধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন জন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ ৯-১০ বছর কমিটিতে আছি। আমি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কিছুই জানিনা। কোন মিটিংও হয়না। কত টাকা সংস্থার জন্য বরাদ্দ হয় বা খরচ হয় কিছুই আমাদের জানানো হয়না।

জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুল বাশার স্বপন জানান, আমরা এমনিতেই উপজেলার যেকোন বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকি। কিন্তু চাপ প্রয়োগ করে কেউ কিছু করতে চাইলে তা সহ্য করার মতো না। তিনি নানা অজুহাতে আমাদের ইট ভাটা মালিকদের কাছ থেকে ইট আদায় করেন। না দিলে হুমকি দেন। 

বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আরিফুর রহমান মাহমুদ আরিফ জানান, আমরা ইউএনও শামছুন নাহারের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তার রোষালনে পড়েছি। আমার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ মিটিংয়ে রেজুলেশন করা হয়েছে। ইউএনও’র  দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত করতে তিনি নেপথ্যে কাজ করছেন। যে-ই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে, সেই রোষানলে পড়েছে। 

উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি আবেদ সাইফুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন জানান, বেগমগঞ্জের ইতিহাসে এমন ইউএনও আমরা দেখিনি। তিনি নিজে সব কিছু করতে চান। টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না। আমাদের চেয়ারম্যানদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেন। যা আমরা ডিসি মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

ইউএনও শামছুন নাহার বলেন, আমার ডিপার্টমেন্ট আছে উনারা দেখবেন। মিডিয়ার কাছে আমি কিছু বলতে বাধ্য নই। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের মন-মানসিকতার লোকেরা আমার বিরুদ্ধে সাপ্তহিক অপরাধ বিচিত্রাসহ ফেসবুকে ভাইরাল করছে ও অপ্রপচার চালাচ্ছে, আমি এর তীব্রনিন্দা জানাচ্ছি।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। ইতোমধ্যে সে বদলি হয়ে গেছে।’ বদলির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে এখানে অনেক দিন কাজ করেছে এ জন্য বদলি করা হয়েছে।’


প্রজন্মনিউজ২৪/রনি/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ