প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ১০:২৭:৪৭
মো. ইমরান হোসাইন, কুষ্টিয়া
ঋতুবৈচিত্রের আবহে প্রকৃতির অনন্য সাজে সজ্জিত হয় বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তন যেন এদেশকে সাজিয়ে তোলে নানান রঙে বিচিত্র সাজে। শরতের পরেই শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয় হেমন্ত। এরপর আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়না শীতের জন্য। শীত আসলেই যেন প্রকৃতিতে নেমে আসে জড়তা, রিক্ততা, শুষ্কতা। নেতিয়ে পড়ে মানুষসহ সকল প্রাণীর কর্মচাঞ্চল্য।
শীতের কম্পনে নুয়ে পড়ে সকল প্রাণীকুল। কনকনে শীত শিশু ও বৃদ্ধদের একটু বেশিই কাবু করে তোলে। বন্যপ্রাণীগুলোর জীবন যেন স্থির বনে যায়। পাখিদের হাজার হাজার মাইল পরিভ্রমণ করতে হয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। এরপরও শীতের প্রকপ সহ্য করতে না পেরে জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করে হাজার হাজার প্রাণী।
তবে শীত মানেই যে জড়তা তা কিন্তু না। শীত আমাদের মাঝে আগমন ঘটায় অনন্য উচ্ছ্বাস। এই উচ্ছ্বাস উপলব্ধি করে অনায়াসে কাব্য রচনা করেছেন প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা হাজারো কবি। আবার হাজারো সাহিত্যিক এই শীতকেই তাঁদের গল্পের উপজীব্য করেছেন।
ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের সকাল প্রকৃতিকে স্থির করে দেয়। ব্যাঘাত ঘটায় কর্মে। কৃষক ক্ষেতে কাজ করতে পারে না। পরিবহনের চালকগণকে বেগ পেতে হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে। পথিক দূর থেকে পথ দেখতে পারে না। জেলেরা সমুদ্রের গভীরে দিশা হারিয়ে ফেলে। পশুপাখিগুলো যেন নির্জীব হয়ে যায়। গ্রামের বাচ্চারা খড়কুটো আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখে আগুন পোহাবে বলে। ঘন কুয়াশায় ঢেকে রাখা প্রকৃতির অন্ধকারের মধ্যেও দূর থেকে চোখে পড়ে আগুনে তাপ দাহনের দৃশ্য।
টুপটুপ করে ঝড়া শিশিরে ভিজে যায় প্রকৃতি। ঝমঝম শব্দে গাছ থেকে শিশির জমা পানি পড়তে শোনা যায়। খুব সকালে শিশির ভেজা ফসলগুলো সংগ্রহ করতে বেড়িয়ে পড়ে কৃষক। ঘাসের ডগায় ফোঁটায় ফোঁটায় মিশে থাকা শিশিরে সূর্যের রোদ্দুর আলোয় সৃষ্টি হওয়া আলোকচ্ছটা যেন জ্বলজ্বল করে। সেটা যে কি মনমাতানো দৃশ্য! তা আর বলে বোঝানো যাবে না।
শীত আসলেই দৃশ্যমান হতে দেখা যায় সরিষা ক্ষেতে ফোঁটা হলদে ফুলের সমারোহ। মনে হয় যেন প্রকৃতি হলুদ চাদরে আবৃত। মনোরম এ দৃশ্য দেখতে কৃষকের মাঠে বিগ্বিদিক থেকে ছুটি আসে প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ওহ শীতের মূল আমেজের কথা তো বলায় হলো না! শীতকালকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে খেজুরের রস ও খেজুর রস থেকে তৈরিকৃত বাহারি রকমের সব পিঠাপুলি। কনকনে শীতের খুব সকালে খেজুর রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। হয়তো এমন কোন বাঙালি পাওয়া যাবে না যারা খেজুর রস খেতে পছন্দ করে না। কনকনে শীতের আমেজটাকে বাড়িয়ে দেয় মা-খালাদের তৈরি হরেক রকমের পিঠা-পায়েস।
গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পিঠা উৎসব হয়। গ্রাম থেকে নগর সকল স্থানের আত্মীয়রা ছুটে আসে পিঠা উৎসবে যোগ দিতে। এই সময়টা যেন আত্মীয়স্বজনদের মিলনমেলার সময়। এর মাঝেই যেন মিশে আছে আমাদের জীবন।
কিন্তু এই শীতের সকাল কি সকলের কাছেই আনন্দের নাকি এমন লোকও আছে যারা চায় না শীতকাল প্রকৃতির বুকে আসুক। কথা যখন উঠলো তখন একটু বিশ্লেষণ করা যাক, শীতের সকাল আমাদের কাছে আনন্দঘন হলেও অনেকের কাছে আবার এটা অভিশাপ। আমরা কি কখনো রাস্তায় বসবাস করা উদ্বাস্তু জনবিচ্ছিন্ন মানুষদের শীতের সকাল কেমন হতে পারে সেটা চিন্তা করেছি। উত্তরাঞ্চলের জীর্ণ-শীর্ণ, বস্ত্রের অভাবে কাতড়ানো জনমানবের শীতের সকাল কি আমরা কখনো উপলব্ধি করেছি?
যদি উপলব্ধি করে থাকি তাহলে দেখবো শীতের সকাল তাদের জন্য মোটেও আনন্দ বয়ে আনে না। শৈত্য প্রবাহের আবহে ঘনকুয়াশাচ্ছন্ন সকালগুলো তো রীতিমতো অভিশাপই বয়ে আনে। শীত নিবারণের জন্য এক টুকরো বস্ত্র নেই। ঘুমানোর জন্য নেই নিরাপদ বাসস্থান, সেখানে লেপ, কাঁথা-কম্বলের চিন্তা করাটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা দু’মুঠো অন্ন জোগাতে পারে না তাদের কাছে আবার শীতের পিঠা! এ যেন ঘোর কল্পনা।
সারারাত শীতের প্রকোপে ঘুমাতে পারে না। সকালের সূর্যের একটুখানি রোদের অপেক্ষা করে। কখন উঠবে রবি? কখন ঠান্ডা বনে যাওয়া হাত-পাগুলো একটুখানি রোদের স্পর্শে আরাম পাবে? এই চিন্তা করতে করতেই তাদের রাত পোহায়। শীতের কোন আনন্দই যেন তাদের অংশীদার করতে পারে না। এজন্যই তো কেউ কেউ অপেক্ষা করে কবে শীতের আগমন ঘটবে আবার কেউ কেউ চায় শীত যেন প্রকৃতিতে কখনোই না আসে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ
ভোট দিতে গিয়ে শুনলেন তিনি মারা গেছেন, নিরাশ হয়েই ফিরলেন বৃদ্ধা
খিলগাঁওয়ে পরিত্যক্ত ঘরে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ, পুলিশের ধারণা হত্যা
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, এলাকাবাসীর পিটুনিতে নিহত ২
ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা
সেভ দ্য রোডের ১৫ দিনব্যাপী সচেতনতা ক্যাম্পেইন সমাপ্ত
খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিল : শেখ হাসিনা
সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী আর নেই
ঢাকায় আসতে না পেরে দুবাই-শারজাহর ১০ ফ্লাইট বাতিল