শীতে ধুলাবালি থেকে ঢাকাবাসীকে বাঁচাবে কে

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ১০:২৯:৩১

শীতে ধুলাবালি থেকে ঢাকাবাসীকে বাঁচাবে কে

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত পাভেল রহমানের (২৭) দিন শুরু হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় ভেসে বেড়ানো ধুলায় শ্বাস নিয়ে। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সৃষ্ট ধুলায় মাস্ক পরেও নিস্তার নেই। এ রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন পাভেলের মতো অনেককে নাক-মুখ ঢেকে যেতে হয় 

শুধু কারওয়ান বাজার এলাকাই নয়, ঢাকার অনেক জায়গাতেই রয়েছে এমন দুরবস্থা। রাজধানীতে এমন ধুলাবালি তথা বায়ুদূষণ সামাল দিতে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে নানামুখী দায়বদ্ধতা। অথচ তাদের কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে গোটা নগরীর পরিবেশই মারাত্মক ঝুঁকিতে।

সম্প্রতি পরিবেশ সংস্থাগুলোর জরিপে দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে প্রতিদিন শ্বাস নিলে ২৬টি সিগারেট খাওয়ার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। এ থেকে বলা বাহুল্য হবে না যে, ঢাকার বাসিন্দারা ধুলার শহরেই বাস করে আসছে বিগত কয়েক দশক ধরে।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান সময় সংবাদকে বলেন, ধুলাবালি থাকবে ও ধুলাবালি থেকে আমরা বাঁচবো এটা আসলে সমাধান না। ধুলাবালি যেন না হয় সে বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ধুলাবালি যাতে কমে বা একেবারে না থাকে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধুলাবালির উৎসস্থল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা নাহলে ধুলাবালি বাতাসে মিশে যাবে।

খেয়াল করলে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। বায়ুর দুটি স্তর থাকে, শীতল ও উষ্ণ। শীতল স্তরের ঘনত্ব বেশি থাকে; ফলে তা ভারি হয় এবং নিচে থাকে এবং এটি ধুলাবালি আটকায়। শীতকালে ভেন্টিলেশন গরমকাল থেকে কম হয়। এ সময় যেহেতু ঘরের দরজা-জানালা প্রায়শই বন্ধ থাকে তাই বায়ু প্রবাহ ঠিকমতো হয় না, যার কারণে ধুলাবালিযুক্ত বাতাসও বেশি স্থান পরিবর্তন করে না। অন্যদিকে বায়ুর আর্দ্রতা কম থাকে বলে শীতল বায়ুতে জলীয় বাষ্প শুকিয়ে যায়; তাই এর মধ্যে থাকা ধুলাবালির কণা আর্দ্রতা হারিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম থাকায় বাতাস পরিবেশ থেকে পানি শোষণ করে। তাই এ সময় পানির বাষ্পায়ন বেশি হয়। যেমন শীতকালে ভেজা কাপড় শুকাতে দিলে পানি তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়ে কাপড়কে শুকিয়ে ফেলে। তো এভাবে বেশি বেশি পানি বাষ্পায়নের ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায় এবং ধুলাবালি বেড়ে পায়। তাইতো শীতকালে ধুলাবালি বেশি দেখা যায়।

এ ব্যাপারে শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ধুলাবালি যে শুধু শীতে বাড়ে তা কিন্তু নয়; এটি থাকে বর্ষাকালেও। সে সময় ধুলাবালি বৃষ্টির কারণে বৃষ্টির সাথে মিশে মাটিতে নেমে আসে। এজন্য আমরা এটা দেখতে পাই না বা উপলব্ধি করতে পারি না। কিন্তু শীতকালে যেহেতু বৃষ্টি হয় না তাই ধুলাবালি বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং ভারি হয়ে যায় বাতাস। এতে করে আলো ঠিকমতো ঢুকতে পারে না। ধোঁয়াশার মতো সৃষ্টি হয়। শীতকালে খেয়াল করবেন সন্ধ্যা আগে নেমে আসে। এর কারণ বাতাসের ধুলা অর্থাৎ বায়ু দূষণ।

বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণের প্রধানতম একটি কারণ ঢাকা শহরের চারপাশের নির্মাণাধীন নানা প্রকল্প। এছাড়া শিল্পকারখানা ও যানবাহন থেকেও নির্গত ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। আগের থেকে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ ও ধুলাবালির পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মেহেদী আহসান।

সমাধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব জায়গা থেকে ধুলাবালি সৃষ্টি হচ্ছে, সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে করেই ঢাকা শহর ধুলাবালি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। শহর যদি পর্যাপ্ত খোলামেলা থাকে, প্রচুর গাছপালা থাকে তাহলেও কিন্তু ধুলাবালি কমানো সম্ভব৷ আমরা যদি ১০-১৫ বছরের একটা প্ল্যান নিয়ে কাজ করে পরিবর্তনগুলো আনতে পদক্ষেপ নিই, সেভাবে কর্মসূচি নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি তাহলে আমাদের পক্ষেও সম্ভব। তবে এতে জনগণের সম্পৃক্ততাও দরকার।

ধুলাবালি রোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে; সে কারণে ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে। তবে যারা উন্নয়ন কাজ করছেন, তাদের চিঠি দিয়েছি। তাদের বলেছি, তারা যাতে এসব কিছু ঢেকে রাখে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। গাড়ির ধোঁয়া, কালো ধোঁয়া বন্ধে আমরা চেষ্টা করছি।’

পানি ছিটিয়ে ধুলাবালি রোধের ব্যাপারে মেহেদী আহসান বলেন, এটি কার্যকর কোনো উদ্যোগ না; বরং এটি আসলে লোক দেখানো উদ্যোগ বলেই মনে করি। কেননা, মূল সমস্যা যদি সামগ্রিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া না হয়, তাহলে লাভ নেই। আপনি প্রতিদিন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা জায়গায় পানি ছিটালেন; কিন্তু ধুলা আসছে কোথা থেকে তা যদি না জানেন তাহলে তো সেই পানি ছিটানোতে ধুলা কমবে না। আপনি মূল জায়গার ধুলা না সরিয়ে এক জায়গায় পানি ছিটালে সেখানে কিছুক্ষণ পর আবারও ধুলা জমবে। এটা কোনো কার্যকর সমাধান নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এর আগেও বায়ুমানের সূচকে বাংলাদেশ বিশেষত ঢাকা শহর কয়েক দফা সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে।

এদিকে প্রতিদিনের ধুলাবালিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ভুগছেন নানা রকমের রোগ-ব্যাধিতে। যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এরকম চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হলে চুলকানি বা অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার বর্তমান অবস্থান পঞ্চম। একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ডব্লিউএইচওর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এখন থেকেই সচেতন না হলে দৃশ্যমান এ ধুলাবালিই হতে পারে মৃত্যুসহ নানা রকমের শারীরিক জটিলতার প্রধান কারণ - এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এ কে

এ সম্পর্কিত খবর

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর

হাবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

চলতি বছর পবিত্র হজ্জ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ

বশেমুরবিপ্রবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ