প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৫৯:৩৯
চলতি বছর অক্টোবরের ৯ তারিখ দিনটি বাঙালীদের জন্য বছরের অন্য দিনের তুলনায় অনন্য। কারণ, এ দিন বাংলাদেশে একইসাথে তিনটি ধর্মের মানুষজন তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেছে। মুসলিমদের পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীপূজা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা একইসাথে পালিত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে এসব উৎসব উদযাপিত হয়েছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মের উৎসব যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য, আড়ম্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে পালন করেছে।
দিন কয়েক আগেই বাঙালী হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা পালিত হয়েছে। এবছর সারাদেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হয়েছে। মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী, মা দুর্গার আগমন থেকে বিসর্জনের পুরোটা সময়জুড়েই শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের তাল আর খোল-করতালে মন্ডপগুলো মুখরিত হয়েছিল।
‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। দুর্গোৎসব ঘিরে মানুষের মনে যে চাপা উত্তেজনা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়েছিলো তার সবটাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কোথাও কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এবারের পূজায় ঘটেনি। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে নিরাপত্তা বজায় রেখেছে।
বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সহাবস্থানের ইতিহাস দীর্ঘকালের। আবহমান কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সংমিশ্রনে সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটেছে। বাঙালির শিল্প-সাহিত্য থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাসে এ বিনিময়ের প্রমাণ মেলে। ব্রিটিশ শাসনের খড়গমুক্ত হতে সব ধর্মের মানুষই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। সিপাহী বিদ্রোহ থেকে গান্ধীর সত্যাগ্রহ, এ অঞ্চলের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে সেগুলো ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।
এখানকার মানুষের সম্প্রীতির বন্ধন ছিন্ন করতে ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দূর্বল করে দিয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয়কে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড় করায় ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ। শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় টানাপোড়েন ’৪৭ সালের দেশভাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া তৎকালীন পাকিস্তানকে মেনে নেয়নি এদেশের সাধারণ মানুষ। ফলে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের একতাবদ্ধ আন্দোলন ও যুদ্ধের ফসল হিসেবে স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। ধর্মনিরপেক্ষতা হয়ে উঠেছে সংবিধানের চার মূলনীতির একটি।
হিন্দু-মুসলমানের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ। এছাড়াও ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সকল ধর্ম ও জাতিসত্ত্বার মানুষ পাশাপাশি থেকে নিজ নিজ আচার-আচরণ পালনের মধ্য দিয়ে একে অপরের মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে আসছে। তবে এসবের মধ্যেও মাঝে মাঝেই কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের কানে আসে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেগুলো আমরা দেখতে পাই।
ভৌগলিক ও ধর্মীয়ভাবে সংযুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এক ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়ে গেছে। এসব দেশের একটিতে কোনো ধরনের ধর্মীয় টানাপোড়েনের সৃষ্টি হলে তার বিপরীতে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও পরিবর্তন দেখা যায়। গত কয়েক বছরে এশিয়াতে এ ধরনের বেশকিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আফগানিস্তানে কট্টরপন্থী তালেবানের ক্ষমতা দখল, মায়ানমারে জাতিগত নিধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে বিতাড়ন, ভারতের এনআরসি বিল পাশের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করার আয়োজন এবং চীনের উইঘুরে মুসলিম নির্যাতনের মত ঘটনাগুলো অতি সাম্প্রতিক কালের। এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় নিপীড়নের আয়োজন চললেও বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ কোনো ধরণের বৈষম্য ছাড়াই পাশাপাশি বসবাস করে চলেছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক সমানাধিকার ও সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি, সকল ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ঘটছে। ভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সরকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদ্রি এবং গারো পাঁচ ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব-আয়োজনের পাশাপাশি পহেলা বৈশাখের মত উৎসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক উৎসব বৈসালি, সাংগ্রাই, বিজু প্রভৃতিও এদেশের মানুষের কাছে এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের সহাবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানারকম ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো এখন সহজ হয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষও এখন সচেতন হচ্ছে। প্রশাসন, মিডিয়া ও মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে এ ধরণের বিভাজন আগামী দিনে আর সম্ভব হবে না সেই প্রত্যাশাই আমাদের সকলের।
লেখক: খালেদ সাইফুল্লাহ
প্রজন্মনিউজ২৪/ইজা
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের কর্ণধার নূর মোহাম্মদ আবু তাহের গ্রেপ্তার
বাংলা কলেজের ছাত্র না হয়েও তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি
যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছে নতুনধারা
তালাকের হার গ্রামে বেশি, বড় কারণ পরকীয়া
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি দূতের পরিচয়পত্র পেশ
৮ বছর পর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত
ভুল চিকিৎসায় পা হারালো শিক্ষার্থী
ঈদে ঢাকা ছাড়বে দেড় কোটির বেশি মানুষ, ছুটি ২ দিন বাড়ানোর দাবি