জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি, বিবাদীর উঠানে বৃদ্ধার লাশ

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:১৫:০৫

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি, বিবাদীর উঠানে বৃদ্ধার লাশ

রংপুর প্রতিনিধি-মু.নাজমুল হাসান: রংপুরের মিঠাপুকুরে ০৯ নং-ময়েনপুর ইউনিয়নের শুকরের হাট পোড়া চাকলা গ্রামে জায়গা জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের এবং শেষমেষ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মিঠাপুকুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর বিবাদীর বাড়ির সামনের উঠানে পড়ে ছিলো বৃদ্ধ আফজাল হোসেন (৬৫) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ। এমনকি সর্বশেষ একটি মারামারির অভিযোগ এখনো থানায় আপোষ মিমাংসার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নিহতের স্বজন ও স্হানীয়রা জানান, নিহতের  চাচাত ভাই সেকেন্দারের বসত ভিটায় পৈতৃকসূত্রে চার শতাংশ জায়গা পেতেন আফজাল হোসেন। যেহেতু সেকেন্দারের উক্ত জায়গায় বাড়ি ছিলো তাই সেকেন্দার আফজালের বাড়ি সংলগ্ন ৪ শতাংশ জমির পরিবর্তে ছয় শতাংশ নিচু জমি প্রদান করেন। উভয়ের সম্মতিক্রমে একটি এওয়াজ দলিল সম্পাদনা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু চৌতুর সেকেন্দার আফজালের কাছ থেকে এওয়াজ দলিল সম্পাদনার পূর্বে জমিতে আধাপাকা টিনসেডের বাড়ি নির্মান করার পর আফজালকে দেয়া তার ছয় শতাংশ জায়গা দখলে বাঁধা প্রদান করেন।

আফজাল তার সন্তানদের বসতবাড়ি নির্মানের জন্য ইট ক্রয় করে উল্লেখিত জায়গায় পাকাঘর নির্মান করতে গেলে সেকেন্দার জানায়,আফজালকে চার শতাংশ জমির পরিবর্তে চার শতাংশ জমি নিতে হবে। চার শতাংশ জমি নিবেনা মর্মে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রথমে গ্রাম সার্লিশ এবং পরে জমি বুঝে নিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আফজাল। এরপর জমি দখল নিতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারি সংঘটিত হয়। এমনকি মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন আফজাল ও তার স্ত্রী।

১ সেপ্টেম্বর আফজাল জানতে পারেন, তাকে দেয়া ছয় শতাংশ জমির মধ্যে সেকেন্দার  পাশ্ববর্তী মোক্তার হোসেনের কাছে এক শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন এবং আরো পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রির পায়তারা চলছে,তখন আফজাল রেগে গিয়ে উক্ত জমি দখল নিতে গেলে সেকেন্দার গং-তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় আফজাল বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যাহা মিঠাপুকুর থানা পুলিশের কাছে এখনো তদন্তাধীন।

আফজালকে মারার কথা শুনে আফজালের দুই ছেলে তহসিন এবং লাল মিয়া ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে মারামারির অভিযোগের বিষয়ে মিমাংসার চেষ্টা চলাকালীন তারা জানতে পারেন,ঘটনার দিন ৬ সেপ্টেম্বর তার বাবা আফজাল হোসেন নিখোঁজ। তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে আফজালকে না পাওয়ার পর ৭, সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় জনৈক এক ব্যক্তির মুঠোফোনে তহসিন জানতে পারেন, আফজাল জমিসংক্রান্ত অভিযোগের বিবাদী সাজুর বাড়ির গেইটে লাথি মারছে। সাজু ঐ ব্যক্তিকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আফজালের বড় ছেলেকে বিষয়টি জানাতে বলেন।

আফজালের বড় ছেলে তহসিন তার বাবা আফজালকে খুঁজতে সাজুর বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে আশপাশে টর্চলাইট মেরে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের নামাজের পর আনুমানিক সকাল পাঁচ ঘটিকার সময় মক্তব পড়ুয়া ছোট বাচ্চারা মক্তব যাওয়ার পথে দেখতে পান আফজালের নিথর দেহ পড়ে আছে সেকেন্দারের উঠানে। ছোট বাচ্চারা চিৎকার করে তহসিনকে ডাক দিলে তিনিসহ আশেপাশের লোকজন দেখেন তার বাবা আফজাল মারা গিয়েছেন।

সংবাদ পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আফজালের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে, লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশ বলছে শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন না পাওয়ায় তারা লাশ মর্গে পাঠিয়েছে এবং এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মৃত-আফজালের ছেলে তহসিন জানান, আমার বাবাকে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে সেকেন্দার, লিটন আর সাজু গং,হত্যা করে লাশ তাদের উঠানে রেখেছিলো। সূর্যের আলো পড়ায় তারা লাশ গুম করতে পারেনি। তিনি দাবি করেন, আফজালের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এবং মৃতের আন্তঃকোষ ফুলা ছিলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যাকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কৌশলে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। তিনি তার বাবার হত্যার সঠিক বিচার চান। তাহসিন আক্ষেপ করে জিডি'র একটি কপি দেখিয়ে বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি জিডি করেছিলেন, কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্হা না নেওয়ায় আমার বাবাকে খুন হতে হলো।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সেকেন্দার এবং সাজুর বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তারা পলাতক থাকায় তাদের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাদের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া তার নাতি এবং সেকেন্দারের ছেলে লিটন রাতে তাদের বাড়িতে লাথি মারার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং তারাও দাবি করেন, আফজালকে কেউ না কেউ হত্যা করে লাশ তাদের উঠানে রেখেছে। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। যদিও এলাকাবাসী বলছে লাশ যেভাবে শুয়ে রাখা ছিলো, এবং লাশ রাখার স্হান, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পাঞ্জাবি-লুঙ্গি দেখে বোঝা যায় নিঃসন্দেহে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আফজালকে অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে শুয়ে রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছে নতুনধারা

রোজাদারের জন্য হাদিসে যেসব সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে

মহাকাশে ডিনার করতে চান? খরচ কত জেনে নিন

ফরিদপুরে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয় মহান স্বাধীনতা দিবস

শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২৬ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইজিপির শ্রদ্ধা

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বিজয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ

নেত্রকোনা ছাত্রকল্যাণ জেলা সমিতির নেতৃত্বে রাকিব-পলাশ

খুলনায় বিএনপির মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

সাতমাসে আমদানি কমেছে ১৮.৩০%

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ