মৃত্যুকে ভয় নয়- বারবার স্মরণ করতে হবে

প্রকাশিত: ২৫ অগাস্ট, ২০২২ ১২:২২:৫১

মৃত্যুকে ভয় নয়- বারবার স্মরণ করতে হবে

অনলাইন ডেস্ক: মানুষ অগোছালো কোনো কিছুই পছন্দ করে না। কারণ এটি মানুষের স্বভাববহির্ভূত। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনটা যেহেতু বেশ অগোছালো তাই সুরম্য ও সুবিস্তর গোছালো পৃথিবী রেখে মানুষ কিছুতেই মৃত্যুপরবর্তী জীবনে পাড়ি জমাতে চায় না। কিন্তু মহান আল্লাহ মানুষের হায়াতের খাতায় মৃত্যুকে অপরিহার্য বাস্তবতা হিসেবে লিখে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেক আত্মাই মরণের স্বাদ আস্বাদন করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন করবে’ (সূরা আনকাবুত-৫৭)।

মৃত্যু যথাসময়ে আসবেই : মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী জীবনই আসল জীবন। এ পার্থিব জীবন শুধু ক্ষণিকের জন্য। অথচ এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের পেছনে আমরা গোটা জিন্দেগি বরবাদ করি। আমরা ভুলে যাই এই যে জগৎ সংসার ও তার দৌড়ঝাঁপ এবং কর্মময় জীবনের সব ব্যস্ততা সব কিছুই স্বস্থানে থাকবে, থাকব না শুধু আমরা। আমরা ভুলে যাই যেখানেই থাকি না কেন মৃত্যু আমাদের গ্রাস করবেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরে অবস্থান করো তবুও’ (সূরা নিসা-৭৮)।

মৃত্যু অতি নিকটে : মৃত্যু মানবজীবনের সুনিশ্চিত অধ্যায় হলেও মৃত্যুর সময়টা অনিশ্চিত। যেকোনো সময় মৃত্যু এসে মানুষের জীবনের সমস্ত সুখ ও সাধনা এবং সার্বিক ব্যস্ততা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বলতেন, ‘যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন সকালের জন্য অপেক্ষা করো না, আর যখন তোমার সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও আর তোমার মৃত্যুর জন্য জীবিতাবস্থায় পাথেয় জোগাড় করে নাও’ (বুখারি-৬৪১৬)।

আল্লাহ কেন মৃত্যুকে সৃষ্টি করলেন : মানবকুলের জন্ম ও মৃত্যুর অব্যাহত ধারাটি মহান আল্লাহর সৃষ্টিগত একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের পেছনে আল্লাহর একটি সুবিশাল উদ্দেশ্য রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে শুদ্ধ করে সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ মনোরথ হয়’ (সূরা আশ শামস : ৮-১০)। মানবজাতিকে সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর যেমনি রয়েছে একটি মহান উদ্দেশ্য তেমনি মানবজাতির মৃত্যুদানের পেছনেও রয়েছে এক মহান উদ্দেশ্য। আর সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে এ পার্থিব জগতে কারা কর্মে সৎ ও সুন্দর হয় এবং কারা কর্মে দুষ্ট ও অসুন্দর হয় তা পর্যবেক্ষণ করা। তাই মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম’ (সূরা মূলক-২)।

মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে : জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালই জীবন। তাই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মুমিন মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। মহানবী সা: বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচ জিনিসের আগে গণিমত (সম্পদ) মনে করো- ১. যৌবনকে বার্ধক্যের আগে; ২. সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে; ৩. সচ্ছলতাকে অভাবের আগে; ৪. অবসরকে ব্যস্ততার আগে ও ৫. জীবনকে মৃত্যু আসার আগে’ (মুস্তাদরাকে হাকিম-৭৮৪৬)।

মরণকে ভয় নয়, স্মরণ করতে হবে : ইসলাম মৃত্যুকে ভয় না করে মৃত্যুর স্মরণ ও পরবর্তী জীবনের পরিণতি চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সেসব মানুষের নিন্দা করেছে যারা মনে করে মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, ‘তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান’ (ইবনে মাজাহ-৪২৫৯)।


লেখক : শিক্ষার্থী, দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা, ডেমরা, ঢাকা


প্রজন্মনিউজ২৪/ইজা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ