রাবির হলে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২০ অগাস্ট, ২০২২ ০৯:১৫:২৪

রাবির হলে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রকে আবাসিক হলে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এবং মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।

এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ই আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা ভাষ্কর সাহা প্রথম তাকে ফোন দিয়ে দেখা করার কথা বলে। দেখা করতে গেলে সেসময় সে চাঁদা দাবি করে। এরপর থেকে সে প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে মানসিকভাবে টর্চার করে আসছিলো ভুক্তভোগীকে। অর্থ দিতে অক্ষম হওয়ায় ভুক্তভোগীকে শুক্রবার বিকাল ৩টায় রুমে ডেকে নিয়ে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে আনুমানিক ২০ হাজার টাকা কেড়ে নেয় এবং আরো ৬ হাজার টাকা দাবি করে ভাস্কর ও তার দুই সহযোগী।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানোর কথা বললে রড এবং স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়কভাবে মারধর করে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সে অবস্থা হবে বলে হুমকি দেয় ভাস্কর। রাত ১১টার মধ্যে আরো ৬ হাজার টাকা না দিলে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেয় সে।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সামছুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার খুব অসহায়। সেজন্য হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারকে হেল্প করার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। চা খাওয়ার কথা বলে ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা চাঁদা দাবি করেন এবং আমি ৫ হাজার টাকা দিতেও চাই। কিন্তু ৫ হাজার টাকায় হবে না বলে রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে এবং সাথে থাকা প্রায় ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।  টাকাগুলো মোবাইল সার্ভিসিংয়ের জন্য বিভিন্ন জনের থেকে অ্যাডভান্স নেওয়া। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বলেন, কারো ইন্ধনে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি কারো নিকট চাঁদা দাবি করিনি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করিনি। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এ ছাত্রলীগ নেতা।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পত্র পেয়েছি। এগুলো আসলে শুধু অগ্রহণযোগ্যই না মর্মান্তিকও বটে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে মেডিকেল সেন্টারে পাঠিয়েছিলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ পত্রটি হস্তান্তর করেছি। তাছাড়া কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিষয়ে মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রকে নির্যাতনের বিষয়টি প্রক্টর অফিস থেকে জেনেছি৷ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে রাত সাড়ে ১১টায়ই  এঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত  কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর এবং ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহুরুল আনিস। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সার্বিক বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।


প্রজন্মনিউজ২৪/ইজা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ