সব বিদ্যুৎকেন্দ্র অডিট হবে

প্রকাশিত: ১৫ অগাস্ট, ২০২২ ০৩:১৩:৫৬ || পরিবর্তিত: ১৫ অগাস্ট, ২০২২ ০৩:১৩:৫৬

সব বিদ্যুৎকেন্দ্র অডিট হবে

উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় লোকসানের ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অডিট করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য একটি প্রবিধানমালার খসড়া করা হয়েছে। এতে অডিটের উদ্দেশ্য, পদ্ধতির বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে খসড়া প্রবিধানমালার ওপর মতামত দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৫২টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে সরকারের। কিন্তু অভিযোগ আছে বেশ কিছু কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সরকারের শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়। এসব কেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এ কারণে সরকার অডিটর নিয়োগ করে অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। অভিযোগ, দেশে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে ৩৯০ কোটি টাকা। গবেষণা প্রতিবেদনে এমন দাবি করে সম্প্রতি টিআইবি বলছে, বিশাল এ দুর্নীতি হয়েছে দুটি কয়লাভিত্তিক আর একটি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূমি ক্রয় ও অধিগ্রহণসহ নির্মাণের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে সংস্থাটি। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে অডিট করে অনিয়ম-দুর্নীতি থাকলে তা শনাক্ত করা হবে। প্রবিধানমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, অর্থবছর শুরুর ৬০ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দক্ষতা, প্রাপ্যতা ও উৎপাদন খরচকে মানদণ্ড হিসাবে ধরে অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের তালিকা করবে। লাইসেন্স গ্রহীতারা নিজ মালিকানাধীন ও পরিচালনাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর ভেতর থেকেই এটা চিহ্নিত করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাধারণ অপারেটিং তথ্য-উপাত্ত, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের টাইপ অনুসারে গ্রুপিং করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দাখিল করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিইআরসি কম দক্ষতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ধারণ করবে এবং অডিট ম্যানুয়াল অনুসারে অডিটর নিয়োগ করবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দক্ষতা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়।

প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে-জেনারেটরে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ এবং ব্যবহৃত জ্বালানির অনুপাত হিসাব করা হবে। পরোক্ষ পদ্ধতিতে- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিভিন্ন অংশকে ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা হবে। এক্ষেত্রে অডিটর কেন্দ্রের অ্যাকাউন্টস ম্যানুয়াল ও বাজেট খতিয়ে দেখবে। সম্পত্তির দলিলপত্র, অবচয়, সাধারণ ও সহায়ক খতিয়ান, বহিঃস্থ স্বাধীন নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও কার্যপত্র পর্যালোচনা করবে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন, চালান ও সম্পত্তির তালিকা, মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক পরিচালনাগত/আর্থিক প্রতিবেদন এবং ট্রায়াল ব্যালেন্স, সাংগঠনিক চার্ট, বেতন রেকর্ড এবং সম্পত্তির কর বিবরণী যাচাই করবে। এক্ষেত্রে অডিটর উৎপাদন ব্যয়ের বিভিন্ন উপাদান যেমন অবচয়, জ্বালানি ব্যয়, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের হিসাব করবে। একই সঙ্গে ব্যয়ের যথার্থতা পরীক্ষা করবে।

অডিটরের যেসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে সেগুলো হচ্ছে-বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ; পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন প্রণয়নে দক্ষ হতে হবে। কেন্দ্রের ইন্সট্রুমেন্টেশন, কন্ট্রোল ও মিটারিং; বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্য সম্পাদনের মূল সূচকগুলো নির্ধারণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন; কেন্দ্রের দক্ষতা এবং সক্ষমতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড; এনার্জি অডিট পরিচালনা করা এবং আর্থিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণে স্বতন্ত্র এনার্জি অডিটর নিয়োগ করা সম্ভব না হলে বিইআরসি নিজস্ব কর্মকর্তাকে অডিট করার জন্য নিয়োগ দিতে পারবে। এছাড়া ইউটিলিটিগুলোকে তার নিজস্ব জনবল দ্বারা কেন্দ্রগুলোর অডিট করার পরামর্শ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে কমিশন বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাকে নিরীক্ষা শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

কেন এনার্জি অডিট করা হবে তাও প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত লোকসানের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দক্ষতা উন্নয়ন; অক্সিলিয়ারি ব্যবহার হ্রাস এবং দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। উন্নত পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা। ইন্সট্রুমেন্টেশন ও মিটারিংয়ের ত্রুটিগুলি চিহ্নিত ও সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। এছাড়া আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণের ফলে আর্থিক সক্ষমতার উন্নয়ন এবং গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা অডিটের মূল উদ্দেশ্য।

কনজু্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ শতাধিক প্রকল্প উৎপাদনে আনা হয়। এগুলো থেকে মানসম্মত বিদ্যুৎ মেলেনি। চাহিদা না থাকায় এসব কেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ থাকে। বসে বসে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে। আবার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এতদিনে ব্যয়বহুল এসব প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের চুক্তি বারবার নবায়ন করা হচ্ছে। অডিটর নিয়োগ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

 


প্রজন্মনিউজ২৪/ ইমরান


এ সম্পর্কিত খবর

অনুমতি ব্যতীত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগে বশেমুরবিপ্রবি প্রকল্প পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত

গুচ্ছ গ্রামের এক পুকুরে ধরা পড়ল ১০০ ইলিশ

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের কর্ণধার নূর মোহাম্মদ আবু তাহের গ্রেপ্তার

পেট থেকে জীবন্ত মাছ বের করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন সেই ডাক্তার

নোয়াখালীতে ১২ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

ড.ইউনুসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য মানহানিকর : আইনজীবী

যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছে নতুনধারা

কালোজিরা খাওয়ার পাঁচ উপকারিতা

গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, এ আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো : মির্জা ফখরুল

আজ শাকিব খানের জন্মদিন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ