‘এখন কী খেয়ে বাঁচব’

প্রকাশিত: ১৪ অগাস্ট, ২০২২ ০৬:০৪:০৯

‘এখন কী খেয়ে বাঁচব’

সাত সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়ে, কিংবা অফিসে যাওয়ার আগে নিম্ন-মধ্যবিত্তের এক স্বস্তির জায়গা শহরের অলিতে-গলিতে থাকা চায়ের টং। কর্মমুখর এ শহরে অনেকেই সকালের নাস্তা সারেন এ টংগুলোতে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির এ বাজারের আঁচ লেগেছে টঙের দোকানেও। ৫ টাকার লাল-চা দাম বেড়ে হয়েছে ৭-৮ টাকা আর ১০ টাকার কলা-রুটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ চা-কলা-রুটি খেতেই অতিরিক্ত লাগবে ১৩ টাকা।

ঢাকার বিভিন্ন টঙে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে চা-কলা-রুটির নতুন রেট। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে দুধ চায়ের কাপ ছিল ৮-১০ টাকা, এখন একই চা বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ টাকায়, লাল চায়ের দাম বেড়েছে প্রতি কাপে ৩ টাকা, ১০ টাকার বাটারবান বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায় আর ৮-১০ টাকা দামের কলার দাম এখন ১৫ টাকা।

রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে বাংলামটর কাঁঠালবাগানের চা বিক্রেতা গণি মিয়ার সঙ্গে কথা হয় চায়ের দামবৃদ্ধি নিয়ে। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘দাম না বাড়ায়ে উপায় কী? সবকিছুর দাম বাড়ছে। চিনির দাম, দুধের দাম থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনি কিনলাম ৮২ টাকা দরে। আজকে শুনি চিনির দাম বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা। এদিকে দুধের দামও বাড়তি। লোকসান থেকে বাঁচতে চাইলে তো দাম না বাড়ায়ে উপায় নাই।’

এ নিয়ে কথা হয় রিকশাচালক সামসুল হকের সঙ্গে। তিনি কাঁঠালবাগানের একটি মেসে থাকেন। গ্রামের বাড়ি রংপুরে। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘আগে রিকশা চালায়ে দুপুর বেলা টঙে এসে রুটি-কলা খাইতাম। পরে এক কাপ চা খায়ে আবার রাস্তায় নামতাম। এখন যেভাবে দাম বাড়াচ্ছে ভাবতেছি, কী খেয়ে বাঁচব! আমি না শুধু, ঢাকার অনেক রিকশাওয়ালাই দুপুরে টঙে ভাতের বদলে চা-রুটি খায়। তাদের তো পেটে লাথি মারা হইলো। আগে রিকশার জমার টাকা ছিল ২৫০ টাকা, সেটা বেড়ে হইছে ৩০০ টাকা। প্রতি বেলার নাস্তায় বাড়ছে ২০ টাকার মতো। নিজে খাব নাকি গ্রামে বাচ্চাদের টাকা পাঠব- হিসাব মিলায়ে পারি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর মৌলভীবাজারে পাইকারিতে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি। খরচসহ কারওয়ান বাজারে সেই চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এসব বাজারে চিনির কেজি ছিল ৮১-৮২ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা অনুযায়ী,  ঢাকার বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে টিসিবির হিসেবে চিনির দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা।

কেবল চিনি না, দাম বেড়েছে কলা-রুটিরও। রুটির দাম বৃদ্ধি নিয়ে আদর্শ বেকারির সেলস এক্সিকিউটিভ সোলেমান খান বলেন, ‘দুধের দাম বেড়েছে, বেড়েছে চিনির দাম। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। লোকসান সামাল দিতেই বেকারি কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়েছে।'

এদিকে কলার দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাতভেদে কলার হালি ৩০-৫০ টাকা হলেও, টঙে প্রতি পিস সাগর কলা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায় ও ছোট আকারে চম্পা কলা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। গত সপ্তাহেও টঙগুলোতে সাগর কলার দাম ছিল ১০ টাকা ও চম্পা কলার দাম ছিল ৫-৮ টাকা।

কলার দাম বাড়ল কেন জানতে চাইলে বাংলামটর মোড়ের এক টঙ ব্যবসায়ী বলেন, ‘কারওরান বাজার থেকে বাড়তি দামে কলা কিনতে হচ্ছে। আগে খুচরা কিনতাম, তাতেও লাভ উঠে আসত। এখন পাইকারি বাজারে কলা কিনেও দামে পোষাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের দাম নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচ। এতে করেই মুনাফা করতে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কলা।'

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরাফাত বলেন, ‘কীসের দাম বাড়েনি! সকালে নাস্তা করতে আগের থেকে এখন ১৫ টাকা বেশি লাগে। প্রতি পদে পদে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। সবাই এক অজুহাত দিচ্ছে- তেলের দাম বেড়েছে। যারা ব্যবসা করে তারা এসব বলে দাম বাড়াচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা চাকরি করি তারা তো আর এসব বলে বেতন বাড়াতে পারছি না।’

গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, কেরোসিন ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, অকটেন ১৩৫ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ১৩০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে। আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রোল ৮৬ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকস্মিক এই তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়ে গেছে প্রতিটি পণ্যের দাম- যা ভবিষ্যতে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও লাগামহীন করে তুলবে।

সূত্র:সময় টিভি।


প্রজন্মনিউজ২৪/এমআরএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ