বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

প্রকাশিত: ০৭ অগাস্ট, ২০২২ ০৩:১৪:৩৫

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: বিশ্ব মাতৃদৃগ্ধ সপ্তাহ (১-৭ আগস্ট) ২০২২ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উদ্যোগে র‌্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা আজ ৭ আগস্ট রোববার সকাল ১১টায় পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো-‘মাতৃদৃগ্ধ পান এগিয়ে নিতে, শিক্ষা ও সহযোগিতা হবে বাড়াতে’। 

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া।    

বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. রেজিনা ইসলাম, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ডা. শারমিন নাহার বাশার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. ইমং প্রæ চৌধুরী ও ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শিহাব উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্যাথ ফাইন্ডারের বিভাগীয় সমন্বয়কারী শেখ নজরুল ইসলাম ও ইউনিসেফ’র বিভাগীয় নিউট্রিশন অফিসার মোঃ শাহাবুল ইসলাম।

 আলোচনা সভার পূর্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।  

আলোচনা সভায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, পুষ্টিবান জাতি গঠনে নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। জন্মের সাথে সাথে মায়ের শাল দুধই শিশুর প্রথম টিকা ও খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংক্রামক থেকে শিশুকে দ্রæত রক্ষা করে। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মাতৃদুগ্ধ পানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলতঃ এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতেই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। উপযুক্ত শিক্ষা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই শিশুর স্তন্যপান নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে শিশুমৃত্যুর হার ৩১ শতাংশ কমে। এ ছাড়া ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস পায় আরও ১৩ শতাংশ। নবজাতকের জন্য শাল দুধই হলো প্রথম টিকা। শাল দুধে রয়েছে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ওষুধি গুন। অন্য কোন খাবার ছাড়াই ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ পান করালে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকবেন। এজন্য প্রসূতি মা কে খেতে হবে প্রচুর পরিমানে তরল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। বর্তমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারীতে করোনা পজিটিভ মা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারে। সরাসরি ও বিকল্প পদ্ধতিতেও শিশুকে দুধ পান করানো সম্ভব। বুকের দুধের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে সকল মাকেই সচেতন হতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে। মায়ের দুধ খাওয়ানোকে জনস্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোচ্চ সফলতার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। একই সাথে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ভাতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃদুগ্ধদানের সুরক্ষা, প্রচার ও সমর্থনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর কাউন্সেলিং ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায় মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, জন্মের পরে পরিপূর্ণ সুস্থ সবল শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর খুব দ্রæত শাল দুধ খাওয়ালে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয় ও গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে। ফলে মা রক্ত স্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে জন্মের পর পর প্রথম ৬ মাস অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে।

এর পর দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘরে তৈরী শিশুর উপযোগী তরল সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।তাহলে শারীরিক-মানসিক বিকাশ সাধনসহ শিশুটি বুদ্ধিমান হবে। সন্তান প্রসবের পর কোন মা মারা গেলে শুধুমাত্র ঐ শিশুকে অন্য মায়ের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে বা রেজিষ্ট্রার্ড শিশু চিকিৎসকেরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কারণ উল্লেখ করে বিকল্প হিসেবে ভালোমানের গুঁড়ো দুধ দিতে পারবে। 

আইবিএফএএনের তথ্য অনুযায়ী, শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ, জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ফলে সচেতনতায় পারে শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে।


প্রজন্মনিউজ২৪/ইজা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ