শহীদ শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে রাবিতে আলোচনা অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫ অগাস্ট, ২০২২ ০৪:৩৬:৩৯

শহীদ শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে রাবিতে আলোচনা অনুষ্ঠান

রাবি প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আধুনিক খেলাধুলার পথিকৃৎ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আলেচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) বেলা এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আলোচনা অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামালের জীবনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি তুলে ধরে সেগুলো সকলের জীবনে বাস্তবায়িত করার অনুরোধ করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে রাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. ফায়েকুজ্জামান বলেন, ২৬ বছর বয়সে শেখ কামাল হত্যার শিকার হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে একজন দেশের জন্য কতটুকু করতে পারেন? আমরা তার জীবনভিত্তিক আলোচনায় গেলে বুঝতে পারবো, এই সময়ের মধ্যেই তার অর্জনগুলো কি।

তিনি বলেন, শেখ কামাল ভালো খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। এই কথাগুলো সবসময় বললেও, আমরা একটা কথা বলতে সবসময় ভুলে যায় যে, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।

সামরিক বাহিনীতে শেখ কামালের বর্নাঢ্য জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে সামরিক কর্মকর্তা বাছাই করা হয়েছিলো, পরবর্তীকালে যাদেরকে প্রথম ব্যাচে কমিশন দেওয়া হয়।ঐ বাছাইকৃত ৬১ জন সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে শেখ কামাল ছিলেন একজন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ কামাল সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়েছিলেন। ওই ৬১ জনের প্রশিক্ষণ শেষে যখন তাদের পোস্টিং দেওয়া হয়, তখন শেখ কামালের পোস্টিং হয়েছিলো প্রধান সেনাপতি এম. এ. জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে। তিনি এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সেনাবাহিনী তার জন্য উপযুক্ত জায়গা না মনে করে তিনি ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সেনাবাহিনীর চাকরি ত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে আসেন। এরপর ঢাবি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ কামাল সেনাবাহিনীতে না থাকলেও শেখ জামাল সেনাবাহিনীতেই ছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে থাকাকালীনই তাকে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর পরিবার সম্পর্কে রটানো গুজব বিষয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন ইতিহাস বলার কারণ হলো, ১৯৭৫ সালের দিকে বঙ্গবন্ধু পরিবার সম্পর্কে যে গুজবগুলো রটানো হয়েছিলো, তার একটা হলো যে, শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে দেশের রাজা হতে যাচ্ছে। রাজা বলতে শেখ কামালকে ইঙ্গিত করা হতো। যদিও বঙ্গবন্ধু রাজা নয় বরং প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে আবার রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আর শেখ জামাল সম্পর্কে বলা হতো, তিনি পরবর্তী সেনাপ্রধান হতে যাচ্ছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, এই নশ্বর পৃথিবীতে সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও মানুষের স্বপ্ন বেচে থাকে। আমি মনে করি, স্বপ্ন, সভ্যতা এবং ভবিষ্যৎ হচ্ছে মানুষের মনের গন্তব্য। কিছু মানুষ তাদের সময়কে অতিক্রম করে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নেন। সেরকমই একজন মানুষ হলেন আমাদের শেখ কামাল। মাত্র ২৬ বছর বয়সী একজন যুবক তার সময়কে অতিক্রম করে নিজেকে একটা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

উপাচার্য আরো বলেন, ক্রিড়া, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির মিশেল ঘটেছে শেখ কামালের জীবনে। তাই অল্প সময়ে তাকে ব্যাখ্যা করা দুরুহ একটি কাজ। শেখ কামালকে জানতে হলে তাকে নিয়ে পড়াশোনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, ক্রিড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমি শেখ কামাল সম্পর্কিত তিনটা বই পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রথমটি হলো, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা বই 'শেখ কামাল যদি আজ বেচে থাকতেন', দ্বিতীয়টি হলো, সুজাত মনসুরের লেখা বই 'একজন শেখ কামাল' এবং তৃতীয়টি হলো শরৎ বাবলার লেখা 'শেখ কামাল: ক্রিড়াঙ্গনের ধূমকেতু'।

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রিড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সালাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল- ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অবঃ) অবাইদুর রহমান প্রামানিক।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।


প্রজম্মনিউজ২৪/ফারহান আহমেদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ