রাশিয়ান চুক্তির অধীনে প্রথম শস্য জাহাজ ইউক্রেন ছেড়েছে

প্রকাশিত: ০১ অগাস্ট, ২০২২ ০২:০৫:৪৭

রাশিয়ান চুক্তির অধীনে প্রথম শস্য জাহাজ ইউক্রেন ছেড়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইউক্রেনের শস্য বহনকারী জাহাজ স্থানীয় সময় সোমবার (১ আগস্ট) ভোরে ওডেসা বন্দর থেকে লেবাননের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। রাশিয়ান আক্রমণের পর ইউক্রেনের এটিই প্রথম  শস্য বহনকারী জাহাজ। ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন আজ অংশীদারদের সাথে বিশ্ব ক্ষুধা নিবারণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউক্রেন বন্দরগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য "সবকিছু" করেছে, অবরোধ তুলে নেওয়ার ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা রাজস্ব প্রদান করবে এবং কৃষি খাতের জন্য আগামী বছরের পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ করে দিবে।"

তুরস্ক ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর অবশেষে ২৬ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী জাহাজ রেজোনি।  জাহাজটি ২ আগস্ট পরিদর্শনের জন্য তুরস্কের জলসীমায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ করে রাখায় বিশ্বব্যাপী শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ভবিষ্যত দুর্ভিক্ষ হিসেবে দেখছে। বার্তা সংস্থা দ্য গার্ডিয়ান ও রয়র্টাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রক্রিয়াগুলো এখন সম্পূর্ণ হওয়ায় আরও জাহাজ যুক্ত করা কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

ইউক্রেন বিশ্বের বৃহত্তম শস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। প্রায় ২০ মিলিয়ন টন শস্য রপ্তানির অপেক্ষায় ইউক্রেনে আটকে আছে বলে জানা গেছে। অবরোধ বিশ্বব্যাপী শস্যের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যা শস্য আমদানির উপর নির্ভরশীল কিছু দেশকে (মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায) দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাশিয়া ফেব্রুয়ারী থেকে ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ করে রেখেছে, তবে উভয় পক্ষই পুনরায় শিপমেন্ট চালু করার জন্য একটি চুক্তিতে সাক্ষর করেছে। আশা করা হচ্ছে, এই চুক্তি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট কমিয়ে দেবে ও শস্যের দাম কমবে।

রাশিয়ান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের বন্দরে ১৬টি শস্য বোঝাই জাহাজ আটকে ছিল। ইউক্রেন আগামী সপ্তাহগুলোতে বন্দরগুলো সম্পূর্ণ পরিবহন ক্ষমতা ফিরে পাবার আশার কথা জানিয়েছে ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ। তবে এক সপ্তাহ আগে ওডেসা বন্দরে হামলার পর রাশিয়া দর কষাকষি করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

রাশিয়া ২২ জুলাই ইস্তাম্বুলে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে শস্য জাহাজগুলোকে ইউক্রেন ছেড়ে যেতে এবং তাদের আক্রমণ না করার অনুমতি দিয়েছিল। এর ২৪ ঘন্টার না পেরুতেই যখন রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে হামলা চালালে চুক্তির সত্যতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া প্রথমে এই হামলার কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু পরের দিন একটি বিবৃতিতে রাশিয়া বলছে, বন্দরে থাকা পশ্চিমা অস্ত্র বহনকারী একটি ইউক্রেনীয় জাহাজকে আঘাত করেছে। যদিও ইউক্রেন রাশিয়ার ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান "চুক্তির চেতনার বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কাজ" এড়াতে চান। চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা "আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকর" হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া তার প্রতিশ্রুতিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং কিছুক্ষণ পরেই বলছে তারা নদী ও রেলপথ ব্যবহার করে ইউক্রেন থেকে আরও শস্য রপ্তানি করার জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

অবরোধের পর থেকে ইউক্রেন দানিউব নদী এবং রেলপথের মাধ্যমে ৪ মিলিয়ন টনেরও বেশি শস্য রপ্তানি করতে পেরেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ-পূর্ব রপ্তানি পর্যায়ে মাসে ৬-৮ মিলিয়ন টনে পৌঁছানোর জন্য অনেক কাজ করতে হবে। আক্রমণ সত্ত্বেও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে চুক্তি বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানকারী কুব্রাকভ বলেছেন, দেশটি রপ্তানি শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাবে। সপ্তাহের শেষ নাগাদ এটি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শুক্রবার কুব্রাকভ ওডেসার বন্দরে জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও জি-৭ দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কুব্রাকভ বলেছেন, ইউক্রেন তার পক্ষে সমস্ত প্রযুক্তিগত প্রশ্নের সমাধান করেছে, জাতিসংঘকে জাহাজের জন্য বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য রুট সরবরাহ করেছে। রাশিয়া চুক্তির পক্ষের বাস্তবায়ন করবে, যদিও রাশিয়া কেন বন্দর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কুব্রাকভের পাশে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিরা তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার ওডেসার দক্ষিণে চোরনোমর্স্ক বন্দরে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করে শস্য বোঝাই একটি জাহাজও পরিদর্শন করেন তারা। সেদিন লয়েডস অফ লন্ডনের বীমাকারী অ্যাসকট এবং ব্রোকার মার্শ ঘোষণা করেন তারা কৃষ্ণ সাগরের বন্দর থেকে শস্য ও খাদ্য পণ্যগুলোর জন্য সামুদ্রিক কার্গো, যুদ্ধ বীমা চালু করেছে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বীমাকারী এবং ক্রু খুঁজে পাওয়া এখন এবং ভবিষ্যতে রপ্তানির জন্য একটি বড় বাধা হবে।

ইউক্রেনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত মেলিন্ডা সিমন্স বলছেন যদিও যুক্তরাজ্য এই চুক্তিতে জড়িত ছিল না তবে এটি লন্ডনে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জাহাজগুলোর জন্য বাণিজ্যিক বীমা সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে। অ্যাসকট থেকে সিধান্তের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বন্দর আক্রমণ বীমা সংস্থাগুলোকে চিন্তিত করেছিল, তবে তাদের বাধা দেওয়া উচিত নয়।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ