কোর্ট ম্যারিজ: একটি অবৈধ সর্ম্পক

প্রকাশিত: ২১ জুলাই, ২০২২ ০৬:৩৪:০৩ || পরিবর্তিত: ২১ জুলাই, ২০২২ ০৬:৩৪:০৩

কোর্ট ম্যারিজ: একটি অবৈধ সর্ম্পক

সৈয়দ মুহাম্মদ আজমঃ কোর্ট ম্যারেজে’র বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে অধিকাংশ মানুষই এটিকে ‘বৈধ বিয়ে’ বলে স্বীকৃতি দিবেন। কিন্তু কোর্ট ম্যারেজের কোন আইনি ভিত্তি ও বৈধতা কোনটাই নেই। এমনকি আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধানও নেই। আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিধানেও উল্লেখ নেই এ ধরনের বিয়ের কথা। মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু আইন, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান আইন অনুসারেও এ বিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ কোর্ট ম্যারেজ প্রকৃত অর্থে কোনো বিয়ে নয় বরং এভিডেভিট বা বিয়ের ঘোষণামাত্র। অর্থাৎ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে, এ মর্মে ঘোষণা দেয় মাত্র।

কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণ মানুষ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কোর্টে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াকেই বুঝে থাকে। বাস্তবে কোর্টে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিভাবকদের সম্মতিতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় আচার রীতিনীতি মেনে একটি বৈধ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর কাজী আইন মেনে এই বিয়ের নিবন্ধন করলেই আইনগতভাবে বৈধ বলে গণ্য হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি ঘোষণাপত্র মাত্র, বিয়ের রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। বর-কনের নাম, কোন তারিখে, কোন জায়গায়, কত টাকা দেনমোহর ধার্য্য, কি কি শর্তে বিয়ে সম্পন্ন হলো, কে বিয়ে পড়ালো, সাক্ষী ও উকিলের নাম প্রভৃতির একটা বর্ণনা (সাক্ষ্য) প্রমাণ হিসাবে সরকারি নথিতে লিখে রাখাই হলো নিবন্ধন। মুসলিম বিবাহ আইনে বিয়ের চুক্তিপত্র হলো বিয়ের কাবিননামা। নিকাহনামা বা কাবিননামা ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, বিয়ে নিবন্ধন করানোর দায়িত্ব মূলত বর এর। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায়, নিকাহ রেজিস্টার বা কাজী ও পাত্রের দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এজন্য যে কাজী বিয়ে পড়ান তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ের যাবতীয় তথ্যসহ নিবন্ধন করে রাখেন।

মূলত ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে (হলফ) নোটারি পাবলিক করে প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এটাকেই কোর্ট ম্যারেজ বলে প্রচলিত করা হয়। এই ত্রান্ত ধারণাটি যদি কোর্ট ম্যারেজ না হয়ে ‘বিয়ের ঘোষণা’ নামে বিকাশলাভ করতো তাহলে এতটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না।

কোর্ট ম্যারেজের আইনি বা ধর্মীয় কোনো বৈধতা নেই। প্রকৃতপক্ষে, এটি কোন বিয়ে নয় বরং এভিডেভিট বা বিয়ের ঘোষণামাত্র।

কোর্ট ম্যারেজ একটি ভিত্তিহীন ভ্রান্ত ধারণা। আর এমন ভ্রান্ত ধারণার ফলেই দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কোর্ট ম্যারেজের সংখ্যা। এ কাজে সহায়তা করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকেন একটি স্বার্থান্বেষী আইনজীবী মহল। কোর্ট ম্যারেজ বিষয়টির প্রকৃত ব্যাখ্যা না দিয়েই প্রক্রিয়াটি দ্বিধাহীনভাবে সম্পন্ন করেন তারা। যার ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে অবৈধ সর্ম্পকের হার। আদালত পাড়াতে এ সংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল হলফনামা তৈরি করা উচিত। অন্যথায়, এ হলফনামা বা ঘোষণাপত্র কোনো অর্থই বহন করবে না। আইনসিদ্ধ নিবন্ধিত বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী চাইলে হলফনামা করিয়ে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং বিয়ের জন্য আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য শর্তগুলো মেনে হলফনামা প্রণয়ন করতে হবে।

আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধিত না হয়ে শুধু কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু করলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে কখনো কলহ সৃষ্টি হলে দু’জনের কেউই আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখবে না। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্ত্রী তার ভরণপোষণ ও দেনমোহর আদায়ের অধিকার পাবে না। একই সাথে তাদের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানও অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং পিতার সম্পত্তির অধিকার হারাবে।

কোর্ট ম্যারেজ স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই প্রভাবমুক্ত সম্মতির প্রমাণ বহন করে। ফলে পরবর্তীতে কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ বা অন্য কোনো ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বরপক্ষের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ