পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০২২ ০৭:০৬:৫৯

পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার পর এবার পুঁজিবাজারের কারসাজিতে জড়িতদের শাস্তি চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এমন খবর বাজারে ছড়িয়ে বাজারে। বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা শেয়ারের দাম আরও কমতে পারে, এই ভয়ে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এদিন ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতাধিক কোম্পানির ক্রেতাই ছিল না।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার (১৮ জুলাই) ব্যাংক-বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং প্রকৌশলসহ প্রায় সব খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। আর তাতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৮৭ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৪২ পয়েন্ট। তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৫ হাজার ৮১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

সূচকের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কমছে লেনদেনও। এই নিয়ে টানা পাঁচ কর্মদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কারসাজি চক্র। এ কারসাজি চক্রের হাত থেকে বাজার রক্ষা করতে আইএমএফও সরকারকে সুপারিশ করেছে। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আরও দরপতন হবে এমন ভয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই তারা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সহায়তা দিতে দেশের পুঁজিবাজার কারসাজিতে জড়িতদের শাস্তি চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়াও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে। ব্যাংক খাতের তদারকি শক্তিশালী করার পাশাপাশি করপোরেট সুশাসন উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। ব্যাংক খাতে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে আইনি সংস্কারের পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। বৈঠকে খেলাপি ঋণের হিসাব পদ্ধতি সংশোধন ও খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করার বিষয়টি নিয়ে কথা তুলেছে আইএমএফ।

সার্বিক বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া ‍যুদ্ধের প্রভাব, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। পাশাপাশি আইএমএফ পুঁজিবাজারে কারসাজি সঙ্গে জড়িতদের বিচার চেয়েছে। এসবের কারণে আজকে বড় দরপতন হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, সোমবার ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকার মধ্যদিয়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়। ফলে দিনভর সূচক পতনের মধ্যদিয়ে লেনদেন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার ২২৬টি শেয়ার ও ইউনিট কেনা-বেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৩৫৮টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির দাম।

প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে কমেছে ১৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ৩১ দশমিক ৭২ পয়েন্ট। আর তাতে এক দিনের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৫ হাজার ৮১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

ডিএসইতে ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার।

এ বাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ডেল্টা লাইফের শেয়ার। এরপর যথাক্রমে রয়েছে- বেক্সিমকোর শেয়ার, ফরচুন সুজ, গ্রামীণফোন, ওরিয়ন ইনফিউশন, কেডিএস এক্সেসরিজ, তিত্যাস গ্যাস, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোবাকো, ওরিয়ন ফার্মা এবং এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেড।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪২ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ২৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ বাজারে ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২৬০টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৯ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৯ টাকা।


প্রজন্মনিউজ২৪/মনিরুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ