পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কীর্তিনাশ

প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২২ ০৭:৫০:৩৯ || পরিবর্তিত: ২৬ জুন, ২০২২ ০৭:৫০:৩৯

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কীর্তিনাশ

সৈয়দ মুহাম্মদ আজমঃ সপ্তম শতাব্দী থেকে বাংলায় মহাযান বৌদ্ধধর্মের উত্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। সোমপুর মহাবিহার বা মহান মঠ ১২ শতক পর্যন্ত একটি বিখ্যাত ধর্মশালা ছিল। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষালয় বা ধর্মশালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরাও এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। মঠ-শহরটি একটি অনন্য শৈল্পিক কৃতিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে যা পুরোপুরি তার ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনাটির সরল, নান্দনিক রেখাশৈলি এবং খোদাই করা অলঙ্করণ সুদূর কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট বৌদ্ধ মন্দিরের স্থাপত্য শিল্পকলার অণুপম নিদর্শনকেও প্রভাবিত করেছিল।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। প্লাইস্টোসীন যুগের প্রাচীন জনপদ বরেন্দ্র-এর প্রাণভূমি ছিল বিহারটি। স্থানীয়দের মাঝে এটি গোপাল চিতার পাহাড় নামেও পরিচিতি পেয়েছিল, সেই থেকেই এর নাম পাহাড়পুর। প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার। এর মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে বিহারটি দেখতে লালচে রঙের।

সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পুন্ড্রবর্ধনে আসলেও তার বর্ণনায় সোমপুর বিহার ও মন্দিরের কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো মতে, পাল বংশধর বরেন্দ্রী-মগধের রাজা ধর্মপাল (৭৭৭-৮১০ খ্রি.) পাহাড়পুর বিহার বা সোমপুর বিহার ও বিক্রমশীলা প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায়, ধর্মপাল অনেক নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অন্যদিকে, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ “পাগ সাম জোন ঝাং” এ সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রি.) কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে মঠের প্রাঙ্গণে আবিষ্কৃত একটি মাটির সীলমোহরে ৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দের কথা খোদাই করা রয়েছে, যা সম্রাট ধর্মপালের শাসনামলকে ইঙ্গিত করে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে এই বিহারে প্রতিষ্ঠাতা হলেন সম্রাট ধর্মপাল। এমনকি এটাই এখন সর্বজন স্বীকৃত।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির ভূমি পরিকল্পনা চতুষ্কোনাকার। যার পরিমাপ প্রায় ৯২০ ফুট, পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০.৩০ মিটার। বিহারের উত্তর দিকে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে ৪৪টি করে মোট ১৭৭টি কক্ষ রয়েছে। এই কক্ষগুলোর তিনটি মেঝে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিটি মেঝে বিছানো ইটের ওপর পুরু সুরকী দিয়ে অত্যন্ত মজবুতভাবে বানানো হয়েছিল। এই সবগুলো কক্ষই প্রথমদিকে ভিক্ষুদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে কিছু কক্ষ উপাসনা বা প্রার্থনাকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিহারের বাইরের দেওয়ালগুলো ঘরের সারি দ্বারা গঠিত যেগুলো প্রাঙ্গণের মাঝখানে থাকা প্রধান মন্দিরের দিকে মুখ করে রয়েছে।

বর্তমানে মন্দিরটি ২১ মিটার উঁচু হলেও মূল মন্দিরটি প্রায় ৩০ মিটার উঁচু ছিল। ক্রুশাকার ভূমি পরিকল্পার মন্দিরটি প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতায় তিনটি সোপানে উঠে গেছে। উপরের স্তরটি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ইটটি একটি আয়তক্ষেত্রাকার ব্লক। মধ্যবর্তী সোপানটি হলো একটি প্রশস্ত প্রদক্ষিত পথ যা চারটি প্রধান মণ্ডপের স্থাপত্য পরিকল্পনা।

মধ্যবর্তী স্তরে মূলত মন্দিরের পুরো ঘেরের চারপাশে টেরাকোটা ফলকের দুটি ফালি ছিল, যার মধ্যে অর্ধেক এখনও যথাস্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। মন্দিরের শীর্ষদেশের কোন নিদর্শন নেই বিধায় এর ছাদ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট কিছু বলা যায় না। ভূগর্ভস্থ স্তরের কক্ষটির দেয়াল নিরাবরণ কিন্তু প্রতিটি ধাপের দেয়ালগুলোর বহির্ভাগ কার্নিশ, অলংকৃত ইট এবং সারিবদ্ধ পোড়ামাটির ফলকচিত্র দ্বারা সজ্জিত। ক্রুশাকার পরিকল্পনার বর্ধিত অংশগুলোর সংযোগস্থলে কার্নিশের প্রান্ত পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা রয়েছে। পাথর নির্মিত এ নালাগুলোর মুখ গর্জনরত সিংহের মুখের অবয়বে নির্মিত। মন্দিরের গোড়ায় ৬০টিরও বেশি বিভিন্ন হিন্দু দেবতার পাথরের মূর্তি রয়েছে।

বিহারের প্রধান প্রবেশদ্বারটি ছিল কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রবেশের উত্তর দিকে। বেশিরভাগ আনুষঙ্গিক কক্ষগুলো (রান্নাঘর, চিকিৎসালয়) মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত, তবে উত্তর-পূর্ব কোণেও বেশ কয়েকটি কক্ষ পাওয়া গেছে।

এপিগ্রাফিক রেকর্ডগুলো সাক্ষ্য দেয় যে, এই বিহারের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবন বুদ্ধগয়া এবং নালন্দার খ্যাতি ও ইতিহাসের সমসাময়িক বৌদ্ধ কেন্দ্রগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। অনেক বৌদ্ধ গ্রন্থও পাহাড়পুরে সম্পন্ন হয়েছিল, এমনকি এখানে মহাযান বৌদ্ধধর্মের বজ্রযান ধারা চর্চা করা হয়েছিল।

বর্তমানে পাহাড়পুর বিহার বাংলাদেশের সবচেয়ে দর্শনীয়, নান্দনিক স্মৃতিস্তম্ভ ও হিমালয়ের দক্ষিণে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার।

নির্ণায়ক (১): সোমপুর বিহারটি একটি অনন্য শৈল্পিক নিদর্শনের প্রতিনিধিত্ব করে। বিহারের প্রতিসাম্য বিন্যাস এবং  নির্মাণ শৈলির সাথে এর ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের অবিচ্ছেদ্য সর্ম্পকের অভিযোজন হয়েছিল। এর সরল, নান্দনিক রেখাশৈলি এবং পাথর ও পোড়ামাটির মধ্যে খোদাই করা অলঙ্করণের সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম।

নির্ণায়ক (২): এশিয়ায় প্রথমবারের মতো বিশালাংশে পাহাড়পুরে নির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য, মায়ানমারের প্যাগান মন্দির, মধ্য জাভাতে লোরো-জংরাং এবং চন্ডি সেভার মন্দিরগুলোর পরবর্তী নির্মাণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এটি কম্বোডিয়া পর্যন্ত বৌদ্ধ স্থাপত্যকে প্রভাবিত করতে থাকে। পাহাড়পুর টেরাকোটার কারুকার্য এখনও ৮ম শতাব্দী থেকে আজও পুরো ব-দ্বীপ অঞ্চলে টিকে আছে।

নির্ণায়ক (৩): সোমপুর মহাবিহার ৭ম শতাব্দী থেকে বাংলায় বৌদ্ধধর্মের উত্থানের প্রমাণ দেয়। পাল রাজবংশের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এটি বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির একটি প্রসিদ্ধ কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং ১৭ শতক পর্যন্ত একটি বিখ্যাত ধর্মশালা ছিল।

ভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমনের পর তারা সকল স্থানে জরিপ কাজ পরিচালনা করে। পূর্ব ভারতের জরিপ পরিচালনা করেন ড. ফ্রান্সিস বুকানন; যিনি পরবর্তীতে বুকানন হ্যামিল্টন নামে পরিচিত হন। তিনি ১৮০৭ থেকে ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় সোমপুর বিহার পরিদর্শন করেন। আর এটিই ছিল সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বিহারের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক পরিদর্শন। এরপর আসেন ওয়েস্টম্যাকট এবং তারই সূত্র ধরে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম এই স্থানটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি স্থানটি খননের জন্য ব্যাপক আগ্রহী হয়ে ওঠেন। খননে কেন্দ্রীয় ঢিবি অংশের চারপাশে উদ্গত ২২ ফুট অংশবিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত আবিষ্কার করেন, জমির মালিক বলিহারের তদানীন্তন জমিদার বাঁধা দিলে খনন কার্য সেখানেই বন্ধ করেন। এতেই বেরিয়ে আসে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি। পরে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রত্নতাত্ত্বিক আইনের আওতায় সোমপুর বিহার ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।

সোমপুর বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি ভারতীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অর্থ ও ধনরত্ন দান করতেন বলে বিভিন্ন লিপিতে উল্লেখ করা আছে, যা ১০ম - ১১শ শতাব্দীর সমৃদ্ধশীল অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে। ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সোমপুর বিহার ছাড়াও অগ্রপুর (রাজশাহীর অগ্রাদিগুণ), উষ্মপুর, গোটপুর, এতপুর ও জগদ্দল (রাজশাহীর জগদল) বিহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ৯ম শতাব্দীর শেষভাগে গুর্জর রাজ প্রথম ভোজ ও মহেন্দ্র পাল, পাল সাম্রাজ্যের বিশেষ ক্ষতিসাধন করেন।

পরে ১০ম শতাব্দীর শেষভাগে পাল বংশীয় রাজা মহীপাল (৯৯৫ - ১০৪৩) সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন ও সোমপুর বিহার মেরামত করেন। কিন্তু মহীপাল ও তার পুত্র নয়াপালের মৃত্যুর পর আবারো পাল বংশের পতন শুরু হয়। এই সুযোগে মধ্য ভারতের চেদীরাজ কর্ণ, চোলরাজ রাজেন্দ্র ও দিব্য নামের এক দেশীয় কৈবর্ত সামন্ত নরপতি পর পর বরেন্দ্রভূমি আক্রমণ করেন। নালন্দা, পাহাড়পুর মন্দির ও বিহার ধ্বংসের কারণ সম্ভবত এ সময়ের আক্রমণই। ১২শ শতকে দাক্ষিণাত্যের কর্ণাট থেকে আগত সেন রাজারা বাংলা দখল করেন। সেন রাজাদের আমলে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারিয়ে শেষবারের মতো সোমপুর বিহারের পতন শুরু হয়।

১৩’শ শতকের শুরুতে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী বাংলায় আক্রমণ চালিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহদাংশ দখল করে নেন। এরপর থেকেই প্রাকৃতিক, শাসকদের অবহেলা, আক্রমণসহ নানাবিধ কারণে এটি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

পাহাড়পুর বিহারের অন্তর্বর্তী স্থানের উন্মুক্ত চত্বরের মধ্যবর্তী স্থানে কেন্দ্রীয় মন্দির, উন্মুক্ত অঙ্গন, স্নানাগার ও শৌচাগার রয়েছে। এর সংলগ্ন রয়েছে স্নানঘাট, গন্ধেশ্বরী মন্দির।

বিহার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বেলে পাথরের চামুণ্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্থ মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি, নন্দী মূর্তি, সূর্য মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গসহ আরো অনেক মূর্তি। যেগুলো পাহাড়পুর বিহার সংলগ্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

প্লাইস্টোসীন যুগের প্রাচীন জনপদ বরেন্দ্র-এর প্রাণভূমি ছিল বিহারটি। স্থানীয়দের মাঝে এটি গোপাল চিতার পাহাড় নামেও পরিচিতি পেয়েছিল, সেই থেকেই এর নাম পাহাড়পুর। প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।

বর্তমানে, শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক সীমানা স্থাপন করা হয়েছে, যা ভূ-স্থাপত্যের সীমানা হিসাবে গণ্য করা হয়।

এই সীমানায় এর অসামান্য সর্বজনীন মান প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত গুণাবলী অন্তর্ভুক্ত। যাইহোক, স্থাপনাটির আশেপাশে খননের সম্ভাব্যতা বিবেচনায় এর নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে স্থাপনাটির সাথে এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্ম্পকের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত। যেমনটি শিলালিপির সময় খননকারী কমিটির দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছিল। স্থাপত্য এবং স্থাপনার মধ্যে চাক্ষুষ সম্পর্ক বজায় রাখতে সুরক্ষিত বেষ্টনির এলাকা নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

ভূ-স্থাপনাটি বস্তুগত অখণ্ডতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্মোচিত অংশ, সেইসাথে কিছু পোড়ামাটির ফলক লবণাক্ততা এবং উদ্ভিজ্জ অঙ্কুরোদগমের মতো পরিবেশগত উপাদানের কারণে শিল্পকর্মগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। এটি স্থাপনাটির চারপাশের পরিবেশের সাথে অখণ্ডতার যথেষ্ট ঝুঁকি তৈরি করে। সুতরাং এদিকে সংশ্লিষ্ট জনদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

পুরো স্থাপত্য কাঠামো, সুউচ্চ কেন্দ্রীয় মন্দিরসহ কক্ষসমূহ সুরক্ষিত একটি এলাকার মধ্যে অবস্থিত, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানীয় অফিস দ্বারা নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা হয়। জাতীয় আইনের মধ্যে রয়েছে, পুরাকীর্তি আইন (১৯৬৮, সংশোধিত অধ্যাদেশ-১৯৭৬), স্থাবর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিধি, সংরক্ষণ সারগ্রন্থ (১৯২২) এবং প্রত্নতাত্ত্বিক কর্ম আইন (১৯৩৮)।

বিশ্ব ঐতিহ্য ভূ-স্থাপনা ও এ সম্পর্কিত অন্যান্য স্মৃতিস্তম্ভগুলোর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দ্বারা পরিচালিত একজন আঞ্চলিক পরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় থেকে স্থাপনাটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

"দক্ষিণ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট- বাংলাদেশ অংশ ২০০৯-২০১৪" প্রকল্পের অধীনে একটি বাফার জোনের সংরক্ষণ নীতি এবং বিধানসহ একটি ব্যাপক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে। চিহ্নিত ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার টেকসই অপারেশনের জন্য এবং স্থাপত্যের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনাগুলোর ক্রমাগত বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত মানবিক, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সংস্থান বরাদ্দ করতে হবে। লেখক: সাংবাদিক।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ