ফেরিঘাটে আর ঝরবে না মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ

প্রকাশিত: ২৫ জুন, ২০২২ ১১:১৬:৩৪

ফেরিঘাটে আর ঝরবে না মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ

 

২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. মাহে আলম সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান করেন সদর হাসপাতালে। বিকেলে জাজিরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করেন। সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাটে ওইদিন সন্ধ্যায় লঞ্চ বা ট্রলার ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিলেন। হঠাৎ স্পিডবোট দুর্ঘটনায় তিনি নিখোঁজ হন। দু’দিন পর নদীতে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। এমন অনেক মানুষের প্রাণ কেড়েছে সর্বনাশা পদ্মা।

সময়ের পরিক্রমায় পদ্মা সেতুর হাত ধরে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আজ শরীয়তপুরে উদিত হয়েছে নির্ভরতার সোনালী সূর্য। এ প্রাপ্তি শুধু রোগী ও চিকিৎসকদেরই স্বস্তি এনে দেয়নি জেলার ১৩ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে আনন্দের সুবাতাস।

পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত দুর্গম চরসহ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপদের নাম ছিল শরীয়তপুর। জেলা সদর থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৭৩ কিলামিটার হলেও পদ্মা নদীর কারণে জরুরি রোগীকেও ঢাকায় নিতে সময় লাগত ৫-৭ ঘণ্টা। অনেক সময় ফেরির অপেক্ষায় থাকতেই মৃত্যু হয়েছে অনেক জটিল রোগীর।

তাছাড়া নদী পথের ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে অনেক ভালো মানের চিকিৎসকও এখানে আসতে চাইতেন না। এলেও বদলি হয়ে চলে যেতেন। কিন্তু গৌরবের পদ্মা সেতুর হাত ধরে সকল সংকটকে পেছনে ফেলে এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা বলে মনে করছেন এই জেলার মানুষ।

শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন সময় মুমূর্ষু অবস্থায় আমার এক আত্মীয়কে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। মাদারীপুর বাংলাবাজার ফেরিঘাট পৌঁছালে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঘাটে তিন ঘণ্টা দেরি করতে হয়েছে। পরে ফেরি এলেও ততক্ষণে রোগী মারা যান।

অ্যাম্বুলেন্সচালক বাবু সরদার ও মিজান মোল্লা বলেন, আগে রোগী নিয়ে ঢাকায় যেতে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগতো। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যেকোনো হাসপাতালে যেতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগবে। এতে করে সময় বাঁচবে এবং রোগীরাও দ্রুত চিকিৎসা পাবে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিশষজ্ঞ ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, মুমূর্ষু অবস্থায় কোনো শিশুকে যদি ঢাকায় পাঠানো হতো তাহলে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদারীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝির ঘাট দিয়ে ফেরিতে পার হতে হতো। এতে সময় লাগতো ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা। পথিমধ্যে অনেক শিশু মারাও যেত। পদ্মা সেতু সেই সীমাহীন ভোগান্তি ও মৃত্যু থেকে বাঁচাবে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ