সঞ্চয় থেকে ব্যয়

দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩ জুন, ২০২২ ০৫:৪৯:৪৬ || পরিবর্তিত: ২৩ জুন, ২০২২ ০৫:৪৯:৪৬

দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে

এসএম আজম, স্টাফ রিপোর্টার, প্রজন্মনিউজ২৪.কম: ভোগ্যপণ্য সহ প্রতিটি সেবার মূল্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। যুদ্ধ পরিস্থিতির অযুহাতে যেসব জিনিষপত্রের দাম বেড়েছিল, আর্ন্তজাতিক বাজারে তার দাম কমলেও দেশে আর কমেনি। এমন পরিস্থিতি থেকে ব্যয় কমানো বা আয় বাড়ানো ছাড়া সহসাই বিকল্প উত্তোরণের উপায় দেখছেনা সাধারণ মানুষ।

মহামারি করোনাকালে জনজীবন স্থবির থাকলেও দ্রব্যমূল্যসহ জীবনধারণের ব্যয় তেমন বাড়েনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায়ও জীবনযাত্রার ব্যয় নাগালের বাইরে। সহসাই তা নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন ইঙ্গিতও মিলছেনা। শুরুতে সরকারের পক্ষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যুক্তি দেখানো হয়। কিন্তু যেসব পণ্য এ দু’দেশ থেকে আমদানী করেনা সেসব পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। সরকার নানাভাবে চেষ্ঠা করেও এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও সমস্যা হতো না যদি মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়তো। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন তারা। সংসদে একাধিকবার তোপের মুখেও পড়েছে মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীসহ নীতি নির্ধারকরা। বাজার মনিটরিংয়ে জোড়ালো অবস্থান থাকলে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো।

বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয় করলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। আর এসব পণ্যের পরিমাণ, সরবরাহ ও গুনগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ভোক্তাদের। তাছাড়া সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ট্রাক সেল থেকে ন্যায্যমূল্যের পণ্য নিতেও পারছেনা।

শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়েই অসন্তোষ তা নয়। বাজার দরের উর্ধ্বমূখীতার সাথে তাল মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় সেবা সংস্থাগুলোও সেবার দাম বাড়িয়েছে প্রতিযোগীতার ভিত্তিতে। এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, আবাসিক, শিল্প ও উৎপাদনশীল খাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ এর দাম ১০ শতাংশের উপরে বেড়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫-২৫ শতাংশ। যার শিকারও এই সাধারণ ভোক্তারা। কিন্তু ব্যয়ের তুলনায় এসব মানুষের আয় বাড়েনি।

বাজার বিশ্লেষক মাহমুদ ফিরোজ বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রকৃত অর্থে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। কারণ, বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায়। কারণ, অনেকাংশে বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সরকার দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। ফলে চাপ প্রয়োগ করেও তা সফলতার মুখ দেখছেনা।এমনকি তাদের চিহ্নিত করতে পারলেও শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছেনা। ফলে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে চক্রগুলো বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মো: রমজান আলী জানান, দেশের অর্থনীতি মূলত কয়েকটি খ্যাতনামা গ্রুপের কাছে জিম্মি। এরমধ্যে বসুন্ধরা, এসিআই, প্রাণ, মেঘনা, সিটি, টিকে, আবুল খায়ের, যমুনা, স্কয়ার ও আকিজ গ্রুপ অন্যতম। যারা দেশের বাজারে ভোগ্যপণ্য সরবরাহে সিংহভাগ ভূমিকা রাখে। এছাড়া গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য আমদানী ও বিপণন করলেও তা পরিমাণে তেমন প্রভাব ফেলে না। এসব শিল্পগ্রুপের কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাবে তাদের ফুলেফেপে ওঠার পরিমাণ নজিরবিহীন। এসব প্রতিষ্ঠান একজোট হয়ে বাজারকে যেদিকে চাইবে বাজার সেদিকেই যেতে বাধ্য। ফলে সরকার অনেকাংশেই এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী খতিব আসলাম জানান, বাজারে সকল পণ্যের দামই উর্ধ্বমুখী। ফলে ক্রেতারা কষ্টে আছেন। আগে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রয় হতো এখন তার পরিমাণ কমেছে। ক্রেতাদের চাপা কষ্টগুলো বুঝতে পারি। অন্যদিকে আমরাও যে ভালো আছি এমনটা নয়। প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়েছে, বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু কমেছে বিক্রি, কমেছে লাভ।

বাজারে আসা স্কুল শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পরিবার তো চালাতেই হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কষ্টে আছে শিক্ষকরা। কারণ, মহামারিকালের ধার দেনা এখনো কাটেনা। এরমধ্যে বাসা ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিষের দাম বাড়তি। শুধু বাড়েনি আয়। আর পেশাগত কারণে কারো কাছে হাতও পাততে পারিনা। কিন্তু সংসার খরচ তো বসে নেই। বেঁচে আছি, এটাই এখন বড় সমস্যা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কাউসার আহমেদ বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। কিন্তু সে রকম কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কষ্ট আরো বেড়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, কোনো কারণ ছাড়াই লাগামহীনভাবে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম, বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। বাজারের একটি সিন্ডিকেট মূলত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। বাজেটে তাদেরকেই আরো অধিক সুবিধাভোগী করা হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪.কম/আজম/ফিরোজ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ