কবি সুফিয়া কামালের ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২০ জুন, ২০২২ ০৪:৩৬:৩২

কবি সুফিয়া কামালের ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা, নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব হলেন সুফিয়া কামাল। ‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে খ্যাত এই মহীয়সী নারীর ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ সোমবার (২০ জুন)।

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মায়ের নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। তার পিতা কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন।

তিনি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সে পরিবারে নারীশিক্ষার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করা হতো না। তার মাতৃকুল ছিল শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবার। তাদের পারিবারিক ভাষা ছিল উর্দু, বিধায় পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধই ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পাননি তিনি। পারিবারিক নানা চড়াই উতড়াই পার করে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন এই মহীয়সী নারী।

অবশ্য তার স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পেছনে অবদান রেখেন তার মা। মায়ের উৎসাহ আর সহযোগিতায় বড় মামার গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়ার সুযোগ হয় তার।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর থেকেই বাংলার সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। নারীদের ভাষা আন্দোলনে যোগদানের জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কচিকাঁচার মেলা’ নামের একটি শিশু সংগঠন।

১৯২৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়া কামালের বিয়ে হয়। স্বামী নেহাল হোসেন অত্যন্ত আধুনিকমনস্ক হওয়ায় সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবা করার কাজে তাকে যথেষ্ট উৎসাহ দেন। সাথে বিভিন্ন সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করে দেন। স্বামীর একান্ত সহযোগিতাই সে সময়ের বাঙ্গালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। সাহিত্যপাঠের পাশাপাশি সাহিত্য রচনাও শুরু করেন তিনি।

১৯২৬ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী পত্রিকা ‘সওগাত’-এ তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। সেই থেকে সাহিত্য রচনার জগতে তার পা রাখার সূচনা হয়। এরপর একাধারে লিখেন কাব্যগ্রন্থ, গল্প, ভ্রমণকাহিনী, স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী, শিশুতোষ রচনা। সেগুলো আবার প্রকাশের পর যেমন বাহবা পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন সম্মান ও পরিচিতি।

তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সাঁঝের মায়া (১৯৩৮), মায়া কাজল (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), প্রশস্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪), কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭), একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯), সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮) প্রভৃতি। শিশতোষ রচনার মধ্যে ইতল বিতল (১৯৬৫), নওল কিশোরের দরবারে (১৯৮১)  অন্যতম।

কবি সুফিয়া কামাল তার কর্ম স্বীকৃতিস্বরূপ ৫০টির বেশি পুরস্কার লাভ করেন। তার মধ্যে একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭) অন্যতম।

এই মহীয়সী নারী  ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সুফিয়া কামাল বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। রক্ষণশীল সমাজে নারীদের সমান শিক্ষিত হওয়ার সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি।

লেখক: সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, সাংবাদিক।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ