গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না: ফখরুল

সংবাদপত্রের কালো দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে‘র আলোচনা

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০২২ ০১:৫৭:৩৩ || পরিবর্তিত: ১৭ জুন, ২০২২ ০১:৫৭:৩৩

সংবাদপত্রের কালো দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে‘র আলোচনা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এই দুটোকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। গণতন্ত্র না পেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আমরা কীভাবে পেতে পারি? সেজন্য আমরা গত কয়েকবছর ধরে বলছি যে, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ‌‘সংবাদপত্রের কালো দিবস‘ উপলক্ষে বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, সংবাপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করেছে। আর বিএনপি সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে।”

বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিএফইউজে‘র সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ,  বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, দি নিউনেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ডিইউজে‘র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, কায়কোবাদ মিলন, বিএফইউজে‘র সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশিদ আলম, ডিইউজে‘র সহসভাপতি বাছির জামাল ও রাশেদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও মাসুদ অরুন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন।

মির্জা ফখরুল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “কালকের নির্বাচন তো আপনারা নিজেরাই দেখেছেন, দ্বিতীয়বার আমি বলতে চাই না। এটা আমরা বহু আগে থেকেই জানি যে হবে। যে কারণে বলে দিয়েছি, আমরা কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছি না। খুব পরিষ্কার করে বলেছি। এটা এখন প্রমাণিত সত্য।”।” তিনি বলেন, “এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হচ্ছে যে, তাদেরকে আরো বৈধতা দেওয়া। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, কুমিল্লার ভোট তা সঠিক প্রমাণ করেছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের  লড়াইয়ে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত, আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। এত কিছুর পরেও আমরা কিন্তু থেমে নেই। আমরা কাজ করছি এবং চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার এবং দেশকে মুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। নিঃসন্দেহে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবই।“

সভায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী, এদেশের জনগণ মিলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই মিডিয়ার স্বাধীনতা অর্জিত হবে।”


বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, দেখবেন এটা হচ্ছে সংবাদপত্রবিরোধী ইতিহাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিপক্ষের ইতিহাস।  ফ্যাসিজমের প্রতি অনুরক্ত একটি দল এটা করবে, এটা খুব স্বাভাবিক। শওকত মাহমুদ বলেন, চীনে যেমন কমিউনিস্ট পার্টির লোক ছাড়া কেউ রেডিও-টিভি বা নিউজ পেপারের মালিক হতে পারেন না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোক ছাড়া কেউ রেডিও-টিভি বা পত্রিকার মালিক হতে পারেন না।

বিএফইউজের বর্তমান সভাপতি এ্ম আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী শাসনে প্রতি দিনই সংবাদমাধ্যমের জন্যে কালো দিন। তার পরও আমরা ১৬ জুনকে কালো দিন হিসেবে পালন করে আসছি। এই জুনেই আরেকটি কালো দিন হচ্ছে- ১ জুন। এ দিন দেশের গণমানুষের কন্ঠস্বর, জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম বার বন্ধ করে এর সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতা করে নিয়ে যায়। বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে তারা তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধন করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য ধারা যুক্ত করেছিল। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে জংলী আইন পাশ করে। এবারও নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আরও কিছু নিবর্তনমূলক আইন করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা। শুধু তাই নয়, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরশুদিন যে বক্তব্য রেখেছেন, তা ভয়ংকর । 

প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধনীতে সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে সেটার জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আবার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্কাইপ কেলেঙ্কারীর নায়ক বলেছেন তিনি জেলের বিধান যুক্ত করতে চান। কোন সভ্য দেশ হলে ওই ব্যাক্তি এখন জেলে থাকার কথা।  

ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, নিবর্তনমূলক আইনগুলো এ্কেকটি বিষমাখা তীর। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।


প্রজন্মনিউজ২৪/মনিরুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ