গার্লস ইন আইসিটি ডে-২০২২ উপলক্ষে

তিন নারী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা পেলেন বিসিসি পুরষ্কার

প্রকাশিত: ১৩ জুন, ২০২২ ১১:১৪:০৫ || পরিবর্তিত: ১৩ জুন, ২০২২ ১১:১৪:০৫

তিন নারী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা পেলেন বিসিসি পুরষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরী ও যুব নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির খাতে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলে ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ‘গার্লস ইন আইসিটি ডে-২০২২’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম, তথ্য ও প্রযুক্তি শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য তিনজন নারীকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। তারা হলেন: প্রযুক্তি উদ্যোক্তা রেজওয়ানা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল এবং প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া আনিকা রহমান লিপি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফোরমেশন অন ডিজএ্যাবিলিটি(সিএসআইডি) এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁও বিসিসি অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মো: আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ১২টায় শেষ হয়।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এক দশক আগেও বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ। বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ কোটিতে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার। আইসিটি ডিভিশনের উদ্যোগে গঠিত ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রোগ্রাম’ এর আওতায় তৈরি করা হয়েছে ৫০ হাজার আইটি ফ্রিল্যান্সার। অত্যন্ত প্রশংসনীয় যে সরকার বাংলাদেশের ২১টি জেলায় “শি পাওয়ার” নামে একটি পাইলট প্রজেক্ট চালায় যার উদ্দেশ্য ছিল নারী আইটি রক্ষণাবেক্ষণ ইঞ্জিনিয়ার, ই-কর্মাস উদ্যোক্তা, কল সেন্টার এজেন্ট ও ফ্রিল্যান্সার গড়ে তোলা।

এছাড়াও সরকার জাতিসংঘের সাথে কাজ করে যাচ্ছে উইমেন আইসিটি ফ্রন্টায়ার ইনিশিয়েটিভে। সরকারের আরেকটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলো এলআইসিটি প্রজেক্ট যার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে নারীরা ডিজিটাল মার্কেটিং এবং বিজনেস মডেল তৈরি করা সর্ম্পকে শিখতে পারছেন। এভাবে তৃণমূল থেকে উঠে আসছে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা। গত কয়েক বছর ধরে দেশব্যাপী হাই স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতারও আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে সরকার উল্লেখযোগ্য সাড়া পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশব্যাপী ৮ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সারাদেশে ৩৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০২১ সালে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে আমরা এই বিষয়ে কাজ করবো যেন ২০২৬ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কিশোরী ও যুব নারীদের অংশীদারিত্ব বেড়ে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ এর মধ্যে ৫০ শতাংশ হতে পারে।

ড. মো: আব্দুল মান্নান আরো বলেন, শুধুমাত্র সরকার নয়, বাড়িতে বাবা-মা, ভাই-বোন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্পোরেট সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, যুব সংগঠনসহ সকলকেই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমাদের কিশোরী ও যুব নারীদের জীবন পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে কাজ করতে পারে। সরকারি বেসরকারি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে যুব নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা এবং অন্যান্য উপায়ে এই পেশায় লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর কাজ করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে নারীদের সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭১ শতাংশেরও বেশি। তবে, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা বা ডিজিটাল লিটেরেসি এখন এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে যেখানে আমাদের দেশে মেয়েদের অংশগ্রহণ যথেষ্ট নয়। গ্রামাঞ্চলে ১৩ শতাংশ এবং সারাদেশে ১৫ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীতে মাত্র ৪ শতাংশ নারী কম্পিউটার ব্যবহার করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে সানেম-এর এক গবেষণায়।

ইউনিসেফ, বাংলাদেশের সমীক্ষায় দেখায় যে, প্রায় ৩০ শতাংশ বাংলাদেশি কিশোরী ও যুব নারী শিক্ষার্থীরা তাদের সম্ভাবনার একটি পরিসীমা থেকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত পছন্দ করে, তবে যখন ক্যারিয়ারের বিষয়টি আসে তখন মাত্র ১০ শতাংশ সেখানে আগ্রহ দেখান বা অংশগ্রহণ করেন। সানেম-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ৮৭ শতাংশ গ্রামীণ নারীরা এবং ৭৭ শতাংশ শহরের নারীরা কোনোদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ। বিশেষ অতিথি হিসেবে সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফোরমেশন অন ডিজএ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর ডেনিল ও’ব্রায়েন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে.এম. তারিকুল ইসলাম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট এন্ড লার্নিং ডিরেক্টর জলি নূর হক, বিসিসি পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ এনামুল কবিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নারী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।


প্রজন্মনিউজ২৪/এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ