প্রকাশিত: ০৭ জুন, ২০২২ ০১:০৩:২০ || পরিবর্তিত: ০৭ জুন, ২০২২ ০১:০৩:২০
লিখিকা তৌহিদা আনজুম মিম
আহ হা হু লম্বা একটা হামিতে ঘুমটা ভাঙলো৷ এখনো চোখের সার্টার বন্ধ হয়ে আসছে৷ কোনো রকমে ফ্রেশ হলাম৷ ঘরে আসতেই দেখি রবিন এসে হাজির ৷ রবিন আমার ছাত্র ৷
রবিন : স্যার কেমন আছেন?
আমি: ভালো,তুই কেমন আছিস?
রবিন: ভালো আছি।
আমি: মামার বাড়িতে বেরানো তো ভালোই হলো। তকে যোগ অংক শিখিয়েছিলাম। তা বলতো ৯০+৯০ = কত?
রবিন: (আঙ্গুল গনন করা শেষ হলে) একি স্যার আমার তো দেখছি ৯০ টি আঙ্গুল নেই। আমি কীভাবে বলবো ৯০+৯০=কত?
আমি: ভাবসাব দেখতে তো বড় ছেলেদের মতো। ক্লাস থ্রি তে পড়ে, ৯০+৯০= কত জানে না। ফাজিল নাম্বার ওয়ান।
রবিন: আমার আম্মু আব্বু কেনো যে আমার নাম রবিন রেখেছে, ফাজিল রাখলেই পারতো। স্যার আপনি আমাকে যেভাবে ফাজিল বলে ডাকেন, মাঝে মাঝে মনে হয় আমার নামটাই ফাজিল।
আমি: ফাজিল! মুখে মুখে আবার কথা বলছিস। তুই এক্ষনি ১০ টা ওটবস কর।
রবিন: যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের নামই শুনেছি। কিন্তু এই ওটবস কীভাবে করে। স্যার আপনিই বরং প্রথমে একবার ওটবস করে দেখিয়ে দেন।
আমি: ওরে বেয়াদপ, তুই এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যা। মা কোথায় থেকে এই রবিন কে জোটাল। কয়েক দিন পর থেকে চাকরির খোজ করতে করতে পাগল হয়ে যাবো, কিন্তু মা দেখছি এখনি পাগল বানিয়ে দেবে। মা ক্ষুদা লাগছে নাস্তা দিয়ে যাও।
অনেক দিন পর
আজ একটা চাকরির ইনটারভিউ দিতে ঢাকা যাচ্ছি। বাসে চরতে আমার ভালো লাগে। অনেকক্ষণ সিরিয়ালে দাড়িয়ে থেকে টিকেট কাটলাম। আমার বাসে ওঠলেই কেমন একটা রোমাঞ্চকর ফিলিংছ চলে আসে। বাহিরের দৃশ্যপট দেখতে দেখতে অনেকক্ষণ হলো চোখটা লেগে গেছে। হঠাৎ ওঠে দেখি আমার পাশে ব্যাগটা নেই। একি পকেটে তো মোবাইল আর মানি ব্যাগটাও নেই। আরে আমার ব্যাগ পাচ্ছি না আমার ব্যাগে সব জরুরি কাগজ পত্র ছিলো। বাসের সবাই কে জিজ্ঞেস করলাম কেউ কিছু বলতে পারলো না। মনে হচ্ছে পাশের লোকটাই সব করেছে। বাস থেকে ঢাকা নেমে কি করবো কোন দিকে যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।মানিবেগেই ঠিকানাটা টুকা ছিল। ঢাকায় কোনো আত্মীয়র বাসা নেই। কি করবো এখন। আমি এমনই অপদার্থ যে কারো নাম্বার মনে নেই। পকেটে পাচ পয়সাও নেই। সামনে ভদ্রলোকটাকে বলে দেখি যদি কোনো সাহায্য করতে পারেন। এই যে ভাই আমি একটা বিপদে পড়েছি।আমার সব চুরি হয়েছে গিয়েছে। আপনি যদি আমকে ৯০০ টাকা দেন তবেই আমি বাড়ি ফিরতে পারবো। আপনার বিকাশ নাম্বারটাও দিবেন, বাড়ি ফিরে আপনার টাকা আমি সেন্ড করে দিবো।
ভদ্রলোক: কি দিনকাল পরলো,নতুন ব্যবসা আমদানি করলেন নাকি মহাশয় ।
(সামনে একটু এগিয়ে)
আমি: কাকাবাবু আমি অনেক বিপদে পরেছি। কিছু টাকা দিতে পারতবেন।
কাকা: বাবা এখুনি দোকানটা খুলেছি টাকা তো নেই।
আমি: অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু টাকার যোগাড় করতে পারি নাই।ভিড়ের মাঝে বাসে চড়ে বসলে কেউ কি বুঝতে পারবে! দেখি চেষ্টা করে। কন্টাক্টডার ঠিকই টিকেট চেয়ে বসলো। আর বাকিটা ইতিহাস। নাহ! আবার সাহায্য চেয়ে দেখি। এই যে ভাই বিশ টাকা দেওয়া যাবে। পথিক ভাই কেমন একটা সন্দেহের দিকে তাকাচ্ছে। আসলে কোর্ট টাই পরে যদি বিশ টাকা বা নয়শ টাকা চাই তাহলে লোকে সন্দেহের চোখে তাকাবে এটাই স্বাভাবিক। সুজুতা জোরা পাশের ড্রেনে ছুড়ে ফেললাম। এভর সার্ট টিকে কয়েকটি ছিদ্র করে সারা শরীরে মাটি মেখে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশ নিলাম। কেউ আমাকে কিছু টাকা দেন,আমি খুব বিপদে পড়েছি এতোক্ষণ চিৎকার করে মাএ ২২০ টাকা হাতে। ২২০ টাকা দিয়ে তো বাড়ি যাওয়া যাবে না। অন্য কিছু করতে হবে। এই যে ঝালমুড়ি ওয়ালা পুরো থালা ঝালমুড়ি কতো?
ঝালমুড়ি ওয়ালা: ভাই ঝালমুড়ি তো প্রায় শেষের দিকে। আর ২০০ টাকার ঝালমুড়ি আছে।
আমি: ঠিক আছে, পুরো থালা আমাকে দাও। তুমি এইভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছ কেনো? যা বলছি তাই করো। ঝালমুড়ি থালা তো নিলাম। আমার যেই বেশ! এই ভিক্ষুকের বেশে যদি ঝালমুড়ি বিক্রি করি তাহলে লোকজন খাদ্য ভেজালের মামলা করে দিবে। তাহলে আর রক্ষা নেই। তার থেকে ভালো হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হই। ছেড়া সার্ট টা খুলে ফেললাম। কারন এতে ময়লা লেগে আছে। হাফ হাতা গেঞ্জি ও মাথায় একটা গামছা বাধায় অনেকটাই ঝালমুড়ি ওয়ালা লাগছে। মাঝখানে গামছা কিনে বিশ টাকা ও হাতছাড়া হলো। সারাবেলা বিক্রি করে ভালোই লাভ হলো। ২০০ টাকার ঝালমুড়ি ৬০০ টাকা বিক্রি করলাম। কেমন একটা প্রাউড ফিল করছি। যদি বাসে দাঁড়িয়ে যাই তাহলে ৬০০ টাকাই যথেষ্ট। বাড়িতে পৌছানোর আগে পাড়ার দোকান থেকে একটা সার্ট বাকিতে নিলাম। কারণ এই অবস্থায় বাড়ি ঢুকলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বাড়ি ঢুকেই দেখি রবিন। কিরে এই সন্ধ্যাবেলা তুই এখানে! কী চাই?
রবিন: আম্মু আমাকে আপনার কাছে পাঠাইছে। স্যার আম্মু আপনাকে মোবাইলে টাকা পাঠাইতে কোন সকালে বলছে। এখানো নাকি মোবাইলে টাকা যায়নি।
আমি: আরে আমার সব কিছু চুরি হয়ে গেছে।
রবিন: সব চুরি হয়েছে তো কি হয়েছে। আমি তো আপনার হাতে আম্মুর নাম্বার টা লিখে দিয়েছিলাম। আপনি চাইলেই কারো মোবাইল দিয়ে আম্মু কে কল দিতে পারতেন।
আমি: সত্যিই তো তো আমার হাতে এখনো মোবাইল নাম্বার টা আছে। আমি খেয়ালই করিনি। আমার হাতে চাচির নাম্বার থকা সত্ত্বেও আমি ভিক্ষা, ঝালমুড়ি, কনটাক্টডারের গাড় ধাক্কা........... ওহ না..... আমি আর ভবাতে পারছি না। আমি কি অপদার্থ।
রবিন: স্যার আমি তো অনেক আগে থেকে বলছি আপনি নাম্বার ওয়ান অপদার্থ।
আমি: বেয়াদব! তুই দাঁড়া বিচ্ছু। পালাচ্ছিছ কেন? সামনে পেলেই তোর কানটা ছিড়ে হাতে নিয়ে আসবো।
মা: কিরে কি করছিছ। তুই কখন আসলি? ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে? সারাদিন মোবাইল ধরিছনি কেনো?
আমি: মা এতো প্রশ্ন করো না তো! সারাদিন কিছু খাইনি।খেতে দাও। বড় ভাই কে তো দেখছি না?
মা: এতোক্ষণ তো ঘরেই ছিলো।
সকাল বেলা
আমি: আরে রবিন না! কোথায় যাচ্ছিছ?
রবিন: স্যার কেক আনবো দোকানে যাচ্ছি। স্যার আপনার ও আমার মাঝে একটা মিল আছে।
আমি: আচ্ছা! তা কি শুনি তো।
রবিন: আমাদের দু'জনেরই বাবা নেই।
আমি: বাবা কথাটা শুনতেই চোখের কোনে পানি এসে গেলো। পরিবেশটা যেনো কুয়াচ্ছন্ন হয়ে গেলো মুহুর্তেই। বুকের ভেতর আবছা কষ্ট হচ্ছিল। বুকের ভেতর আহাকার যেন কথা বলতে বাধা সৃষ্টি করে। জীবনে কতো মুল্যবান জিনিস হারিয়েছি, আমিই জানি। হঠাৎ বেখেয়ালে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাই। লোকটা ছিলো মাতাল।
রবিন: এই যে আপনি আমার স্যার কে ধাক্কা দিলেন কেনো? স্যার আপনি ও ওনাকে ধাক্কা দেন! আমার স্যারের অনেক শক্তি। এক ঘুষিতেই আপনার দাত ভেঙে দিবে।
নেশাগ্রস্ত লোক: এই রে... দেখ তবে। তোর স্যারের শক্তি কতো দেখতেছি।
আমি: দেখতেছি বলে লোকটা কয়েকটা ঘুষি দিয়ে হাতটা ভেঙে দিয়ে ও চলে গেলো। এই রবিন এখানে আয়। তকে কে বলছে আমার শক্তি বেশি। তকে এতো বেশি বলতে আমি কি বলেছি ?
রবিন: না।
আমি: তাহলে তুই লোকটাকে রাগালি কেনো? লোকটা তো এখনি চলে যতো। ওরে মারে আমার হাতটা গেলো রে। কেউ আমাকে বাচাও....
কয়েক দিন পর
আমি: ঐ বিচ্ছু রবিনের জন্য এই অবস্থা। এখন ভাঙা হাত নিয়ে বড় ভাইয়ের বিয়ে খেতে হবে। বড় ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে কতো আশা ছিলো আমার।আনন্দ করব।আবার রবিনের চাচাতো বোনের সাথেই বড় ভাইয়ের বিয়ে ।
বড় ভাই: এতো বেলা হয়ে গেলো অনিক তুই শুয়ে আছিস। হাতের অবস্থা কি কিছুটা ভালোর দিকে যাচ্ছে তো!
আমি: হ্যা, ভাইয়া কিছুটা ভালোর দিকে।
বিয়ের দিন বেলা বারোটা
মা: অনিক, অনিক ওঠো। সারা বাড়িতে মেহমান, তোমার ঘুমানোর সময় কী এখন।
আমি: মা রাতে ঘুমাতে পারিনি, একটু ঘুমাতে দাও।
মা: ঠিক আছে। আমরা মেয়ের বাড়িতে যাই। তুমি রেডি হয়ে আসো। আসার সময় কাজী সাহেব কে নিয়ে এসো। আজ গ্রামে প্রায় ৭ থেকে ৮ টি বিয়ে। সকাল সকাল কাজীকে না আনতে পারলে আজ বিয়ে হবে না।
আমি: আচ্ছা মা, আর কাউকে পাঠনোর দরকার নেই। আমি কাজী নিয়ে আসবো।
হঠাৎ ঘুমটা ভাঙলো ঘড়িটাতে দেখি ৪:৪২ বাজে। হায়! হায়! আমার তো ১২ টায় যাওয়ার কথা ছিলো। তারাতাড়ি করে কাজী অফিসে গিয়েও কাজ হলো না। কাজী অফিস থেকে কাজী সাহেব বেরিয়ে গেছেন।
মা: তোমার এতক্ষণে আসার সময় হলো। মেয়ে পক্ষ নানা প্রশ্ন করছে। এখন দেখেছো কয়টা বাজে। কাজী কই?
আমি: মা আমি কাজী আনতে পারিনি।
মা: কি করছিলি এতোক্ষণ? নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছিলি! বিয়েটা হয়েছে।আমি জানি তোমার আশায় থাকলে কিছু হবে না। অপদার্থ একটা।
রবিন: ঠিক বলছো কাকিমা। নাম্বার ১ অপদার্থ স্যারের নাম্বার ১ বেয়াদপ ছাএ আমি।
আমি: হা হা হা হা হা....।
প্রজন্মনিউজ২৪/মনিরুল