মোটা হওয়ার সহজ ও কার্যকরী উপায়

প্রকাশিত: ২৪ মে, ২০২২ ০৫:১৩:৪৩ || পরিবর্তিত: ২৪ মে, ২০২২ ০৫:১৩:৪৩

মোটা হওয়ার সহজ ও কার্যকরী উপায়

লিকলিকে চিকন শরীর নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-প্রতিবেশী, চেনা-অচেনা মানুষের কাছ থেকে হ্যাংলা-পাতলা শরীরের জন্য ঠাট্টার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এই সোস্যাল বুলিং থেকে বাঁচতে অনেকেই মোটা হওয়ার পথ খুঁজে থাকেন। তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই আজকের আলোচনা।

নিয়মিত নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মোটা হওয়ার কিছু সহজ ও কার‌্যকরী টিপস নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১. সকালে উঠে বাদাম ও কিসমিস
ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম আর কিসমিসের বিকল্প নেই। রাতে ঘুমাবার সময় অল্প জলে আধ কাপ কাঠ বাদাম ও কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন ৷ সকালে সেগুলো ফুলে উঠলে খেয়ে নিন।

২. খান প্রচুর শাক সবজি ও ফল
ভাবছেন এগুলো তো ওজন কমাবার জন্য খাওয়া হয়, তাই না? ওজন বাড়াতেও কিন্তু আপনাকে সাহায্য করবে এই ফল আর সবজি। এমন অনেক ফল আর সবজি আছে যারা কিনা উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঁচা কলা ইত্যাদি ফল ও সবজি খেলে ওজন বাড়বে।
যদি এইসব না করেও আপনার ওজন না বৃদ্ধি পায়, তাহলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা কোনও সুপ্ত অসুখ থাকলেও তার ফলে রুগ্ন ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন।

৩. খাবারের পরিমাণ বাড়ান
খাবারের পরিমাণ বাড়ানো মানেই একগাদা খেয়ে ফেলা নয়। আপনি যদি কম খাওয়ার কারণে রোগা হয়ে থাকেন, তাহলে খাবারের পরিমাণ আপনাকে বাড়াতেই হবে। স্বাভাবিকভাবে যা খেয়ে থাকেন, তার ৪ ভাগের ১ভাগ পরিমাণ খাবার বাড়িয়ে খান প্রতিদিন।

৪. বারবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন
অনেকেই ভাবেন যে বারবার খেলে বুঝি ওজন বাড়বে। এটা মোটেও সঠিক না। বরং নিয়ম মেনে পেট পুরে খান। পেট পুরে খাওয়া হলে মেটাবলিজম হার কমে যায়, ফলে খাবারের ক্যালোরির অনেকটাই বাড়তি ওজন হয়ে শরীরে জমবে। অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াটা মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, ফলে ওজন কমে। মোটা হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেট ভর্তি রাখা। পেট খালি হলে সামনে যা পাবেন তাই খেয়ে নিন। মূল কথা হলো কোনোমতেই পেট খালি রাখা যাবে না। এ জন্য সবসময় সাথে কাজু বাদাম ও কলা রাখতে পারেন। এই দুটি উপাদান দ্রুত ওজন বাড়াবে।

৫. খাদ্য তালিকায় রাখুন ডুবো তেলে ভাজা খাবার
ডুবো তেলে ভাজা খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে। ফলে সেটা ওজন বাড়াতে সহায়ক। তবে সাথে রাখুন প্রচুর তাজা শাক সবজির স্যালাড।

৬. জিমে যাওয়া অভ্যাস করুন
ভাবছেন জিমে মানুষ যায় ওজন কমাতে, বাড়ানোর জন্য কেন যাবেন? কিন্তু আসল কথাটা হলো, কেবল মোটা হলেই হবে না। সাথে তৈরি করতে হবে সুগঠিত শরীর। আপনি জিমে যাবেন পেশী তৈরি করতে, এবং পুরুষেরা ওজন বাড়াতে চাইলে এই জিমে যাওয়া আসলে খুবই ফলদায়ক। পেশীর ওজন চর্বির চাইতে অনেক বেশী তো বটেই, তাছাড়া ব্যায়ামের ফলে খিদেও পাবে আর মন ভরে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ট্রেনারের নির্দেশে ব্যায়াম করতে হবে। নাহলে হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা।

৭. খান “ফ্যান” ভাত-
অধিকাংশ মানুষই ভাতের ফ্যান ফেলে দেয়৷ ফ্যান ফেলে দিয়ে ভাতের স্টার্চের অনেকটাই চলে যায় ফ্যানের সঙ্গে। ওজন বাড়াতে চাইলে ভাতের ফ্যান না ফেলাই ভালো। এর ফলে ভীষণ উপকার হবে ওজন বাড়াতে। আতপ চালের ফ্যান ভাত মজাও লাগবে খেতে।

৮. ঘুমাবার ঠিক আগেই দুধ ও মধু
ওজন বাড়াবার জন্য একটা একটা অব্যর্থ কৌশল। রাতের বেলা ঘুমাবার আগে অবশ্যই পুষ্টিকর কিছু খাবেন। ঘুমাবার আগে প্রতিদিন এক গ্লাস ঘন দুধের মাঝে বেশ অনেকটা মধু মিশিয়ে খেয়ে নেবেন।

৯. কমান মেটাবলিজম হার
মোটা হবার পেছনে যেমন ধীর গতির মেটাবলিজম দায়ী, তেমনি রুগ্ন স্বাস্থ্যের পেছনে দায়ী উচ্চ মেটাবলিজম হার। সুতরাং মোটা হতে গেলে প্রথমেই এই মেটাবলিজম হার কমাতে হবে। তাতে আপনি যে খাবারটা খাবেন, সেটা বাড়তি ওজন রূপে আপনার শরীরে জমার সুযোগ পাবে। মেটাবলিজম হার কম রাখার জন্য প্রতিবেলা খাবারের পর লম্বা সময় বিশ্রাম করুন। খাবার পর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা কোনও কাজ করবেন না।

১০. খাদ্য তালিকায় যোগ করুন কিছু বিশেষ খাবার
আপনার নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই কিছু উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার যোগ করতে হবে খাদ্য তালিকায়, নাহলে ওজন বাড়বে কেন? উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা না থাকলে এই খাবার গুলো খেতে পারেন অনায়াসে। যেমন- ঘি/ মাখন, ডিম, চিজ/ পনির, কোমল পানীয়, গরু-খাসির মাংস, আলু ভাজা, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকলেট, মেয়নিজ ইত্যাদি।

১১. ফাস্ট ফুড খাবার বেশি বেশি খান
সফট ড্রিংক এবং ফ্যাটি খাবার খেলে স্বাস্থ্য মোটা হয়। এতে বেশি পরিমাণে ইনসুলিন থাকে। ইনসুলিন আমাদের হরমোন তৈরি করে। যার সাহায্যে আমাদের শরীরে র্কাবোহাইড্রটে, প্রোটিন এবং ফ্যাট জমে। যখন ফ্যাটি ফুডস্ খাবেন, তখন বেশি পানি পান করুন। সফট ড্রিংক নয়। এটা খেলে আপনি ফ্যাটি ফুড খেতে পারবেন না। এতে করে আপনার চিকন স্বাস্থ্য খুব তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যাবে।


১২. সময় মতো খাবার খাওয়া
প্রতিদিন একটা সময় ধরে খাবার খাবেন। সকালে খুব তারাতারি ঘুম থেকে উঠে এক ঘন্টার মধ্যে সকালের নাস্তা শেষ করুন। সকালে প্রচুর পরমাণে খেয়ে নিতে পারেন। বার্গার, ভাজা খাবার, চিকেন, ফাস্ট ফুড, ব্রস্টে খেলেও ক্ষতি নেই। তবে তেলজাতীয় খাবার থেকে একটু দূরে থাকাই ভালো। চেষ্টা করবেন সকালে বেশি বেশি ভাত খেতে। সাথে নিয়মিত দুইটি ডিম খেতে পারেন।

১৩. প্রচুর ফলমূল-
প্রচুর পুষ্টিকর ফলমূল খাবার। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফল এবং ফলরে রস খান। ফলের তৈরি বিভিন্ন সিরাপ, গাম, জ্যাম, জ্যালি এগুলো বেশি বেশি করে খান। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাট আছে যা আপনার স্বাস্থ্য মোটা করবে।

১৪. পুষ্টিকর খাবার ও নিয়মিত পর‌্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো
যদি নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান এবং রাতের ঘুম ঠিক রাখেন, তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি আপনার স্বাস্থ্য মোটা করতে পারবেন। ঠিকমতো না ঘুমাতে পারলে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরী ধরে রাখতে পারে না। রাতে খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন। অভ্যাস করুন সকাল সকাল উঠার।

১৫. টেনশনমুক্ত থাকুন-
মোটা হওয়ার শর্তে আপনাকে অবশ্যই টেনশন ফ্রি থাকতে হবে। আপনি যদি খুব বেশি টেনশন করে থাকেন তাহলে আজকেই মাথা থেকে সব টেনশন দূর করে ফেলেন। তাই বলে যে, একেবারেই টেনশন করা থেকে বিরত থাকবেন তা কি হয়! পরিবার, ক্যারিয়ার নিয়ে একটু আধটু তো টেনশন আপনাকে করতেই হবে। অতিরিক্ত টেনশন মোটেই কাম্য নয়। টেনশন মুক্ত থাকলে মেজাজ ফুরফুরে থাকে ফলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। যা আপনাকে দ্রুত মোটা হতে যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।

১৬. ধূমপান থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকুন
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপানে আপনি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাথে আপনার আশেপাশে অবস্থানরত মানুষদেরও ক্ষতি করছেন। ধূমপান আপনার ফুসফুসে ক্যান্সারসহ নানা রোগের জন্ম দিবে যা সাধারণত হিতে বিপরীত হয়।

স্বাস্থ্যও অনেক সময় অসুখের মূল কারণ হয়ে দ্বারায়। যারা অত্যধিক মোটা তারাই বুঝে স্বাস্থ্য তাদের জন্য কত বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, মোটা হওয়া নিয়ে উঠে-পড়ে না লেগে সুস্থ থাকা নিয়ে কর্মতৎপরতা চালানো আমাদের সকলের উচিত। তবে যারা একান্তই লিকলিকে স্বাস্থ্যের অধিকারী তাদের ক্ষেত্রে উক্ত পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ রইল। মোটকথা, মোটা হওয়ার চেয়ে সুস্থ থাকা জরুরি। সুস্থ দেহ, সুস্থ মনের অধিকারী ব্যক্তিই প্রকৃত সুখী।
 


প্রজন্মনিউজ২৪./এসএমএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ