ভয়াবহ খাদ্য সংকটে শ্রীলঙ্কা

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ২১ মে, ২০২২ ০৩:০৪:৩৭

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কা

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কায় এবার খাদ্য ঘাটতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেদেশের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার এক টুইটে তিনি এই সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি আগামী মৌসুমে চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত সার আমদানির আশ্বাসও দিয়েছেন।

গত বছর এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে সব রাসায়নিক সারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যশস্যের ফলন দারুণভাবে কমে যায়। সরকার ভুল বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত বদলালেও যথেষ্ট পরিমাণে সার আমদানি করা যায়নি ডলারের অভাবে।

টুইটারে রানিল বিক্রমাসিংহে বলেন, চলতি মৌসুমের জন্য (মে-আগস্ট) সার সংগ্রহের পর্যাপ্ত সময় না থাকলেও, সামনে (সেপ্টেম্বর-মার্চ) পর্যাপ্ত সারের মজুত নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যেককে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ শ্রীলঙ্কা বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার কলম্বোর পেত্যাহ বাজারে ফল ও সবজি বিক্রেতা নারী এ পি ডি সুমনাভাথি (৬০) বলেন, ‘জীবনযাপন কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে তা নিয়ে কথা বলার এখন কোনো অর্থ নেই। দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতি কী হবে তা আঁচ করতেও পারছি না আমি, এই দশা চলতে থাকলে আমরা হয়তো এখানে থাকতেও পারব না।’ এই বিক্রেতার কাছেই, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি দেখা গেল। এই গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এখন আকাশচুম্বী। খণ্ডকালীন গাড়িচালক মোহাম্মদ শাজলি বলেন, ‘মাত্র ২০০ সিলিন্ডার দিয়েছে, অথচ এখানে ৫০০ মানুষ অপেক্ষায় আছে।’ 

তিনি জানালেন, তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের খাবার রান্নার ব্যবস্থা করতে এ নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তার পরও সিলিন্ডার পাবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। শাজলি বলেন, ‘গ্যাস বা কেরোসিন তেল ছাড়া তো আমরা চলতে পারি না। শেষ বিকল্পটি কী? খাবার ছাড়া আমরা মরতে যাচ্ছি। ১০০ ভাগ নিশ্চিত, এটাই ঘটবে।’

বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, বিশ্ব ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণ ও রেমিটেন্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামান্য হলেও কেটেছে। তা দিয়ে জ্বালানি ও রান্নার জন্য গ্যাসের দাম মেটানো যাবে, কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অন্যান্য পণ্যের সরবরাহও বজায় রাখতে হতে। শ্রীলঙ্কায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছায়, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মাস দুয়েকের মধ্যে তা আরো বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন গভর্নর। এদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কলম্বোর রাজপথে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়ো হয়। কাঁদুনে গ্যাস ও গরম পানি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের মতো তার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ারও পদত্যাগ দাবি করছে।

আর্থিক সংকট বেড়ে চলায় গত সপ্তাহে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাকসে। সেদিনের সহিংসতায় ৯ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রানিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে আনেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া। বিশ্বের শীর্ষ সাত উন্নত অর্থনীতির দেশের জোট জি-৭ জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা লাঘবের উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার জার্মানিতে এক সভা শেষে জি-৭-এর অর্থমন্ত্রীরা কলম্বোকে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিনই নিজেদের ইতিহাসে প্রথম ঋণখেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল ভিরাসিংহে বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছেন তারা এবং এই প্রস্তাব দ্রুতই তারা মন্ত্রিসভার সামনে উপস্থাপন করবেন।

ঋণখেলাপি পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে শ্রীলঙ্কার সরকার এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ২৪ মের মধ্যে দুই পক্ষে আলোচনা একটি পর্যায়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।


প্রজন্মনিউজ২৪/মনিরুল  

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ