মিঠাপুকুরে এক শিক্ষককে পেটালেন আরেক শিক্ষক

প্রকাশিত: ১৯ মে, ২০২২ ০৩:২১:৪২

মিঠাপুকুরে এক শিক্ষককে পেটালেন আরেক শিক্ষক

খন্দকার রাকিবুল ইসলাম,রংপুরঃ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের মিয়ারহাট আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন এর সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত  প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়ার  বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

গত সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।অভিযোগ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের ৮৫ মাসের বকেয়া বেতন উত্তোলন ও হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পুনর্বহালের আবেদনে সাড়া না দিয়ে টালবাহনা করায় বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়াকে ঘাড় ধরে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়।এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মৌলভী শিক্ষক নুরুজ্জামান হামিদী ও প্রতিষ্ঠানের পিয়ন আব্দুল্লার সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্কুল সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা কামালউদ্দিন আংকেল জানান,আমরা অনেক কষ্ট করে এ প্রতিষ্ঠান গড়িয়েছি।কিন্তু বাদল মাস্টার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়ে ২২ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করলো।সেই টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নতো দূরের কথা।একটি বদনাও কেনা হয়নি।আগে ওনি হেঁটে স্কুল করতো।এখন মোটরসাইকেল  চালান।বাড়িও দুই তালা করতেছেন।তার এই উন্নতি হয়েছে নিয়োগ বাণিজ্যের পরেই।কিন্তু স্কুলের বিন্দু পরিমান ও উন্নয়ন হয়নি।

মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মিয়ারহাট আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার জানান-হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাসের বেশি কাউকে বরখাস্ত করে রাখা যাবে না।মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে তিন বছর ধরে তিনবার দরখাস্ত দেয়ার পরও বেআইনিভাবে ভাবে আমাকে স্বপদে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।গেল সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি বুধবার  ম্যানেজিং কমিটির মিটিং করার কথা বলেন। ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের সভার কোন চিঠি না করেই নতুন করে টালবাহানা শুরু করেন।

সোমবার সকালে  মিটিং এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সভাপতি আসেনি তাই মিটিং হয়নি।সভাপতি আমার কথা শুনে না।প্রতিউত্তরে তাকে বলি এডহক সমিতির সভাপতি তুমি দূরের লোককে বানাইছো।সে প্রতিষ্ঠানে আসেনা। তোমার বানানো সভাপতি তোমার কথা শুনে না।এসব টালবাহনা বাদ দেও।আমাকে পূর্নবহাল করতে হবে।আর আমার বকেয়া বেতন ভাতা তুলতে হবে।তখনি বাদল মাস্টার প্রতিষ্ঠান থেকে বের  হওয়ার হুমকি দেন।আমি রাগের বশবর্তী হয়ে তার ঘাড় ধরে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি।এসময় তার সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কারণে আমার বেতনের অর্ধেক অংশ ২০১৫ সালের ৯ মাসসহ ৮ বছরে ৯,৭৭,৫০০ টাকার বেশি রিফাইন্ড হয়েছে।এ টাকা তুলার জন্য মোট টাকার অর্ধেক অন্যের মাধ্যমে দাবি করেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া জানান-  নাশকতার মামলার কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার জেলহাজতে গেলে ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠানে তিন বৎসর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন কামরুল আলম, পরে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন তাকে।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে এসে সাময়িক বরখাস্ত তুলে নিয়ে নিজ পদে পূর্ণবহালের জন্য বলেন।গত সোমবার সকালে আমাকে মিটিংয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আমি বলি সভাপতি না আসার কারনে মিটিং হয়নি।ঠিক তখনি জয়নাল আবেদিন মাস্টার উত্তেজিত হয়ে বলেন,আমাকে পূনর্বহাল করতেই হবে।বলেই আমাকে হাত দিয়ে মারা শুরু করেন।যে শিক্ষকেই আমাকে  বাঁচাতে এসেছে।তাকেই মারপিট করা হয়েছে।

মৌলভী শিক্ষক নূরুজ্জামান হামিদীকে ক্লাস থেকে বের করে এনে মারা হয়েছে।আমাকে অনেকক্ষণ মারপিট করা হয়েছে।কেউ এগিয়ে আসেনি।মারপিট শেষে হুমকি দেয়া হয়েছে এবার হাত দিয়ে মারলাম।আগামী বুধবারের  মধ্যে পুনর্বহাল করা না হলে বৃহস্পতিবার লাঠি দিয়ে মারা হবে।নিয়োগ বাণিজ্যের ২২ লক্ষ টাকার আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান,এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।কে কাকে টাকা দিয়েছে।এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে হবে।আমাকে মারপিটের ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যই   এ অভিযোগ তোলা হয়েছে।

মারধরের বিষয়ে মৌলভী শিক্ষক নুরুজ্জামান হামিদীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা।জয়নাল স্যার আমার গুরুজন।দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির সময়ে আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি।

প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী শিক্ষক নূরুল ইসলাম জানান,জয়নাল স্যার হাইকোর্টের রায় নিয়ে বিগত দুই বছর থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পুনর্বহালের জন্য ঘুরতেছে।কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে পুনর্বহাল তো দূরের কথা অফিস রুমে ঢুকতে পর্যন্ত দেয়নি।তিনি এখনও আইনগতভাবে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন।তাকে কেন অফিস রুমে ঢুকতে দেয়া হলো না এটা নিয়ে আমরা গত ৮/৯ মাস আগে স্কুলের মাঠে বসে সমস্ত শিক্ষক মিলে প্রতিবাদ ও জানিয়েছিলাম।গত সোমবার এসব নিয়েই দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।আমাদের সমস্ত শিক্ষকের দাবি জয়নাল আবেদীন মাস্টার কে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পূনর্বহাল করা হোক।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এডহক সভাপতি ফুয়াদ মন্ডল জানান, প্রতিষ্ঠানটি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে।ব্যস্ততার কারণে প্রতিষ্ঠানে তেমন একটা যাওয়া হয়না।মারামারির বিষয়ে শুনেছি।কি নিয়ে মারামারি হয়েছে।এখন পর্যন্ত জানি না।আজকে স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিবো এ ব্যাপারে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। তদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রজম্মনিউজ২৪/ফারহান আহমেদ
 

এ সম্পর্কিত খবর

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে হাজারও কোটি টাকার সম্পদ

সরদার পাড়া দারুল কোরআন মডেল মাদ্রাসার পরিক্ষার ফল প্রকাশ

৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

চলতি বছর পবিত্র হজ্জ পালনের অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ

বশেমুরবিপ্রবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি: কাদের

অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কৃষকের জনজীবন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ