যাত্রী কল্যাণ সমিতির বিবৃতি

ঈদযাত্রায় ৩৭২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৬

প্রকাশিত: ১২ মে, ২০২২ ০১:৩৬:৩৮ || পরিবর্তিত: ১২ মে, ২০২২ ০১:৩৬:৩৮

ঈদযাত্রায় ৩৭২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৬

বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক—মহাসড়কে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ৮৪৪ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ—পথে সম্মিলিতভাবে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আজ ১২ মে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতেল এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন—২০২২ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারো প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘ ০১ যুগেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

এবারের ঈদে করোনা মুি্ক্তর কারনে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়। বিগত ০২ বছর করোনা সংকটের কারনে গণপরিবহন বন্ধ—চালুর ফাঁকে প্রায় ১০ লাখ মোটরসাইকেল ও ২০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নামে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল, ৪০ লাখ ইজিবাইক বহরে থাকার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার উল্লেখযোগ্য তৎপরতার কারনে ঈদ যাত্রা কানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বরাবরের মতো বেড়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কমস্থলে ফেরা ১০ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ৮৪৪ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সাথে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪.৫১ শতাংশ, নিহত ২২.৩৫ শতাংশ, আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ০৪ জন আহত হয়েছে। নৌ—পথে ০৩টি দুর্ঘটনায় ০২জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত, ১১০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩.০৩ শতাংশ প্রায়।

এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২০৯ জন চালক, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ০২ জন সাংবাদিক, ০৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ০২ জন শিক্ষক, ০৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ০২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০১ জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে  ০২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০১ জন পুলিশ সদস্য, ০২ জন ডিজিএফআই সদস্য , ০১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ০২ জন নৌবাহিনীর সদস্য,  ৩৫ জন নারী, ০১ জন চিকিৎসক, ২৫ জন শিশু , ২৫ জন শিক্ষার্থী, ০২ জন শিক্ষক, ১২৫ জন চালক, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬০ জন পথচারী, ০৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৮.৭৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৫.৪৯ শতাংশ ট্রাক—পিকআপ—কাভার্ডভ্যান—লরি, ৮.৪৫ শতাংশ কার—মাইক্রো—জিপ, ৫.২৩ শতাংশ নছিমন—করিমন—ট্রাক্টর—লেগুনা—মাহিন্দ্রা, ৮.৮৫ শতাংশ অটোরিক্সা, ৫.৪৩ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা—ইজিবাইক—ভ্যান—সাইকেল, ও ১৭.৯০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
 
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২০.৯৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪২.৪৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫.৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ১৯.৮৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারনে, ১.০৭ শতাংশ ট্রেন—যানবাহন সংঘর্ষ ও ০.২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৩.৮৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪.৩৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৮৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২.৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি প্রতীকি চিত্র বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ার কারনে পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ পঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও ঈদের এইসময়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন হারে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫ শতাংশ ইজিবাইক দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২’শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। দেশের বিভাগীয় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালেও আক্রান্ত রোগীর যেধরনের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের চিত্র সংরাদপত্রে উঠে আসেনা বলেই আমরাও এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, সড়ক, রেল ও নৌ পথের উন্নয়নে সরকার কয়েক লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প প্রায় একযুগ ধরে বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা, মেগা প্রকল্পের কারনে এসব প্রকল্প এখনো চালু না হওয়ায় অন্যদিকে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায়,ভোগান্তি ও যানজট থেকে বাচঁতে মানুষ বিকল্প হিসেবে এসব ছোট পরিবহনের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা কল্পনার চেয়েও বেশি গতিতে বাড়ছে। তিনি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানী বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহনকে বিকশিত করার দাবী জানান।


বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ৫ লাখ মোটরসাইকেল বিপনন করে ব্যবসায়ীরা ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই বাহনটি কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। এবারের ঈদে যারা মোটারসাইকেল ব্যবহার করেছে তারা রাইড শেয়ারিং নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ—সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ন মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।  


প্রজন্মনিউজ২৪/নুরউদ্দিন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ