দুই বিষয় সংশোধন করে ইসি আইন চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী, ২০২২ ০৬:৫১:৪১

দুই বিষয় সংশোধন করে ইসি আইন চূড়ান্ত

প্রজন্ম ডেস্ক:  নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে করা আইনের খসড়ায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তে দু’টি পরিবর্তন আনার সুপারিশ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, আগামীকাল বুধবার জাতীয় সংসদের বৈঠকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হতে পারে। সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে বিলে পরিবর্তন আনার কথা সাংবাদিকদের জানান আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতাসংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তাঁর অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় কিছুটা সংশোধনী এনে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ ?যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ ছাড়া অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬(ঘ) ধারায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

এ ধারায় বলা হয়েছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদণ্ড উঠিয়ে শুধু ‘কারাদণ্ড’ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে যেকোনো মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সিইসি বা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

 শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। যোগ্যতা ও অযোগত্যার জায়গায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেভাবেই সংসদে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের কারাদণ্ডের জায়গাটা পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই বছর উঠিয়ে কারাদণ্ড করে দেয়া হয়েছে। আর সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছি।’ সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা আগের দু’টি কমিশনকে আইনি বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, অনেকে এটাকে ইনডেমনিটি বলছেন, তবে এটা ইনডেমনিটি নয়। বিলের ৯ দফায় আগের দুটি সার্চ কমিটিকে আইনি বৈধতা দেয়া হয়েছে। রোববার বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপি দলীয় এমপি রুমিন ফারহানা কমিটির বৈঠকে বিলটিতে কিছু সংযোজনীর প্রস্তাব করেছিলেন। তবে তার প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়নি। এ প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি বৈঠকে বলেছেন, আইনটির খসড়া নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ আলোচনা করা হয়নি। ২০১৭ সালের ২৫শে জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের জন্য যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন, তার সঙ্গে এই খসড়ার কোনো পার্থক্য নেই। যে কারণে অনেকে এটাকে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলছেন।

 তিনি প্রস্তাব করেছেন, সার্চ কমিটি কাদের নাম প্রস্তাব করলো, সেটা প্রকাশ করতে হবে, তার ওপর আলোচনা হবে, তারা আসলেই যোগ্য কি না, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা হয়নি। আইনের ৯ ধারায় ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। এটা আইনের ‘বেসিক কনসেপ্টের’ পরিপন্থি। রেস্ট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট দেয়া আইনের চোখে কখনো ভালো চোখে দেখা হয় না। তবে তার প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়নি। এদিকে বিলের সংশোধনী ও বিএনপি দলীয় এমপির বক্তব্য প্রসঙ্গে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন,আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির শিকার। ইনডেমনিটি দেয় না। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী একথা বলেন। তবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন,আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি দেয়। আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না, এটা জানা উচিত।

 ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি কারা দিয়েছিল? ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স করার করেছিল? বরং আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল। এখানে কাউকে ইনডেমনিটি দেয়া হয় নাই। তিনি বলেন, আইনে দু‘টো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে ইনডেমনিটি আর একটা হচ্ছে লিগ্যাল কাভারেজ। দু’টো কিন্তু এক জিনিস না। ইনডেমনিটি হচ্ছে মাফ করে দেয়া, তাদের আইনের আওতা থেকে বের করে দেয়া। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে- আইনের ভেতরে আনা। দফা-৯ এ পরিষ্কারভাবে পড়ে দেখেন কারো কৃতকর্মকে ইনডেমনিটি দেয়া হয় নাই। এ সময় রুমিন ফারহানা বলেন, নিশ্চয় সব ব্যাপরে একমত হওয়া যায় না। একমত হয়ও নাই। খুব তড়িঘড়ি করে আইনটি হয়েছে। একদিনের বৈঠকে আইনটিতে পৌঁছে গেছি। আইনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার দরকার ছিল, কিন্তু সেটা করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিলে দফা (৮) এ বলা আছে মন্ত্রিপরিষদ সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমি বিরোধিতা করেছি। কারণ আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন তিনি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, আমি (আব্দুল মতিন) দুদকের সার্চ কমিটিতে ছিলাম। সেখানে দেখেছি তারা সার্চ কমিটিতে যাদের চাচ্ছেন তাদের সিভি জমা দেয়। এখানে আসলে সার্চ কমিটির তেমন কিছু করার থাকে না। তারা শুধু সিভিগুলো দেখেই সেই নাম প্রস্তাব করতে বাধ্য হয়। সেখানে কোনো স্বাধীনতা থাকে না। তাছাড়া আমি দফা (৭) এর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি এবং দফা (৯) এর ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছি। রুমিন ফারহানা বলেন, একটা কথা এসেছে আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না। আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি দেয়। কারণ খন্দকার মোশ্‌তাক আহমেদ আওয়ামী লীগেরই সদস্য ছিলেন, তিনিই ইনডেমনিটি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে, আজকে এই আইনের ক্ষেত্রেও ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। যদিও লিগ্যাল কাভারেজ বলে এটাকে ভিন্নভাবে সৌন্দর্য্যবর্ধিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা একেবারেই ইনডেমনিটি। আগের দুই কমিশন কি কাজ করেছে, তাদের কীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এটা যদি ইনডেমনিটি না হয়, ইনডেমনিটির সংজ্ঞা জানতে চাই। এ বিষয়ে কমিটিতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ওই দু’টি ধারায় পরিবর্তন ছাড়া বিলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। কমিটির সুপারিশসহ সংশোধিত আকারে বিলের প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার সংসদে প্রতিবেদনটি উত্থাপন হলে পরদিনই বিলটি পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। 

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, শামসুল হক, আবদুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার, রুমিন ফারহানা ও সেলিম আলতাফ অংশ নেন। উল্লেখ্য, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সার্চ কমিটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি গত  রোববার সংসদে উপস্থাপন করা হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উপস্থাপনের সময় বিএনপি’র সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশিদ আপত্তি জানালেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ১৭ই জানুয়ারি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।


প্রজন্মনিউজ২৪/সুইট

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ