শাবিপ্রবি ভিসির বাড়ির বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী, ২০২২ ০৫:৩২:০৮

শাবিপ্রবি ভিসির বাড়ির বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে অবস্থান নেন।
                                

টানা ১০০ ঘণ্টা অনশনের পরও উপাচার্যের পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তাঁরা।

এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতায় সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত।

এর আগে গতকাল বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভিসি যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে তাঁকে অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব আমরা। ’

এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভবন মানবশিকলে ঘেরাও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলে দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ছাড়া অন্য কাউকে উপাচার্য ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ঘেরাওয়ের পাশাপাশি গতকাল বিকেলে উপাচার্য ভবনের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিতে একাধিক খাট বসিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনে নতুন করে আরো পাঁচজন যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা আন্দোলনস্থলে অনশন করছেন। এঁদের বেশির ভাগকে সেলাইন দেওয়া হচ্ছে।

সময় যত গড়াচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জনসমর্থনও বাড়ছে। গতকাল সিলেটের ৩৫টি সংগঠন শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিবৃতি, দুটি সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ১০১ জন ছাত্রলীগ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন।

মানবশিকলে বন্দি উপাচার্য ভবন : গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মানবশিকল তৈরি করে বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি শুরুর পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাফিজা আনজুম। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে। উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে ভিসির বাসভবনের জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছি। আমরা এখানে বসে অনশন করছি, আর সবাই গিয়ে ভিসির সঙ্গে দেখা করবেন, সেটা হয় না। এ কারণে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে শাবিপ্রবির সাবেক ১০১ ছাত্রলীগ নেতার তিন দফা : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাবি ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি মো. ফরিদ আলম। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ থেকে সর্বশেষ ব্যাচের ১০১ নেতার সম্মতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হচ্ছে—অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে হবে। এর জন্য তাঁদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কথিত যে পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে, তা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।

উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে ৩৫ সংগঠনের বিবৃতি : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের অপসারণ প্রয়োজন বলে দাবি করেছে সিলেটের ৩৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলে, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এক দফা দাবিতে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং অতি দ্রুত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। ’

সিলেটের বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজসহ বিভিন্ন বিদ্যাপিঠের সংগঠনও রয়েছে।

নাট্য পরিষদের উদ্বেগ : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের নেতারা। সংগঠনের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সম্পর্কের অবনতি শিক্ষাব্যবস্থায় চরম সংকট তৈরি করেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে দ্রুত সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই। ’

ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল : অনশনের ১০০ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ পদত্যাগ না করায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করে। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তমঞ্চের সামনে এসে উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা।

ঢাবির দুই শিক্ষার্থীর সংহতি : সিলেটে এসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে তাঁরা সংহতি জানান। ঢাবির এ দুই শিক্ষার্থী হলেন ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাহফুজুর রহমান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা যা বললেন : শনিবার মধ্যরাতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে আমাদের সব ঘটনা বলেছি। তিনি বলেছেন, আমরা যাতে অনশন বন্ধ করি এবং এটা নিয়ে আলোচনায় বসি। আলোচনার মাধ্যমে এমন একটা পথ বের করি, যাতে কারো ক্ষতি না হয়। ’ তাঁরা আরো বলেন, ‘এ ছাড়া তিনি আগামীকাল (রবিবার) দুপুরের পরে আমাদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবেন। ’

তবে গতকাল রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ফের আলোচনার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।


প্রজন্মনিউজ২৪/সুইট

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ