বিষপান করতে করতে নীলকণ্ঠ হয়ে পড়েছি: তৈমূর

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারী, ২০২২ ১২:৪৯:৪৬

বিষপান করতে করতে নীলকণ্ঠ হয়ে পড়েছি: তৈমূর

২০১১ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ‘কোরবানি’ হয়েছেন। সেই রাগ-ক্ষোভ-অভিমান তাকে কম দংশন করেনি। এবার দল পদ কেড়ে নেওয়ার পরও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। পরাজয়ের পর আরো কঠিন শাস্তিও অনুমেয় ছিল। তাই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সহজে মেনে নিলেন। ঘনিষ্ঠজনদের তৈমূর আলম বলেছেন, ‘বিষপান করতে করতে নীলকণ্ঠ হয়ে গেছি। এখন আর কষ্ট পাই না। আমি কঠিনে রে ভালোবেসেছি।’

তবে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই মনে করেন, তৈমূর আলমের দলীয় পদ প্রত্যাহার করা যথেষ্ট ছিল। বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলেও পারতেন কেন্দ্রীয় নোতারা। তার সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে। দুই নেতার অনুপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

তবে তৈমূরবিরোধীরা মনে করেন, কঠিন শাস্তিই তার প্রাপ্য ছিল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে কঠিন শাস্তি না হলে অন্যরা একই ধরনের ‘অপরাধে উৎসাহিত’ হবেন।

অন্য দলে যাব না : তৈমূর

বহিষ্কার করলেও দল পরিবর্তন করবেন না, অন্য কোনো দলেও যাবেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে  গণমাধ্যমকে সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তৈমূর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভোট ডাকাতির বাক্স। এর বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন করবেন তিনি।

বহিষ্কার প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, ‘আমি মনে করি রাজনীতি করতে দল থাকতে হয়। কিন্তু পদ-পদবির দরকার হয় না। আমার প্রতি দলের সিদ্ধান্ত কেউ আমাকে টেলিফোনে বা চিঠিতে জানায়নি। তবে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সমর্থক থেকে তো বহিষ্কার করতে পারেনি। দলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাব।’

দলের এই সিদ্ধান্তে কারো প্রতি ক্ষোভ নেই বলেও জানান তৈমূর আলম। তিনি বলেন, ‘আমি দলের কর্মী না কর্মচারী তা এখনো বুঝতে পারিনি। বহিষ্কারের আগে শোকজ করেনি, ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি।’

বহিষ্কৃত অপর নেতা এ টি এম কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিএনপির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি, দল ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না। দলের সমর্থক হিসেবে কাজ করব। বহিষ্কার প্রত্যাহারের আবেদন করব না।’

এ টি এম কামাল বলেন, নেতৃত্ব এক দিনে সৃষ্টি হয় না, অনেক সময় লাগে। দলে কেউ অপরিহার্য নয়, কিন্তু দলে প্রত্যেক নেতাকর্মীর অবদান আছে। নেতার অভাব দুঃসময়ে বোঝা যায়। তিনি বলেন, ‘বহিষ্কারের পর তৈমূর আলমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে সান্ত্বনা দিয়েছি। জবাবে তৈমূর বলেছেন, বিষপান করতে করতে নীলকণ্ঠ হয়ে পড়েছি। কঠিনে রে আমি ভালোবেসেছি।’

নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার দুই নেতাকে বহিষ্কারের পর গতকাল বুধবার স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের চারজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের তিনজন বলেন, ঘরের পিলার একটি একটি করে সরে গেলে ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে হয়তো বোঝা যাবে না। কিন্তু দলের দুঃসময়ে অনুধাবন হবে।

নেতারা বলেন, ২০১১ সালে নির্বাচনের আগের রাতে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে তাঁকে কোরবানি দিয়েছিল। এবার বহিষ্কার করার আগে তা ভেবে দেখা উচিত ছিল। রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থাকলেও দল ছাড়েননি, নিষ্ক্রিয়ও হননি তৈমূর। বরং সব আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

জানা গেছে, তৈমূরের মেয়ে ব্যারিস্টার মারিয়াম খন্দকার মঙ্গলবার দলের দুজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে বাবার বিষয় নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। মারিয়াম নিজেও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন।


প্রজন্মনিউজ২৪/আল-নোমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ