ভোলার মনপুরা দ্বীপ যেন সৌন্দর্য্যের পূর্ণতায় ভরে আছে

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৬:৪৫:৪২

ভোলার মনপুরা দ্বীপ যেন সৌন্দর্য্যের পূর্ণতায় ভরে আছে

ভোলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলা জেলা, আর ভোলার মনপুরা দ্বীপ যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি। নদীমাতৃক আমাদের এই দেশটির সৌন্দর্যে অপরুপ মাত্রা দিয়েছে অসংখ্য নদী। 

নদীপথ, নদীতীরের মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুই আমাদের টানে ভিন্ন এক আকর্ষণে। তাই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে একটু মনকে শান্তির ছোঁয়া দিতে আজও আমরা ছুটে যায় নদীর কাছে।

ভোলার মনপুরা দ্বীপটি ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এজন্যই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দিনে দিনে। মেঘনার বুকে মায়াবী এই দ্বীপটিতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। দ্বীপটি তার নামের মতই এর অবারিত সৌন্দর্য দিয়ে পূর্ণতায় ভরে দিবে আপনার মন। দ্বীপ জেলা ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছোট্ট এক দ্বীপ মনপুরা।

ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা আটশ বছরের পুরানো এ দ্বীপটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আসলে মুখে বলে এই দ্বীপের সৌন্দর্য বোঝানো সম্ভব নয়।

যে এই মায়াবী দ্বীপে একবার না এসেছেন সে কখনোই বুঝতে পারবেনা কি সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এ দ্বীপে। মনপুরা দ্বীপ বর্তমানে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চারদিকে পানি, সবুজে সবুজে ভরপুর নীরব জনপদ এই মনপুরা। সবুজ পাখা মেলে এখানে, নীরবতা শাসন করে আর পানি তার অপার আদর দিয়ে ঘিরে রাখে মনপুরাকে।

সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে এই দ্বীপের দারুন এক সাদৃশ্য রয়েছে। আপনি কুয়াকাটাতে যেমন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুইটাই দেখতে পাবেন, ঠিক তেমনি ভাবে মনপুরাতে এসেও আপনি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।

এখানে সকাল বেলার সূর্য যেমন হাঁসতে হাঁসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। আবার রাতে হাতছানি দেয় দ্বীপের এক ভিন্ন রুপ।

এক সময় এই  দ্বিপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে এখানে দেখতে পাওয়া যায় কেশওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির সারি সারি বাগান। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যাম্পাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। মনপুরা দ্বীপের আশেপাশে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এসব চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল।

মনপুরাতে আছে মনপুরা সী-বিচ, ল্যান্ডিং স্টেশন, হরিণের অভয়াশ্রম ও চৌধুরী প্রজেক্ট। মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে তৈরী করা। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু পর্যটকরা না, স্থানীয়রাও সময় কাটাতে আসে এখানে। রাতে এখানে বসলে মনে হবে, আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন। কারণ তখন আপনার চারদিকে থাকবে পানি আর আপনি বসে থাকবেন পানির সামান্য উপরে।

নদীর পানির স্রোত আর ঢেউয়ে মাঝে মাঝে স্টেশনটি কেঁপে উঠে, তখন মনে হবে এই বুঝি নদীতে ভেসে গেলাম। এটা এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। দ্বীপে রয়েছে একটি হরিণের অভয়াশ্রম। জোয়ারের সময় হরিণগুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হরিণের পাল যখন রাস্তা পার হয় তখন তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ভাগ্য ভাল থাকলে আপনিও দেখা পেয়ে যেতে পারেন হরিণের পালের। দ্বীপের চৌধুরী প্রজেক্টটি হচ্ছে একটি মাছের ঘের।

গতানুগতিক খাবার ছাড়াও তিনটি বিশেষ খাবার আছে মনপুরার। এগুলো হচ্ছে খাসি পাঙ্গাস, মহিষের দুধের কাঁচা দই ও শীতের হাঁস। তাই একবার হলেও এই দ্বীপ ভ্রমণ করে নিতে পারেন সবাই।

প্রজন্মনিউজ২৪/এন হাসান 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ