সিলেটে চেম্বার অব কমার্স নির্বাচন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৭:০৭:৪৮

সিলেটে চেম্বার অব কমার্স নির্বাচন

সাকিল আহমেদ, সিলেট প্রতিনিধি: শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে সিলেটে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র দ্বি-বার্ষিক (২০২২-২৩) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। আগামী ১১ ডিসেম্বর নগরীর ধোপাদীঘিরপাড়ে ইউনাইটেড কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দুটি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডও দাবি করছে, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যদিও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের বিরুদ্ধে একপেশে আচরণের অভিযোগ করছে, শুরু থেকেই। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের এই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী শিবিরেও রয়েছে বিভক্তি। সিলেটের প্রবীণ ব্যবসায়ীরাও উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন দুটি প্যানেলের প্রার্থীদের।

দেখা গেছে, সিলেট চেম্বার নির্বাচনকে ঘিরে সিলেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টায় লিপ্ত প্রার্থীরা। চেম্বার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনাও তুলে ধরা হচ্ছে দুটি প্যানেল থেকে।

সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের ব্যানারে দুটি প্যানেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ মঙ্গলবার তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বুধবার রাতে ইশতেহার ঘোষণা করে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। এর বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে।

সিলেট চেম্বার সূত্র জানায়, সিলেট চেম্বারের ৪টি সদস্য ক্যাটাগরির মধ্যে অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে ১২, অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে ৬, ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে ৩ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণি থেকে ১ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এ ২২টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী।

এরমধ্যে অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে ১৬ জন, অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে ১২ জন, ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে ৩ জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণি থেকে ১ জন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে অর্ডিনারি ভোটার সংখ্যা ১৩৪৮ জন, অ্যাসোসিয়েট ১২৪২ জন, ট্রেড গ্রুপ ৯ জন ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন ১ জন। ১১ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের পর পরিচালকদের মধ্য থেকে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদের নির্বাচন ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন-সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার জলিল। তার সাথে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মিছবাউর রহমান আলম ও মো. সিরাজুল ইসলাম শামীম। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট এম. শহীদুল ইসলাম এবং দুই সদস্য অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার কর ও মো. আতিকুর রহমান শাহিন।

অপরদিকে, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ এর দুটি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা। সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ অংশ নিচ্ছে কেবল অর্ডিনারী ও এসোসিয়েট গ্রুপ।

অন্যদিকে, সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ৪ ক্যাটাগরিতেই অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে বর্তমান সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণি থেকে আমিনুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পথে।

কেবল ঘোষণা বাকী। এখন অর্ডিনারী ও এসোসিয়েট শ্রেণীতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুটি প্যানেলের। এছাড়া অর্ডিনারি শ্রেণীতে আরো ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। দুটি প্যানেলেই নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয় রাখা হয়েছে।

সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল থেকে অর্ডিনারি শ্রেণীতে পরিচালক পদে অংশ নিচ্ছেন মোঃ আব্দুর রহমান জামিল, হুমায়ূন আহমদ, মোঃ নজরুল ইসলাম, আলীমুল এহছান চৌধুরী, খন্দকার ইসরার আহমদ রকি, মোঃ আব্দুস সামাদ, শান্ত দেব, মোঃ রুহুল আলম, জহিরুল কবির চৌধুরী, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, দেবাংশু দাস ও মোঃ আবুল হোসেন। অর্ডিনারি শ্রেণীতে ব্যালটে তাদের অবস্থান ১৫ থেকে ২৬।

এসোসিয়েট শ্রেণীর প্রার্থীরা হচ্ছে-জিয়াউল হক, মোঃ আবুল কালাম, মোঃ রাজ্জাক হোসেন, হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু, মোঃ রিমাদ হোসেন রুবেল ও মোঃ সাহাদত করিম চৌধুরী। ব্যালটে তাদের অবস্থান ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত।

সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের অর্ডিনারি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে, এজাজ আহমদ চৌধুরী, মো. মামুন কিবরিয়া সুমন, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী এনাম, মুশফিক জায়গীরদার, ফখর-উছ-সালেহীন নাহিয়ান, আব্দুল হাদী পাবেল, আনোয়ার রশিদ, মো. নাফিস জুবায়ের চৌধুরী, মো. খোবের হোসেইন, ফায়েক আহমদ শিপু. দেবাশীষ চক্রবর্তী। ব্যালটে তাদের অবস্থান ১ থেকে ১২ পর্যন্ত। 

এসোসিয়েট শ্রেণী থেকে যে ৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তারা হচ্ছেন তাহমিন আহমেদ, ওহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব, মুজিবুর রহমান মিন্টু, মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী মুশফিক, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী সবুজ, জয়দেব চক্রবর্তী জয়ন্ত। ব্যালটে এই প্রার্থীদের অবস্থান ১ থেকে ৬।

এছাড়া অর্ডিনারি শ্রেণীতে অন্য ৪ জন প্রার্থী হচ্ছেন, মো: মাছনুন আকিব বড় ভুইয়া, হিফজুর রহমান, মো: জসিম উদ্দিন ও একমাত্র নারী প্রার্থী সামিয়া বেগম চৌধুরী। অপরদিকে, দুটি প্যানেলেই আরো ৪ জন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন।

সিলেটের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যবসায়ী নেতারা আইনি জটিলতায় নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিলেও তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। তারা হচ্ছেন-সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের এহতেশামুল হক চৌধুরী, মাসুদ আহমদ চৌধুরী ও এমদাদ হোসেন এবং সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের চন্দন সাহা।

সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের তিন প্রার্থীর মনোনয়ন আটকে দেয়ার ঘটনাকে বর্তমান নির্বাচন বোর্ডের ‘অদূরদর্শিতা ও উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিযোগ করছে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ।
সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের খন্দকার সিপার আহমদ বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলেও দাবি করে বলেছেন, ভোটার তালিকায় ভুল মোবাইল নম্বর পরিবেশন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি থেকে নিয়ে ভোটার আইডি কার্ড গ্রহণ করার জন্য ডেকে নিয়ে অনেক ভোটারকে হয়রানি করা হয়েছে। শুরু থেকেই একপেশে আচরণ করে আসছে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। এমনকি ব্যালট পেপারে অর্ডিনারী শ্রেণীতে ক্রম বিন্যাসে সুক্ষ্ম ও পরিকল্পিত ব্যতয় ঘটানো হয়েছে। যেটা না করলেই পারতো নির্বাচন বোর্ড।

চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সকল কার্যক্রম মেনে নিয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বোর্ডের নিরপেক্ষতা আশা করছে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ। ভোটাররা ১১ ডিসেম্বর ব্যালটের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অপরদিকে, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের আচরণ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বলে দাবি করে পরিষদের পক্ষে প্রার্থী আবু তাহের মো: শোয়েব বলেন, সিলেট চেম্বার নির্বাচনে বিগত দিনের ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করছে বর্তমান বোর্ড।

চেম্বারের বর্তমান এই সভাপতি বলেন, ভোটারদের চেম্বারে ডেকে এনে তাদের হাতে ভোটার কার্ড তুলে দেয়া ছিল একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত। এটা হয়রানী নয়। আমরা এটাকে স্বাগত জানিয়েছি। তিনি নির্বাচন বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্বাচনের পরিবেশও সুষ্ঠু বলে তিনি জানান। তিনি ভোটারদের কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানান। 
অপরদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে সিলেটের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও প্রবীণ ব্যবসায়ী নেতারাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন । রাজনৈতিক নেতারা দুটি প্যানেলের সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। সুন্দর পরিবেশের সাথে উত্তেজনাও আছে ব্যবসায়ীদের নির্বাচনী এ উৎসবে।

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিধি মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে কারো স্বার্থে আঘাত পড়লে কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, ৪ জন প্রার্থী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, সিলেট চেম্বারের বিধি ভঙ্গ করে দীর্ঘদিন থেকে টানা নির্বাচন করে নেতৃত্বে ছিলেন। এই বিধিভঙ্গের বিষয়টি বর্তমান বোর্ডের নজরে আসার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত এর ভিত্তিতে-এই ৪ প্রার্থী অযোগ্য হন।

তিনি আরো বলেন, অতীতে যে বা যারা নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে ভুল করেছেন, তাই বলে আমি আবারো ভুল করবো তা হতে পারে না। এর জন্য নানাজন নানা কথা বলছেন। আমি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে কারো কথায় কর্ণপাত করছি না। বিধি অনুসরণপূর্বক যেখানে যা করা প্রয়োজন তা করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/এন হাসান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ