বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে উচ্চমূল্যের ড্রাগন

প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৬:০৮:১৩

বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে উচ্চমূল্যের ড্রাগন

তৌফিক এলাহী, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে উচ্চমূল্যের ড্রাগন ফল। ছোটবড় মিলে প্রায় ৭০টি বাগান রয়েছে জেলায়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক বাগানের সংখ্যা ১৫টি। এখান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন চাষিরা।

কৃষিবিভাগ বলছে, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর মতো বগুড়ায় এখনও ড্রাগন উৎপাদন হয় না। তবে ড্রাগন চাষের জমি প্রতি বছর বাড়ছে। এদিকে চাষিরা বলছেন, প্রথম দিকে ড্রাগন চাষ ব্যয়বহুল হলেও নির্দিষ্ট সময় পর এর থেকে বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সমন্বিত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেয় বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টার। এ সময় কৃষকদের মাঝে বিদেশি এই ফলের প্রদশর্নীর পর মাত্র দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ হলেও বর্তমানে জেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে।

ছোট বড় মিলে প্রায় ৭০টি বাগানে ড্রাগনের খুঁটি রয়েছে। ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। জমিতে লাগানোর পর এর পরিচর্যা খুব বেশি করতে হয় না এবং পোকামাকড়ও অনেক কম। এতে পানিও কম লাগে। বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, কাহালু উপজেলার চাষীরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকছে বেশি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকার ড্রাগন চাষী বেসরকারি একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাছিব জানান, ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থাতেই তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের তাড়না থেকেই তার এই স্বপ্ন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে গবেষণার একপর্যায়ে উচ্চমূল্যের ফল ড্রাগন চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন।

এরপর ড্রাগন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তিন বছর আগে এক বিঘা ৬ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের ২০০ খুঁটি রোপণ করেন। রোপণের এক বছর পর থেকে ফলন পেতে শুরু করেন। বর্তমানে ড্রাগন চাষে বিনিয়োগ টাকা উঠানোর পর লাভের মুখ দেখতে পেয়ে নিজেকে একজন সফল ড্রাগন চাষী হিসেবে দাবি করছেন মাহমুদুল হাছিব।

এই চাষি বলেন, এক বিঘা জমিতে দেড়শ’ খুঁটি লাগানো এবং ফল সংগ্রহের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এক খুঁটিতে চারটি করে গাছ থাকে। আর এই চারটি গাছের মধ্যে তিনটি মেয়ে এবং একটি ছেলে গাছ থাকে। গাছ লাগানোর এক বছর পর থেকেই ফল দেয়া শুরু করে। তবে গাছের বয়স যত বাড়বে এর আকার বড় হবে। এতে ফলনও প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকবে।

বছরে আটবার ফল সংগ্রহ করা যায়। সাড়ে চার বছর বয়সী একটি খুঁটি থেকে বছরে এক থেকে দেড় মণের মতো ফল সংগ্রহ করা যাবে। এই গাছগুলো সাধারণত ৫০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয় বলে জেনেছেন। আগামী বছর তিনি এক বিঘা জমি থেকেই দেড়শ’ মণেরও বেশি ফল সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

বাজারে এই ফলের চাহিদা এবং দাম দুটোই বেশি। দেড়শ মণ ফল যদি গড়ে আড়াইশ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করা যায় তাহলে এক বিঘা থেকেই তিনি বিক্রি করতে পারবেন ১৫ লাখ টাকার ফল। সামনে তার রঙিন দিন আসছে। তিনি ড্রাগনের জমি আরও বৃদ্ধি করবেন বলে জানান।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর এলাকার ড্রাগন চাষি হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার মাসনবী জানান, তিন বছর আগে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। এরপর ড্রাগন চাষের জমি পর্যায়ক্রমে আরও আড়াই বিঘা বৃদ্ধি করেন। এক বিঘা জমি থেকে গত তিন বছরে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। ড্রাগনের জন্য সাড়ে তিন বিঘা জমি তৈরি করতে তার যে টাকা খরচ হয়েছিল তিনি চলতি বছর সেই টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। আগামী বছর যা উৎপাদন হবে সেটি হবে পুরোটাই লাভ।

বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম জানান, বগুড়ার বাজারে এখন যে ড্রাগন ফল দেখা যাচ্ছে এগুলো বগুড়ার কৃষকরাই উৎপাদন করছেন। তবে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর মতো বগুড়ায় এখনও ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে না। এ কারণে বাইরের জেলাগুলোতেও বগুড়ায় উৎপাদিত ড্রাগন যাচ্ছে না।

দানাদার ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ড্রাগন প্রথম যখন বাজারে নামতে শুরু করে তখন এর দাম দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে এর দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

আব্দুর রহিম বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গাছের চারা বিক্রি করা হয়। দানাদার ফসলের চেয়ে উচ্চমূল্যের এই ফসলে দাম বেশি। এ কারণে ড্রাগন চাষে কেউ আগ্রহী হলে হর্টিকালচার সেন্টার তাকে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহযোগিতা করবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/এন হাসান

এ সম্পর্কিত খবর

দেশটা এখন আওয়ামী মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

ভোট দিতে গিয়ে শুনলেন তিনি মারা গেছেন, নিরাশ হয়েই ফিরলেন বৃদ্ধা

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ

ঈদের আমেজ কাটেনি বাজারে, ফাঁকা ঢাকাতেও দাপট গরু-খাসির

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা

গাজা: বিমান হামলায় বেঁচে যাওয়া বালকের প্রাণ গেল সাহায্য নিতে গিয়ে

ঢাকায় আসতে না পেরে দুবাই-শারজাহর ১০ ফ্লাইট বাতিল

পর্তুগালে বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী

মুস্তাফিজের আইপিএল খেলা নিয়ে দুই বোর্ড পরিচালকের ভিন্ন মত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ