১০০ দূষিত শহরের মধ্যে বাংলাদেশের ৪টি

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৩:২২:০৯ || পরিবর্তিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৩:২২:০৯

১০০ দূষিত শহরের মধ্যে বাংলাদেশের ৪টি

তাফহিমুল ইসলাম,ঢাকা

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি প্রতি বছরই ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। গত সপ্তাহে দিল্লির দুই কোটি মানুষের ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। ফলে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের দূষিততম ১০০ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকাসহ রয়েছে বাংলাদেশের চারটি শহর। দূষিত নগরীর সংখ্যার দিক থেকে তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে ভারত; চরম দূষণের শিকার দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ৪৬টি শহর।

বাতাসের মান নির্ধারণী আইকিউএয়ারের তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায়, বিশ্বের দূষিততম শহর চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের হোতান শহর। আর সবচেয়ে দূষিত ১০টি শহরের মধ্যে বাকি ৯টিই ভারতের, যার শীর্ষে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ। সর্বোচ্চ দূষণে দশম অবস্থানে দিল্লি।

সবচেয়ে দূষিত ১৫টি শহরের মধ্যে নেই বাংলাদেশের কোনো শহর। কিন্তু এর পরেরর অবস্থানেই বাংলাদেশের দূষিততম শহর যার অবস্থান ১৬ তম। অবাক করার বিষয় হচ্ছে এই তালিকায় ঢাকার অবস্থান ২৩ তম। ঢাকা থেকে প্রায় ৫১ কি.মি. দূরের একটি শহর মানিকগঞ্জের অবস্থান  তালিকার ১৬ তম অবস্থানে। এরপরের ধারাবাহিকভাবে ২৩তম অবস্থানে রাজধানী ঢাকা, ৬০তম অবস্থানে আজিমপুর ও ৬১তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীপুরে।

কীভাবে বাতাসের দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়

বাতাসে পিএম২.৫, পিএম ১০, ওজোন গ্যাস, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

বাতাসে পিএম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা ক্ষুদ্র ধাতব কণার পরিমাণ বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। পিএমের আকৃতি নানারকম হতে পারে, সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো পিএম২.৫ আর পিএম১০। পিএম২.৫ কণার ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের কম এবং পিএম১০ কণার ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটারের কম; যেখানে মানুষের একেকটি চুলের ব্যাস হয়ে থাকে ৫০ থেকে ৭০ মাইক্রোমিটার।

বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা ১২-এর কম হলে তা বিশুদ্ধ বাতাস বলে ধরে নেয়া হয়। পিএম২.৫-এর পরিমাণ ৫৫ থেকে ১৫০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর ও ২৫০ বা এর বেশি হলে হয় বিপজ্জনক।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর কোনগুলো

২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০০ শহর মাত্র ছয়টি দেশের। এর মধ্যে ৯৪টি শহরই ভারত, চীন ও পাকিস্তানের। আইকিউএয়ারের সূচকে দূষিত নগরীর সংখ্যার দিক থেকে ৪৬টি শহর নিয়ে শীর্ষে ভারত, চীনের ৪২টি, পাকিস্তানের ছয়টি, বাংলাদেশের চারটি, ইন্দোনেশিয়ার একটি ও থাইল্যান্ডের একটি। সব শহরের বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা ৫০-এর বেশি।

দূষণে শীর্ষ হোতানে বাতাসের গুণগত মান সবচেয়ে খারাপ। গত বছর শহরটির বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১১০ দশমিক ২।

মানবদেহে বায়ুদূষণের প্রভাব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে বায়ুদূষণের ফলে মৃত্যু হয় প্রায় ৭০ লাখ মানুষের। ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত মাত্রা ছাড়িয়ে দূষণ হয়, এমন অঞ্চলে বাস বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের। শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য জটিলতার সঙ্গে বায়ুদূষণের যোগসূত্র পাওয়া যায়।

ভারতে দূষণের মাত্রা প্রাণঘাতী

বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধু ভারতেই। প্রতিবছরই নির্দিষ্ট একটি সময়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আকাশ ছেয়ে থাকে ঘন ধোঁয়াশায়। গত সপ্তাহে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দুই কোটি বাসিন্দার শহরটিতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে বন্ধ রাখা হয় সব স্কুল, যেন তাদের বাড়ির বাইরে বের হতে না হয়।

নয়াদিল্লির বাতাসে ক্ষুদ্র ধাতব কণা, বা পিএম২.৫ পার্টিকেলসের মাত্রা ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি। এই দূষিত কণা মানুষের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিষাক্ত এ ধোঁয়াশা শীতকালে উদ্বেগজনক রূপ নেয়, কারণ কৃষকদের আগাছা পোড়ানোর সময় এটি।

ভারতের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের ১৫টিই দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। শরৎ ও শীতকালজুড়ে এসব অঞ্চলে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশটিতে বাতাসে পিএম২.৫ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ময়লা পোড়ানোসহ নানা কারণ।


প্রজন্মনিউজ২৪/টিএফ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন