উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্নে সড়ক পরিবহনের প্রস্তুতি কতটুকু?

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০৬:০৪:৪৫

উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্নে সড়ক পরিবহনের প্রস্তুতি কতটুকু?

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পথে। রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু এক্ষেত্রে সড়ক পরিবহনের প্রস্তুতি কতটুকু? এমন প্রশ্নে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে বিশিষ্টজনরা বলছেন, আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। সড়কে ধীরগতির গাড়ি ব্যবস্থাপনা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হওয়ার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে দ্রুতগতির গাড়ি ব্যবস্থাপনা, বিপুলসংখ্যক গাড়ি, দুর্ঘটনা রোধ—এসব করার ক্ষেত্রে নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। কোনো রকমে ঠ্যাকনা দিয়ে চলছে এ খাতের উন্নয়ন কাজ।

গত জুনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশে সওজের সড়ক রয়েছে ২২.৫ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে চার লেনের সড়ক ৫০০ কিলোমিটার এবং আট ও ছয় লেনের সড়ক মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। এছাড়া তিন হাজার ৬৪৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ এবং ৮৩৯ কিলোমিটার সড়কের ভয়াবহ দশা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯০টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলই ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ২১৪টি। ঢাকায় রয়েছে ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৩টি যানবাহন। এ নগরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা আট লাখ ৬২ হাজার ৭৫৪টি। অবশ্য এই সংখ্যার বড় একটি অংশের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। আর লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা ২৪ লাখেরও বেশি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দিনে দিনে বাড়ছে। ১৯৭১ সালে দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক ছিল। এখন ২২ হাজার কিলোমিটার। আগে ছিল দুই লেন সড়ক, এখন চার বা আট লেন। আগে ছিল ন্যাশনাল হাইওয়ে এখন হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে, এছাড়া হচ্ছে এমআরটি। সুতরাং সময়ের চাহিদার সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে। জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, অনেক কিছুতেই আমাদের স্বল্পতা রয়েছে। জনসংখ্যার অনুপাত বা গাড়ি যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে তো সড়ক বাড়ছে বলে মনে হয় না। আমরা পর্যায়ক্রমে সবকিছুই করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য যা যা দরকার, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় পর্যায়ক্রমে সবই করছি।

বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, যে পরিমাণ সড়ক ও পরিবহন আছে, তার তুলনায় চাহিদা বেশি। এটা ঠিক। তবে প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী সড়ক ও পরিবহন দুটোই বাড়ছে। দেশের উন্নয়ন করতে গেলে সড়ক ও পরিবহন লাগবেই। তবে দেখতে হবে, নিয়ম মেনে চলছে কি না? সবাই যদি আইন বা নিয়ম মেনে চলে, তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটে না। আমরা সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পরিমাণগতভাবে আমাদের সড়ক বেশিই আছে। তবে গুণগত মানে আমরা অনেক পিছিয়ে। সড়কগুলো অপরিকল্পিত হওয়ায় প্রোডাক্টিভিটি অনেক নিচের দিকে। যে কারণে সংখ্যা যতই থাকুক, গুণগত মান না থাকায় তার প্রোডাক্টিভিটি নেই। সেখানে বড় কোনো উন্নয়ন করতে গেলেও তার প্রোডাক্টিভিটি পাওয়া যায় না। নিচের সড়কই যদি অপরিকল্পিত হয় পরবর্তী উপকরণগুলো বসাতে গেলে একই দুর্বলতার শিকার হতে হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে অর্থনীতির মাত্রা, তাতে যানবাহনের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ার কথা। কিন্তু মোটরসাইকেল বাদ দিলে আশপাশের দেশের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য আমাদের ৪০-৫০টি যান্ত্রিক গাড়ি আছে, অথচ থাইল্যান্ডেই রয়েছে ২৫০টি। যে মাত্রায় আমার মোটরাইজেশন হবে, তখন যে গুণগত মান দরকার, সেটাও ঠিক রাখতে হবে। সংখ্যা বাড়িয়ে উল্লাস করে লাভ নেই।

‘মোটরযান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে চলাচলের ব্যবস্থাপনাও ঠিক করতে হবে। এত কম গাড়ি আর ধীরগতির গাড়ি ব্যবস্থাপনায় যদি এত রক্ত ঝরে তাহলে গতি বাড়লে কী হবে? গতি কম থাকার পরও দুর্ঘটনা ঘটে’—যোগ করেন অধ্যাপক শামসুল হক।

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, দ্রুতগতির উন্নয়ন আমাদের হজম হবে কি না আমার সন্দেহ। যে সিস্টেম রয়েছে, তাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই। গতি কমিয়ে, স্পিড ব্রেকার দিয়ে আমরা দুর্ঘটনা কমিয়ে রেখেছি। কিন্তু মানুষকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে দিলে সড়কে যে শৃঙ্খলা দরকার, চালকের যে দক্ষতা দরকার, এতে আমাদের অনেক কাজ করা বাকি। ভবিষ্যতে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হতে হলে দ্রুতগতির গাড়ি ব্যবস্থাপনা, বিপুলসংখ্যক গাড়ি, দুর্ঘটনা রোধ—এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে, কিন্তু বাস্তবে সেক্ষেত্রে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। কোনো রকমে ঠ্যাকনা দিয়ে কাজ চলছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/আল-নোমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ