কুমিল্লায় নেওয়া হচ্ছে  আটক ইকবালকে

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০১:০৫:১০

কুমিল্লায় নেওয়া হচ্ছে  আটক ইকবালকে

কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে আটক মো. ইকবাল হোসেনকে কুমিল্লায় নেওয়া হচ্ছে।

গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে আটক করা হয় ইকবালকে। আজ শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

কক্সবাজার পুলিশ বলছে, কুমিল্লায় ভিডিও ফুটেজে দেখা ওই ব্যক্তিই আটক ব্যক্তি। তবে কুমিল্লা পুলিশ সেটি নিশ্চিত করবে।

ঘটনাস্থলের কাছের দুটি বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে 'প্রধান সন্দেহভাজনকে' শনাক্ত করার কথা জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ব্যক্তির নাম জানায়নি পুলিশ। অবশ্য পুলিশ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এরই মধ্যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তাঁর নাম এসেছে। ইকবাল হোসেন (৩২) নামের ওই যুবক নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর (সুজানগর) এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নূর আহম্মদ ওরফে আলমের ছেলে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  তিনি বলেন, রাতে সৈকত এলাকা থেকে ইকবাল হোসেনকে আটকের পর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রাখা হয়। ভোরে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল কক্সবাজার পৌঁছালে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ইকবালকে নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হয়েছে পুলিশ। 

পুলিশের ধারণা, এই তরুণ কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননাকারী সেই ইকবাল। তবে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তার পরিচয় যাচাই-বাছাই করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।

গত ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পারে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া যায়। পরে একদল লোক কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর চালায়। ওই ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপ-মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেখানে মারা যায় পাঁচজন। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চৌমুহনীতে মারা যায় দুজন।

গত বুধবার রাতে কুমিল্লার ঘটনার 'প্রধান সন্দেহভাজনকে'  চিহ্নিত করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। তিনি বলেছেন, পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এই ঘটনার অগ্রগতি হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার আগের ১২ অক্টোবর রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে লোকজনের উপস্থিতি ছিল। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারীভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তির ওপর প্রথম কোরআন শরিফ দেখতে পান। রাত আড়াইটা থেকে সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে কোনো একসময় সেখানে কোরআন রেখে যাওয়া হয়েছে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি নিয়ে গেছেন ওই ব্যক্তি।

পুলিশ সূত্রের দাবি, এ ঘটনার দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। যার একটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ পূজামণ্ডপের কাছের শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরীর (রহ.) মাজার মসজিদ থেকে কোরআন শরিফটি নিয়ে মণ্ডপের দিকে রওনা হন। ফুটেজে তখন সময় দেখাচ্ছিল রাত ২টা ১০ মিনিট। মাজার থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মিনিট। এই ফুটেজটি মাজারের সামনের পুকুরের বিপরীত পাশের একটি বাড়ির ক্যামেরার। পুকুরটি লিজ নিয়ে ওই বাড়ির মালিক মাছ চাষ করেন। যাতে মাছ চুরি না হয়, সে জন্য তিনি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন।

দারোগাবাড়ি মাজার নামেই নগরবাসীর কাছে মাজারটি পরিচিত। মাজারের মসজিদের বারান্দায় তিলাওয়াতের জন্য রাখা থাকে বেশ কয়েকটি কোরআন শরিফ।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মণ্ডপে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর কোরআন রেখে অভিযুক্ত ব্যক্তি ফিরে আসছেন। তাঁর কাঁধে গদা। ফুটেজে তখন সময় দেখাচ্ছিল রাত সোয়া ৩টার মতো। এই সিসি ক্যামেরাটি মণ্ডপের কাছের আরেকটি বাড়ির।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্রের দাবি, দারোগাবাড়ি মাজার মসজিদে নিয়মিত যাওয়া ইকবালসহ তিনজন ঘটনায় সরাসরি জড়িত। অন্য দুজন হলেন হুমায়ুন কবির (২৫) ও ইকরাম হোসেন (৩০)। তাঁরা নানুয়ার দীঘির পাড়ের আশপাশের বাসিন্দা। এই দুজনকে আটক করা হয়েছে। ইকবালকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের পেছনে আরো কেউ আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর আগে ফয়েজ আহমেদ নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ফেসবুকে ঘটনাটি লাইভ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করছে। 
প্রজন্মনিউজ২৪/কে.জামান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ