সাকিব আল হাসানের অনন্য কীর্তি

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:২৪:১৩

সাকিব আল হাসানের অনন্য কীর্তি

রক্তাক্ত করেছিল স্কটল্যান্ড। চোখ রাঙাচ্ছিল ওমানও। শক্ত হাতে হালটা ধরে উত্তাল সমুদ্রে দুলতে থাকা বাংলাদেশের তরি কিনারায় টেনে নিয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। পাপুয়া নিউ গিনিও চোখ রাঙিয়েছিল। সাকিবের আরেকটি অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারেনি সেই কাঁটাতারও। টানা দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তাঁর। শুধু দুই ম্যাচ নয়, আইসিসির কোনো ইভেন্টে খেলা বাংলাদেশ সর্বশেষ ছয় ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট জিতেছেন সাকিব, যে কীর্তি নেই আর কারো।

কাঠখোট্টা পরিসংখ্যান মধুময় হয়ে যাচ্ছে সাকিব মহিমায়। সুপার টুয়েলভ নিশ্চিতে গুমোট হাওয়া কেটে যাওয়ায় খোলা মনে খেলার প্রত্যয় সাকিবের, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে দল যে দিন ভালো খেলে, তারাই জিতবে। চাপটি কেটে গেছে আমাদের, এখন খোলা মনে খেলতে পারব। ফর্মে ফেরার জন্য ফরম্যাটটি আদর্শ নয়। সৌভাগ্যক্রমে ব্যাটিংয়ে ওপরের দিকে বেশি সুযোগ পাচ্ছি।’

সাকিবের টানা ছয় ম্যাচ সেরার অভিযানের শুরুটা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। মাঝখানে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জেতা তিন ম্যাচেরই সেরা তিনি। এরপর এবারের বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ জয়ের নায়ক। অথচ মাঝখানে ঝড়ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে কত। জুয়ার প্রস্তাব গোপন রেখে নিষিদ্ধ হয়েছেন এক বছর। তাতে ব্যাটে-বলে জমাট বাঁধা মরচে ছাড়াতেই কয়টা দিন। এরপর আবার বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে আলো বিলিয়ে যাওয়া ‘শুকতারা’ সাকিব। তাঁকে ঘিরে সেমিফাইনাল স্বপ্ন উঁকি দিয়ে উঠছে আবারও। ‘আসল বিশ্বকাপ’ অর্থাৎ সুপার টুয়েলভের লড়াই শুরুর আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক ২০১৭ থেকে সাকিবের ছয়ে-ছয়ের কীর্তি।

২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৮ উইকেটে ২৬৫। জবাবে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জয়ের আশা ছেড়ে দেন অনেকে। মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে সাকিবের ২২৪ রানের জুটি ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। ১৬ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ জেতে ৫ উইকেটে। ১১৪ রানের ইনিংসে ম্যাচসেরা সাকিব।

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিন জয়ের প্রথমটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওভালে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের ৩৩০ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা থামে ৮ উইকেটে ৩০৯ রানে। ৭৫ রানের পাশাপাশি ১০ ওভারে ৫০ রানে ১ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সাকিবের। সেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪ রানে অপরাজিত থাকার পর ৫৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে সেরা আবারও। আর তৃতীয়বার পুরস্কারটি জেতেন আফগানদের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট ও ব্যাটে ৫১ করে। এবারের বিশ্বকাপে ওমানের সঙ্গে বাঁচা-মরার ম্যাচেও ভোগেননি স্নায়ুর চাপে। দলকে জেতান ৪২ রানের পর ৩ উইকেট নিয়ে। গতকাল উজ্জ্বল আরো বেশি। ৩৭ বলে ৪৬ রানের পর মায়াবী স্পিনে শিকার ৪ উইকেট। তাতে কীর্তি হয়েছে আরো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যৌথ সর্বোচ্চ ৩৯ উইকেট এখন সাকিবের। শহীদ আফ্রিদি ৩৯ উইকেট নিয়েছিলেন ৩৪ ম্যাচে। সাকিব তাঁকে ছুঁয়েছেন ২৮ ম্যাচে। আফ্রিদির রেকর্ড স্পর্শ করেছেন ২০৯টি কম বল করে। ৯ রানে ৪ উইকেট বিশ্বকাপে সেরা বোলিংও সাকিবের। আগের সেরা ছিল গত আসরে ওমানের বিপক্ষে ৩৪ রানে ৪ উইকেট।

বড় মঞ্চে সাকিবকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ সব সময় চড়ে চড়চড়িয়ে। সেই চাপে তাঁর কাঁধ ঝুলে পড়েনি কখনো। বাংলাদেশকে ভরসা দিয়ে যাচ্ছে তাঁর চওড়া কাঁধ। টানা খেলার ক্লান্তি কাটিয়ে বিশ্বকাপের বাকি পথটুকুতেও নিজের সেরাটা খেলতে মুখিয়ে সাকিব, ‘কিছুটা ক্লান্ত আমি। গত পাঁচ-ছয় মাসে টানা খেলে চলেছি। আমার জন্য মৌসুমটি বেশ লম্বা। তবে আশা করছি টুর্নামেন্টটি ভালোভাবে শেষ করতে পারব।’
প্রজন্মনিউজ২৪/কে.জামান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ